Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
independence day

তোমার পতাকা

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে জওহরলাল নেহরুও কি তবে ‘অভিযোগমুক্ত’, ‘ভারতপ্রেমী’ হলেন?— বিরোধীদের এই প্রশ্নও অসঙ্গত নয়।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ০৫:২৪
Share: Save:

এগিয়ে আসছে স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তির দিনটি, জাতীয় পতাকার সঙ্গে দেশবাসীর একাত্মতার বোধ আরও মজবুত করতে প্রধানমন্ত্রী ডাক দিলেন ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ কর্মসূচির। আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এসেছে, প্রধানমন্ত্রীর একগুচ্ছ টুইটও: ১৩ থেকে ১৫ অগস্ট ভারতের প্রতিটি গৃহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার বা লাগানোর আহ্বান সেখানে। সরকারি দফতর, বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল, রেস্তরাঁ, টোল প্লাজ়া, থানায় জাতীয় পতাকা তোলার কথা বলা হয়েছে, কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে রাজ্য সরকারগুলিকে। প্রধানমন্ত্রীর টুইটে উঠে এসেছে স্বাধীন ভারত গড়ার পথে বহু মানুষের স্বপ্ন ও সংগ্রামের কথা, এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে— ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর প্রসঙ্গ, স্বাধীন ভারতে তাঁর তেরঙ্গা ওড়ানোর ছবি।

আর উঠে আসছে বিতর্ক, যা মোটেই অমূলক নয়। তার মূল কথাটি: বিজেপি দল ও সরকারের হাতে জাতীয়তাবাদ এখন যে অসহিষ্ণু উগ্রতায় পর্যবসিত, তাতে স্বাধীনতা দিবসে কোনও নাগরিক জাতীয় পতাকা তোলার আহ্বানে সাড়া না দিলে, নীরব থাকলে বা নিজের মতো করে উদ্‌যাপন করলে তাঁর সেই অধিকার রক্ষিত হবে তো? বিজেপির নেতা-মন্ত্রী ও কর্মীদের তরফে প্রধানমন্ত্রীর ‘আহ্বান’-কে ‘আদেশ’ বলে ব্যাখ্যা করা, এবং তা পালনে নাগরিকের উপর নজরদারি, হেনস্থা ও ‘পদক্ষেপ’-এর আশঙ্কা যে ভিত্তিহীন নয়, সাম্প্রতিক ভারত তার ভুক্তভোগী। নাগরিককে ঘরে-বাইরে জাতীয় পতাকা তোলায় চাপ দেওয়া বা বাধ্য করা যায় না, এবং তারও বড় কথা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন দেশপ্রেমের প্রমাণ ও পরাকাষ্ঠা নয়; চোখ রাঙিয়ে জোর করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা যায় না— এই গোড়ার কথাগুলি বিজেপির নেতা ও সমর্থকেরা বোঝেন না, বুঝতে চানও না। আবার যে জাতীয় পতাকা নিয়ে এত কথা, ইতিহাস-সচেতন নাগরিক মাত্রেই জানেন— বিজেপির মতাদর্শগত শিকড় আরএসএস নিজেই তার প্রকাশ্য বিরোধী ছিল স্বাধীনতার বহু বছর পর পর্যন্ত; গত কয়েক মাসেই এক আরএসএস নেতা ও এক প্রাক্তন বিজেপি মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, এক দিন গেরুয়া পতাকা তথা ‘ভগওয়া ধ্বজ’-ই ভারতের জাতীয় পতাকা হয়ে উঠবে, উড়বে লাল কেল্লায়। এ যে বিক্ষিপ্ত মন্তব্য নয়, আরএসএস-বিজেপির মনোগত বাসনা, বুঝতে অসুবিধা হয় না। জাতীয় পতাকা নিয়ে আবেগকম্প্র আহ্বানের সারবত্তা নিয়েও তাই বিস্তর সংশয়, প্রশ্নও।

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে জওহরলাল নেহরুও কি তবে ‘অভিযোগমুক্ত’, ‘ভারতপ্রেমী’ হলেন?— বিরোধীদের এই প্রশ্নও অসঙ্গত নয়। প্রধানমন্ত্রী টুইটে নেহরুর অবদান স্মরণ করলেও, তাঁর দলের মনোভাবটি সমগ্র ভারতের জানা। এ এক সাময়িক, কৌশলী সন্ধি কি না, সময়ই সে কথা বলবে। তবু এ কথা ঠিক, জাতীয় পতাকা নিয়ে আবেগ-অতিরেককে বিজেপি সরকারের দেশাত্মবোধের নির্দশন বা প্রমাণ ভাবার কোনও কারণ নেই। রবীন্দ্রনাথ ‘নেশন’ ও ‘স্বদেশ’-এর ফারাক বুঝিয়েছিলেন, সঙ্কীর্ণ রাজনীতির প্রকোপে স্বদেশপ্রেম কী করে হারিয়ে ফেলে তার উদার প্রসার, মনে করিয়েছিলেন সে কথা। আরএসএস-বিজেপি রবীন্দ্রনাথ পড়েনি, জাতীয় পতাকা নিয়ে মাতামাতিই তাদের মহোৎসব, তাকে বইবার অন্তরশক্তি অর্জন সুদূরপরাহত।

অন্য বিষয়গুলি:

independence day PM Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy