Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Royal Bengal Tiger

হাঁসজারু

পরিবেশ ও বন মন্ত্রক বলছে অন্য কথা, দু’টি প্রকল্প মিশে যাওয়ায় কাজের সুবিধা হবে, সমগুরুত্বে বিবেচনা করা যাবে বাঘ ও হাতি দুই বন্যপ্রাণেরই রক্ষণ ও সংরক্ষণের বিষয়টি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ০৮:২২
Share: Save:

বকচ্ছপ আর হাঁসজারুরা কেবল সুকুমার রায়ের কবিতায় ঘোরাফেরা করবে কেন! কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকও এখন জোর গলায় দাবি করতে পারে— ‘ব্যাকরণ মানি না’। মন্ত্রকের নির্দেশে সম্প্রতি ‘প্রোজেক্ট টাইগার’ মিলেমিশে গেল ‘প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট’-এর সঙ্গে। হাতিমি-র তিমি সরিয়ে বাঘ জুড়ল, এ বার সরকারি ফরমানে বাঘে-হাতিতে এক ঘাটে জল খেতে ‘বাধ্য’। রসিকতা সরিয়ে রেখে তথ্যে নজর দিলে দেখা যাবে এ ঘোষণা হয়েছিল গত এপ্রিলেই, যে মাসটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মাইসুরুতে প্রোজেক্ট টাইগার-এর পঞ্চাশ পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই ব্যাঘ্র প্রকল্প মিশে গেল হস্তী প্রকল্পে, প্রোজেক্ট টাইগার-এর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব মুছে গেল— এ খুব শ্লাঘার বিষয় কি?

পরিবেশ ও বন মন্ত্রক বলছে অন্য কথা, দু’টি প্রকল্প মিশে যাওয়ায় কাজের সুবিধা হবে, সমগুরুত্বে বিবেচনা করা যাবে বাঘ ও হাতি দুই বন্যপ্রাণেরই রক্ষণ ও সংরক্ষণের বিষয়টি। তা-ই কি? ১৯৭৩-এ শুরু হওয়া প্রোজেক্ট টাইগার ভারতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে সফলতম প্রকল্পগুলির একটি, মাত্র ন’টি টাইগার রিজ়ার্ভ নিয়ে শুরু হওয়া প্রকল্প এই মুহূর্তে কাজ করছিল পঞ্চাশেরও বেশি টাইগার রিজ়ার্ভে। পৃথিবীর সব বন্য বাঘের ৭০ শতাংশের ঠিকানা আজ ভারত, শুধু এই তথ্যটুকু দিয়েই প্রোজেক্ট টাইগার-এর গুরুত্ব ও সাফল্য প্রমাণ করা যায়। যে প্রকল্পটি নিজস্ব ধারে-ভারেই ছিল প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট, প্রোজেক্ট লায়ন বা প্রোজেক্ট চিতা-র পথপ্রদর্শক, পাঁচ দশক পূর্তির বছরে তাকে হঠাৎ অন্য প্রকল্পে মিশিয়ে দিলে কাজের ব্যাঘাত ঘটার সমূহ সম্ভাবনা। বাঘ হোক বা হাতি, দেশ জুড়ে প্রকল্পের কাজগুলি করেন অগণিত বনকর্মী। সরকার নীতি বা অর্থ বরাদ্দ নির্ধারণ করেই খালাস, পদমর্যাদা ও দায়িত্ব অনুযায়ী আসল কাজগুলি হয় বন আধিকারিক থেকে শুরু করে সাধারণ বনকর্মীদের দায়বদ্ধতা ও দক্ষতায়। এমতাবস্থায় আগে এঁদের সঙ্গে কথা না বলে, আলোচনায় না নিয়ে মন্ত্রকের তরফে ব্যাঘ্র ও হাতি প্রকল্প মিলিয়ে দেওয়াটা কাজের কথা নয়।

বন মন্ত্রকের বোঝা দরকার, প্রোজেক্ট টাইগার ও প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট চরিত্রগত ও প্রয়োজনগত ভাবে আলাদা। দু’টিকে মিশিয়ে দেওয়ায় এক দিকে যেমন তুঙ্গে থাকা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ধার কমে যাবে, অন্য দিকে তুলনায় কম সফল হস্তী প্রকল্পটি পড়বে নানা জটিলতায়— ‘প্রোজেক্ট টাইগার অ্যান্ড এলিফ্যান্ট ডিভিশন’-এর বরাদ্দ অর্থের ক’আনা বাঘে খাবে আর কতটুকু হাতিতে, তা নিয়ে গোল বাধলে মুশকিল। দেশের বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ও বন আধিকারিকরাও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও যেখানে দেশের অধিকাংশ টাইগার রিজ়ার্ভ তাদের বরাদ্দ অর্থ হাতে পায়নি, সেখানে আনকোরা নতুন একটি বিভাগ শুরুতেই বিস্তর সমস্যায় পড়তে পারে। আসলে সমস্যা বনকর্মীদের নিয়ে নয়, কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রককে নিয়ে, তাদের খামখেয়াল আর লাল ফিতের ফাঁস নিয়ে। এর আগে ২০২০ সালেও এই মন্ত্রক আঞ্চলিক স্তরে নানা বন বিভাগ, এজেন্সি ও সংস্থাকে মিলিয়ে ‘ইন্টিগ্রেটেড রিজিয়নাল অফিস’ (আইআরও) গড়ার কথা ভেবেছিল, পরে সেই নির্দেশ ফিরিয়ে নেয়। এ বার বাঘ আর হাতিকে একত্রে জোড়ার বন্দোবস্তে প্রকল্পের হাঁসজারু বা বকচ্ছপ দশা হলে তা শুধু হাসির নয়, লজ্জারও ব্যাপার হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Royal Bengal Tiger Tiger reserve
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy