Advertisement
E-Paper

বিদায়ক্ষণ

আসল কথা, ভারতের ভাগ্যবিধাতা যিনি, তিনি যদি জনগণমন-অধিনায়ক হন, তবে জনগণের মনেই প্রশ্নগুলি ওঠা উচিত।

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ০৪:৪৫
Share
Save

কতকগুলি কথা পরিষ্কার বলা দরকার। ভারত বিষয়ে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি সংবিধানে জোড়া হয়েছে ১৯৪৮ সালের অনেক পর, ১৯৭৬ সালে— যে সংশোধনী নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির বিষোদ্গিরণ এখনও প্রতি দিনের রুটিন। কিন্তু সেই শব্দটি জোড়ার অনেক আগে, একেবারে সেই ১৯৪৮ সালেই কিন্তু ধর্ম ও ভারতীয় রাষ্ট্রের সম্পর্কটি স্পষ্ট ভাবে উল্লিখিত ও বর্ণিত হয়েছিল সংবিধানে। ধর্ম ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক এই দেশে কেমন হতে চলেছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকার কোনও কারণ থাকতে পারে না, কেননা ১৯৪৮ সালের মূল সংবিধানটির ২৫ থেকে ২৮ নম্বর ধারাতেই নাগরিকের ধর্মাচারের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের ধর্মবিষয়ক দূরত্ব মেনে চলার কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় উচ্চারিত। অর্থাৎ, সংবিধানের প্রিঅ্যাম্বল বা প্রস্তাবনায় যখন ১৯৭৬ সালে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি যোগ করা হয়েছিল, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল— আগেই সংবিধানে যে কথা বলা হয়েছে, তাকে আরও স্পষ্ট করা— কোনও ‘নতুন’ আদর্শ আমদানি করা নয়। দেশের সুপ্রিম কোর্টই তখন বিষয়টি এই ভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছিল। অথচ মজা হল, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বিষয়টিকে একটি কংগ্রেসি চক্রান্ত-প্রসূত সাংবিধানিক বিকার হিসাবে দেখানোর ধূর্ততা এত দিনে প্রবল রকম সফল। এবং সুপ্রতিষ্ঠ। ভারত আসলে আদতেই হিন্দু রাষ্ট্র, এই প্রচার এখন আর ইতিউতি নয়, এখন তা গগনভেদী, ভূমিবিদারী। ফলে, অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন নতুন সংসদ ভবনের অশোক স্তম্ভের উদ্বোধনে পূজার্চনা করেন, সেই ঘটনাকে অ-সাংবিধানিক বলে স্বীকার করতেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নারাজ হন। দেশের বিশালাকার অহিন্দু (কেবল মুসলমান নন) নাগরিকের মনে যে এতে একটা দূরত্ববোধ তৈরি হতে পারে, এমন তাঁরা ভাবেনও না, এবং ভাবলেও যুক্তি ধরে দেন যে হিন্দু ভারতে থাকতে হলে অহিন্দুত্বের দামটি ধরে দিতে হবে বইকি। পরের দিন সংবাদমাধ্যমে এমনকি এও পড়া যায় যে, যিনি এবং যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর অশোক স্তম্ভ পূজা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা আসলে হিন্দুবিদ্বেষী— হিন্দুবিরোধিতায় মদত দেওয়াই তাঁদের কাজ!

প্রশ্ন অবশ্য কেবল এটাই নয়। প্রশ্ন— প্রধানমন্ত্রী কেন জাতীয় স্তম্ভ উদ্বোধনের দায়িত্ব নেবেন, তা নিয়েও। তা হলে রাষ্ট্রপতির কাজ কী? কিংবা লোকসভার স্পিকার যিনি, তাঁরই বা ভূমিকা কী? প্রধানমন্ত্রী এক জন দলের নেতা, সরকারের প্রধান— তিনি কেন রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ কর্তা হিসাবে অবতীর্ণ হয়ে এ কাজ করবেন? রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কি একটা পার্থক্য থাকার কথা ছিল না? সেই পার্থক্য কি এত দিন ছিল না? তবে এও ঠিক, যাঁরা সংবিধানকে তুচ্ছ করে ইতিমধ্যেই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছেন, তাঁরা এই সূক্ষ্মতর পার্থক্য জানবেনই বা কেন, মানবেনই বা কেন।

আসল কথা, ভারতের ভাগ্যবিধাতা যিনি, তিনি যদি জনগণমন-অধিনায়ক হন, তবে জনগণের মনেই প্রশ্নগুলি ওঠা উচিত। প্রকৃত দুর্ভাগ্য সেখানেই। জনসাধারণের চিত্ত থেকে এই ঔচিত্যবোধটি অস্তমিত হয়েছে বলেই নায়ক ও অধিনায়করা যা ইচ্ছে করে পার পেয়ে যান, এমনকি দফায় দফায় ভোটাঞ্জলিও পেয়ে থাকেন। স্বাধীনতার ৭৫-পূর্তির উৎসবের প্রেক্ষাপটে আজ সংবিধানকে পদে পদে হেয় করে তাই রাষ্ট্রীয়তার নামে দলীয়তা, সর্বজনস্বার্থের নামে সঙ্কীর্ণ সংখ্যাগুরুবাদের বিজয়ডঙ্কা বাজছে।

Narendra Modi Secularism

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।