Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Uttarakhand Disaster

বিপর্যয়ের পশ্চাতে

বস্তুত অক্টোবরের শেষার্ধে এমন মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং বন্যার ঘটনা কিছু অপ্রত্যাশিত।

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২১ ০৯:০৯
Share: Save:

বর্ষা বিদায় হইয়া শীত যখন সমাগতপ্রায়, ঠিক সেই সময়ই তুমুল বৃষ্টি, ধসে বিপর্যস্ত হইল উত্তরবঙ্গ, উত্তরাখণ্ড। প্রাণ গেল বহু মানুষের। এখনও অনেকে নিখোঁজ, বহু স্থান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বস্তুত, দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়িয়া একযোগে এমন ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের নিদর্শন বিরল। অতিমারির রেখচিত্র কিছু নিম্নগামী হইতেই পর্যটকরা ভিড় জমাইয়াছিলেন পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরাখণ্ডের জনপ্রিয় পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। প্রবল বৃষ্টি, ধসে অনেকেই ঘরে সময়মতো ফিরিতে পারেন নাই। কেহ পথে আটকাইয়া থাকিয়াছেন দীর্ঘ সময়। জল নাই, খাবার নাই, খারাপ আবহাওয়ায় উদ্ধারকার্যে বিলম্ব প্রভৃতি নানাবিধ বাধা অতিক্রম করিয়া তাঁহারা নিরাপদ স্থানে পৌঁছাইয়াছেন। এই দুঃসহ স্মৃতি ভুলিবার নহে।

বস্তুত অক্টোবরের শেষার্ধে এমন মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং বন্যার ঘটনা কিছু অপ্রত্যাশিত। কিন্তু এই ঘটনাগুলিই প্রমাণ করিয়া দেয়, জলবায়ু পরিবর্তিত হইতেছে। এবং পরিবর্তনের এই হার প্রত্যাশা অপেক্ষা ঢের বেশি। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পশ্চাতে জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী— এই কথাগুলি বলিলে মানুষকে আড়াল করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের হার এত দ্রুত বৃদ্ধি পাইত না, যদি না মানুষ নিজ কর্মকাণ্ডের দ্বারা তাহাকে ক্রমাগত উস্কাইয়া যাইত। ২০১৩ সালের কেদারনাথের সেই ভয়াবহ বন্যা জানান দিয়াছিল, পাহাড় আর নিরাপদ নহে। কিন্তু কাহারও টনক নড়ে নাই। বরং নদীকে কিছু দূর অন্তর বাঁধিয়া, পাহাড়ের স্বাভাবিক বনভূমি উজাড় করিয়া উন্নয়নযজ্ঞ অব্যাহত থাকিয়াছে। এবং উত্তরাখণ্ডও নিয়মিত বিপর্যয়ের কবলে পড়িয়াছে। সাম্প্রতিক বিপর্যয়কে সেই কারণে বিচ্ছিন্ন ভাবিলে ভুল হইবে। পাহাড়ের পরিবেশ লইয়া সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং পরিকল্পনার অভাবের মূল্য দিতে হইতেছে স্থানীয় বাসিন্দা এবং মরসুমি পর্যটকদের। উত্তরবঙ্গের অবস্থাও কিছুমাত্র ভিন্ন নহে। তিস্তায় একের পর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হইতেছে। প্রবল বর্ষণে সেই জল যখন ছাড়া হইয়াছে, তখন তাহা ভয়ঙ্কর বেগে নীচে নামিয়া আসিয়াছে। মুছিয়া দিয়াছে সড়ক, ক্ষতিগ্রস্ত করিয়াছে সেতু।

পাবর্ত্য অঞ্চল উন্নয়ন-বঞ্চিত থাকিবে, এমন কথা কেহ বলে নাই। কিন্তু প্রকৃতিকে ভুলিয়া বেহিসাবি উন্নয়নের পরিকল্পনা করিলে ফল ভাল হয় না। পাহাড়ি অঞ্চলে ধস অস্বাভাবিক ঘটনা নহে। কিন্তু ধসপ্রবণ স্থানে পাহাড় কাটিয়া রেললাইন পাতিবার কাজ চালাইলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হইতে বাধ্য। আন্তর্জাতিক রিপোর্ট বলিতেছে, অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের কারণে পাহাড়ি অঞ্চলে অতিবৃষ্টির ঘটনা বৃদ্ধি পাইবে। প্রয়োজন, পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ। কিন্তু গাছ কাটিয়া উন্নয়নে যাঁহারা ব্যস্ত, তাঁহারা নূতন গাছ লাগাইবেন কী ভাবে? অরণ্য উধাও হইবার কারণে পাহাড়ের মাটি আলগা হইয়াছে। ধসের সংখ্যা বৃদ্ধির ইহাও অন্যতম কারণ। অন্য দিকে, পর্যটন রাজ্যের আয়ের অন্যতম উৎস। তাই পর্যটনের স্বার্থে এমন সব স্থানে পর্যটন কেন্দ্র গড়িয়া উঠিতেছে, যেখানে ন্যূনতম পরিকাঠামো নাই। অথচ, নির্জনে সময় কাটাইবার তাগিদে সেইখানেই ভিড় জমাইতেছেন পর্যটকরা। নষ্ট হইতেছে পরিবেশ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটিলে উদ্ধার করাও অসম্ভব হইয়া পড়িতেছে। বিপর্যয়ে মৃত্যু কখনও কাম্য নহে। কিন্তু মৃত্যু ঠেকাইবার দায়িত্বটি যাঁহাদের হাতে, তাঁহারাই চোখ বুজাইয়া রহিয়াছেন। ইহা মর্মান্তিক।

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarakhand Disaster Natural Disaster landslide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE