কোনও রাজ্যে ভোট আসিলেই দেশের মানুষ একটি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়েন। আর যাহাই হউক, মাসখানেক পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়িবে না! এই আশ্বাসবাণীটি ভারতবাসী অভিজ্ঞতায় লাভ করিয়াছেন। গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনের সময় দেখা গেল, আন্তর্জাতিক বাজারে যাহাই ঘটুক না কেন, ভারতে তেলের দাম নট নড়নচড়ন। কেন, সরকারি দস্তাবেজে স্বভাবতই সেই প্রশ্নের উত্তর মিলিবে না। উত্তর খুঁজিতে হইবে দেশের সর্বোচ্চ নেতার রাজনৈতিক চলনভঙ্গিতে। দেশের যাবতীয় প্রতিষ্ঠানই নাকি এখন তাঁহার অঙ্গুলিনির্দেশে উঠে-বসে, সে প্রতিষ্ঠানের কেতাবে স্বনিয়ন্ত্রণ, স্বশাসন ইত্যাদি গালভরা শব্দ যত বারই লেখা থাকুক না কেন। ফলে, পেট্রোপণ্যের মূল্য বাজারের অঙ্কে নির্ধারিত হইবে, এই নীতিটিও সেই অঙ্গুলির হেলনেই ক্ষীণ বায়ুতে মিলাইয়া যায়— যত দিন ভোট চলে, তত দিন অবধি। ভোট মিটিলেই আবার দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। পশ্চিমবঙ্গের ভোটের পরও ছবিটি পৃথক হয় নাই। এক্ষণে প্রশ্ন, বাজারের নিয়মকে যদি অঙ্গুলি বা বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া আঁস্তাকুড়ে ফেলিয়া দেওয়া এতই সহজ হয়, তবে সেই ভড়ংটি রাখিবার কী প্রয়োজন? বাজার ব্যবস্থার প্রতি তাঁহাদের শ্রদ্ধার পরিমাণ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধার তুলনায় অধিকতর, এমন দাবি করিবার কোনও কারণ গত সাত বৎসরে মিলে নাই। তাঁহাদের নিকট সকলই রাজনীতি— ক্ষুদ্র, সঙ্কীর্ণ ভোটের রাজনীতি। পেট্রোপণ্য হইতে টিকা, কোনওটিই সেই নিয়মের ব্যতিক্রম নহে।
দেশে পেট্রলের দাম কিছু কিছু এলাকায় ফের লিটারে একশত টাকা ছাড়াইয়াছে। ডিজ়েলের দামও খুব পিছাইয়া নাই। কেন এহেন মূল্যবৃদ্ধি, তাহার কারণ ইতিমধ্যেই আলোচিত— কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোপণ্যের উপর বিপুল কর আদায় করিতেছে; রাজ্য সরকারগুলিও, তুলনায় কম হইলেও, টাকা তুলিতেছে। পেট্রোপণ্যের উপর চড়া কর আদায় করা উচিত কি না, তাহা তর্কাতীত নহে; উভয় পক্ষেই কম-বেশি যুক্তি রহিয়াছে। কিন্তু এক্ষণে একটি কথা স্মরণে রাখা জরুরি— কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যেই লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হইয়াছে। ফলে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণ হইতেছে সম্পূর্ণ সড়ক পথে, ডিজ়েল-নির্ভর পরিবহণের মাধ্যমে। ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিলে স্বভাবতই সেই পণ্যগুলিরও মূল্যবৃদ্ধি ঘটিবে, এবং সার্বিক খুচরা মূল্যবৃদ্ধি হইবে। তাহার আঁচ লাগিবে সাধারণ মানুষের গায়ে। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ ইতিমধ্যেই অতিমারির দাপটে কাহিল। অনেকে চাকুরি খোয়াইয়াছেন, অনেকের ব্যবসায় মন্দা, অনেকের আয় কমিয়াছে বিপুল ভাবে। তাঁহাদের উপর মূল্যবৃদ্ধির এই বোঝা অতি দুঃসহ হইবে। বিশেষত, কোভিড-গ্রাস হইতে অর্থব্যবস্থাকে উদ্ধার করিতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আর্থিক নীতি শিথিল করিয়াছে, যাহার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতির হারের উপর। এহেন অবস্থায় তেলের উপর কর আদায়ের পরিমাণ কতখানি হওয়া যুক্তিসঙ্গত, সেই তর্কটি সহজ নহে। তাহাতে অর্থশাস্ত্রের প্রজ্ঞা যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজন ন্যায্যতার দর্শনে অধিকার। ঘটনাক্রমে, দেশের শাসকদের এই বিষয়গুলিতে তেমন ব্যুৎপত্তি আছে বলিয়া খবর নাই। তাঁহাদের পারদর্শিতা ক্ষুদ্র রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষকে যদি পরবর্তী নির্বাচনের পথ চাহিয়া থাকিতে হয়, তাহা অতি দুর্ভাগ্যজনক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy