Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
PM Narendra Modi

পুবসাগরের পারে

সাম্প্রতিক কালে দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে আমেরিকা-চিন বিবাদ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টার জেরে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা জরুরি হয়ে পড়েছে ভারতের ক্ষেত্রে।

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৫
Share: Save:

ভূ-রাজনীতির ক্রমপরিবর্তনশীল আবহে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা বিলক্ষণ জানেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার সূত্রে ২০১৪ সালে দেশের শীর্ষে আসীন হওয়ার পরে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে সুসম্পর্ক বৃদ্ধির লক্ষ্যে নব্বইয়ের দশকের ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি হিসাবে পুনরুজ্জীবিত করেন তিনি। তবে, দ্বিতীয় দফায় দিল্লির বিদেশনীতির মূলে ছিল পশ্চিম এশিয়ার আরব রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে চলা। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছিল, এ-হেন পদক্ষেপ করতে গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কি তবে মনোযোগ হারিয়েছে ভারত? সম্ভবত সেই জল্পনা প্রশমনেই এনডিএ সরকারের তৃতীয় দফার গোড়াতেই প্রাচ্যের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে জটিলতা নিরসনে উদ্যোগী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সদ্যসমাপ্ত ব্রুনেই এবং সিঙ্গাপুর সফর অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এই অঞ্চলে একাধিক সফর করেছেন এবং নয়াদিল্লিতে স্বাগত জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মন্ত্রীদের। সফরগুলি থেকে যে কূটনৈতিক গতি তৈরি হয়েছে, তার জেরে আগামী মাসে লাও-তে আসিয়ান-ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ভারতের বার্ষিক বৈঠকে কিছু বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সিদ্ধান্ত হতে পারে, এমনটাই আশা।

সাম্প্রতিক কালে দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে আমেরিকা-চিন বিবাদ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টার জেরে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা জরুরি হয়ে পড়েছে ভারতের ক্ষেত্রে। প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ ব্রুনেই-এর সঙ্গে দিল্লির চার দশকেরও বেশি কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও এই প্রথম কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সে দেশে দ্বিপাক্ষিক সফরে গেলেন। লক্ষণীয়, আমেরিকার সঙ্গে ব্রুনেই-এর যেমন ভূকৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, তেমনই চিনের সঙ্গে রয়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। তা ছাড়া, ব্রুনেই-এর মুয়ারা বন্দরের ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক সুবিধার কারণে তার সহযোগিতা ভারতের কাছে লাভজনক হতে পারে, বিশেষত তার ‘সাগর’ নীতির ক্ষেত্রে। ফলে দক্ষিণ চিন সাগরে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে দিল্লির ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির ক্ষেত্রে। অন্য দিকে, মোদীর সিঙ্গাপুর সফরের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল সেমি-কন্ডাক্টর, যে-হেতু বিশ্বের ইলেকট্রনিক শিল্পক্ষেত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এই রাষ্ট্র। বর্তমানে দুর্লভ খনিজ এবং চিপ উৎপাদনের সূত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং বিনিয়োগে আগ্রহী ভারতের ক্ষেত্রে কাজে আসবে সিঙ্গাপুর: সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে ক্রমবর্ধমান জমি ও শ্রমখাতে ব্যয় হ্রাসের পথ খুঁজছে তারাও। এতে লাভ ভারতেরই— সিঙ্গাপুরের বৈদেশিক বিনিয়োগে যে পতন ঘটেছিল, তার সুরাহা হবে।

সিঙ্গাপুর সফরে মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভারত এবং কোয়াড-ভুক্ত চতুর্দেশীয় গোষ্ঠী আলাদা আলাদা ভাবে আসিয়ান-এর পাশে রয়েছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোর মূল স্তম্ভ হিসাবে আসিয়ান-কেই গণ্য করে ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া (কোয়াড)। আসিয়ান সদস্যদের মূল উদ্বেগগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে ও আঞ্চলিক প্রতিরক্ষায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করছে। সে কাজ অব্যাহত থাকুক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy