Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Pregnant lady

উপেক্ষিতা

প্রসূতিদের পরিষেবা ও শিশুদের টিকাদানের কাজ কার্যত বন্ধ করে আশাকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি কোভিড-আক্রান্তদের নজরদারি ও সহায়তার কাজ করেছেন।

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২২ ০৪:৪৮
Share: Save:

চিকিৎসা পরিষেবার সকল ধারা-উপধারার মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব পায় প্রসূতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসুরক্ষা। মানবিক কারণে তো বটেই, তা ছাড়াও প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুহার মানব-উন্নয়নের সূচক, তাই এক অর্থে তা দেশের পরিচয়। সে কাজটি এ রাজ্যে যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে কি না, সে সংশয় দেখা দিল দু’টি সাম্প্রতিক সংবাদে। এক, এ রাজ্যে কোভিডকালে বেড়েছে প্রসূতিমৃত্যু। দুই, সিজ়ার করে প্রসবের সংখ্যা প্রত্যাশার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দু’টি ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় ব্যবস্থাপনার ত্রুটিগুলি প্রধান কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। অর্থাৎ, সময় থাকতে সতর্ক হলে, যথাযথ পরিকল্পনা করলে অনেক প্রাণ বাঁচত, অনেক ঝুঁকি এড়ানো যেত। এ কথাটি কোভিডে প্রসূতিমৃত্যুর ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। কোভিড নিয়ন্ত্রণে আশাকর্মীদের নিয়োগ করার সরকারি সিদ্ধান্তের দাম এ রাজ্যের মেয়েরা দিলেন প্রাণের মূল্যে। প্রসূতিদের পরিষেবা ও শিশুদের টিকাদানের কাজ কার্যত বন্ধ করে আশাকর্মীরা বাড়ি-বাড়ি কোভিড-আক্রান্তদের নজরদারি ও সহায়তার কাজ করেছেন। তার উপর অনেক হাসপাতাল ‘কোভিড হাসপাতাল’ বলে ঘোষিত হওয়ায় প্রসূতিদের স্থান দিতে চায়নি। প্রসূতিদের জন্য নির্দিষ্ট ‘নিশ্চয়যান’ কোভিড রোগী বহনে নিযুক্ত হয়েছে। এ সবের প্রত্যাশিত ফলই মিলেছে— ২০২০-২১ সালে মোট প্রসূতিমৃত্যুর সংখ্যা ১২০৬, ২০২১-২২ সালে ১১২৯। যে রাজ্যে স্বাস্থ্যকর্তাদের লক্ষ্য বছরে মোট প্রসূতিমৃত্যুর সংখ্যা আটশোর মধ্যে সীমিত রাখা, সেখানে এই সংখ্যা নিঃসন্দেহে নিরাশাজনক।

অথচ, অতিমারির মোকাবিলা করতে গিয়ে নিয়মিত পরিষেবায় ফাঁক পড়ে গেলে যে তা মেয়েদের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে, তার আগাম সতর্কতা ছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষজ্ঞরা কোভিড অতিমারির শুরুতেই মনে করিয়েছিলেন আফ্রিকায় ইবোলা মহামারির (২০১৪-১৬) কথা। সে বার ইবোলা ভাইরাসে ১১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন, কিন্তু হাসপাতালে স্থান না হওয়ায় বাড়িতে প্রসবের কারণে এক লক্ষ কুড়ি হাজার প্রসূতিমৃত্যু ঘটেছিল। টিকাকরণ ব্যাহত হওয়ায় বহু গুণ বেড়ে গিয়েছিল মাম্পস, হাম, রুবেলা। মা ও শিশুর জীবনে এই বিপর্যয় ঘটতে পারে জেনেও প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়নি, সেই জন্যই তা ঘটেছে। এ রাজ্যেও কোভিড অতিমারিতে নানা স্তরের হাসপাতাল সংক্রমণের ভয় দেখিয়ে আসন্নপ্রসবাদের ফিরিয়েছে। ফলে মা-শিশুর প্রাণসংশয় দেখা দিয়েছে, এমনকি মৃত্যুও ঘটেছে। যে ঝুঁকি নিবারণ করা অসাধ্য নয়, তা-ও মেয়েদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ রাজ্যে চিকিৎসাব্যবস্থা আসলে চিকিৎসক ও আধিকারিকদের সুবিধা অনুসারে পরিকল্পিত— মেয়েদের প্রয়োজন সেই ব্যবস্থায় যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না।

তারই প্রতিফলন মেলে অতিরিক্ত সিজ়ারিয়ান অস্ত্রোপচারের সংখ্যায়। বেসরকারি ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবের চাইতে সিজ়ারিয়ান প্রসবের সংখ্যা বহু দিন থেকেই বেশি। এখন সরকারি হাসপাতালেও দশটি প্রসবের মধ্যে চারটি সিজ়ার। সিজ়ার সংখ্যায় এ রাজ্য ভারতের শীর্ষে। চিকিৎসককুলের মতে, এর অন্যতম কারণ সময়ের অভাব— স্বাভাবিক প্রসব করানোর মতো সময় নেই চিকিৎসকদের। কোনও সভ্য দেশে চিকিৎসকের সুবিধা অনুযায়ী চিকিৎসা হয় কি? আবার, সরকারের অর্থ অকুলান বলে সিজ়ারিয়ান অস্ত্রোপচারে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাও বিভ্রান্তিকর। সরকারি হাসপাতালে সিজ়ার ‘অডিট’ নাহয় শুরু হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, বেসরকারি হাসপাতালে কী করে সিজ়ারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হবে? কী করে অকারণে অস্ত্রোপচার থেকে সুরক্ষিত হবে মেয়েরা, তা স্থির হবে কী করে? মেয়েদের প্রয়োজনকে কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা তথা স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিকল্পনা কি এতই কঠিন?

অন্য বিষয়গুলি:

Pregnant lady Women COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy