বাঙালিরাই বোধ হয় ভারতের সবচেয়ে কূটকচালে ও মিথ্যাবাদী জনগোষ্ঠী। নইলে ‘বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দেব কিসে’ বলে আমাদের দুর্নাম করত না। চড়াই, শালিক কোন পাখি না ধানখেতে খুঁটে খুঁটে খাবার জোগাড় করে? বাঙালি খাজনা দেবে না, রাজদ্রোহে উস্কানি দেবে, সেখানেও আমাদের মতো নিরীহ, ছোট্ট পাখিদের দোষ! মাছরাঙাকে নির্দোষ প্রমাণে বাঙালি প্রবাদ আওড়ায়, ‘সব পাখি মাছ খায়, দোষ হয় মাছরাঙার’। সব মানে? আমাদেরও নিজেদের মতো মৎস্যভুক পাপিষ্ঠ বানিয়ে দিল! হে গরুড়, হিন্দুর পুরাণ ও মহাভারতে তুমি বিষ্ণুবাহন, পাখিদের মধ্যে ইন্দ্রসম। পারো তো, ওদের এই অপরাধের বিচার কোরো। তাও তো, বিশ্বায়ন, কনজিউমারিজ়ম-এর যুগে বাঁচোয়া। ওদের বাচ্চাগুলি এখন আপনমনে একা একা খেলে। আগে দল বেঁধে ‘রস কষ শিঙাড়া বুলবুলি মস্তক’ বলে একটা খেলা খেলত। শিঙাড়ার সঙ্গে বুলবুলির কী সম্পর্ক? কিন্তু কিছু বলা যাবে না।
পরম দেশপ্রেমিক, স্বঘোষিত ‘বীর’, বিনায়ক দামোদর সাভারকর আমাকে বলেছিলেন, ও সব গায়ে মাখতে নেই। আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে ওঁকে পিঠে নিয়ে রোজ সকালে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসতাম, তার পর সন্ধ্যাবেলা ওঁকে ফিরিয়ে নিজের ঘুলঘুলিতে ঢুকে পড়তাম। কর্নাটক সরকার এই ইতিহাসটা স্কুলপাঠ্য বইয়ে রেখেছে— তার পরই দেশ জুড়ে চিৎকার। বাঙালিরাও যথেচ্ছ ধুনো জ্বালিয়েছে। ওরা ভুলে গিয়েছে, বীর হনুমান শরীরটাকে যোজনপ্রমাণ বড় করে সমুদ্র লঙ্ঘন করে স্বর্ণলঙ্কায় পৌঁছন, তার পর শরীরটাকে ছোট করে রাবণরাজ্যে ঢুকে যান। এটা গল্পকথা নয়, সনাতন ভারতের ঐতিহ্য। বাঙালি প্রভু রামচন্দ্রের ইতিহাস ভুলে গিয়েছে, আমি কোন ছার! কিন্তু, আমরা কোন ইতিহাস পড়ব, অমিত শাহ আর অক্ষয়কুমার বলে দিয়েছেন।
বাঙালিরা নাকি গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস বলে লাটিন আমেরিকার এক প্রয়াত লেখকের ভক্ত! ওঁর ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড বইতে মার্সিডিজ় যখন শাড়ি ধরে আকাশে উঠে যায়, তখন তো ধন্য ধন্য করে, ‘ম্যাজিক রিয়ালিজ়ম’ কপচায়! কলম্বিয়ার ওই বিজাতীয় লেখকের ঢের আগে আমি আর সাভারকর এই সব করেছি জেনেও সম্মান দিল। সলমন রুশদির উপন্যাসে ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে লোকে হিল্লিদিল্লি করে না? খ্রিস্টান, মুসলমান এ সব বিজাতীয় লেখকদের বইটই অবশ্য আমি পড়িনি, হোয়াটসঅ্যাপে পেয়েছি। মহান দেশপ্রেমিককে নিয়ে ঠাট্টার রাজনীতি করতে গিয়ে বাঙালি নিজের সংস্কৃতিও ভুলেছে। ‘বুলবুলি লো সই, আজ খেলে আমার বাড়ি, কাল খাবে কই’ এ সব কাদের মেয়েলি ছড়ায় আছে? আমার পিঠের সওয়ার ওই জন্যই হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তখন কাউকে বেজাতের ঘরে দানা খুঁটতে যেতে হবে না। আমার অত সুন্দর, ধ্বন্যাত্মক বুলবুল নামটাকেও বাঙালি বুলবুলি করেছে— এই ভাষার রাজনীতি বুঝি না ভেবেছে? এক বার হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান হোক, মজা দেখাচ্ছি। তবে আসল কথা, পাখি বিশারদরা বলে, সবাই বুলবুলি— কিন্তু কলকাতায় যে ‘সিপাই বুলবুলি’ দেখা যায়, তার চেয়ে আন্দামানের বুলবুল অন্য রকম। বিপন্ন প্রজাতি, শুধু আন্দামানেই থাকে। থাকুক গে, ওদের মতো বিভাজনের রাজনীতি আমরা করি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy