Advertisement
২১ অক্টোবর ২০২৪
GST Council

সাবধানতা জরুরি

উন্নত বিশ্বের তুলনায় তো বটেই, বহু উন্নয়নশীল দেশের তুলনাতেও ভারতে বিমা গ্রাহকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অনুপাতে কম।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০৪
Share: Save:

জিএসটি পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে বিমার প্রিমিয়ামের উপরে করের হার কমানো নিয়ে। অন্য দিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাই সটান বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রিমিয়ামের অঙ্ক। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এমন সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দু’টি চিন্তা দেখে দেশবাসীর মনে আশঙ্কা হওয়া স্বাভাবিক যে, সরকার ঠিক কী করতে চায়, সে বিষয়ে সরকারের কর্তাদের আদৌ ধারণা আছে তো? জীবন বিমার নিয়ম সংস্কার করে স্থির হয়েছে, ১ অক্টোবর থেকে কোনও গ্রাহক তাঁর পলিসি বন্ধ (সারেন্ডার) করলে আগের তুলনায় বেশি টাকা পাবেন। এই ব্যবস্থার ফলে বিমা সংস্থাগুলির উপরে যে বাড়তি আর্থিক চাপ পড়বে, তা সামাল দেওয়ার জন্য প্রিমিয়ামের অঙ্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি, উঠে যাচ্ছে ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডার; এনডাওমেন্ট প্ল্যানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিমামূল্য হচ্ছে দু’লক্ষ টাকা। কমছে এজেন্টদের কমিশনও। এক দিকে খরচ বাড়লে তা অন্য দিক থেকে পুষিয়ে নেওয়ার তাগিদ ব্যবসায়িক সংস্থামাত্রেরই থাকে, তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে পণ্যটি যে-হেতু জীবনবিমা, তাই তার সামাজিক গুরুত্বের কথাও মাথায় রাখা জরুরি। উন্নত বিশ্বের তুলনায় তো বটেই, বহু উন্নয়নশীল দেশের তুলনাতেও ভারতে বিমা গ্রাহকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার অনুপাতে কম। বিমা এমনই একটি পণ্য, যা সংজ্ঞাগত ভাবেই বিপন্ন মানুষের সহায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যে দরিদ্র পরিবার মূলত এক জনের আয়ের উপরেই নির্ভরশীল, সেখানে আয়কর্তার আকস্মিক মৃত্যু হলে পরিবারটি যে নিশ্চিত আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে, সেই বিপদ থেকে পরিবারটিকে রক্ষা করার সেরা পথ হল জীবনবিমা। অতএব, তার দাম বাড়ানোর সময় এই দিকগুলির কথা ভাবতে হবে বইকি।

যে কোনও বাজারেই চাহিদা ও জোগানের সাম্য অনুসারে যে ভাবে পণ্যের মোট বিক্রির পরিমাণ নির্ধারিত হয়, জীবনবিমার প্রিমিয়াম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটিও এই বাজারকে একই ভাবে প্রভাবিত করবে— দাম বাড়ার অর্থ, পণ্যটির চাহিদা কমবে, অর্থাৎ আগের তুলনায় কমসংখ্যক মানুষ বিমা করাতে আগ্রহী হবেন। ভারতের মতো দেশে, যেখানে মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিমাগ্রাহকদের সংখ্যা এমনিতেই অতি কম, সেখানে এই ধরনের সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব বিপুল। বিমাক্ষেত্রে আরও একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে— এত দিন সর্বোচ্চ ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত নতুন পলিসি কেনা যেত; এ বার থেকে সেই ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারিত হয়েছে ৫০ বছর। অর্থাৎ, কোনও ব্যক্তি যদি কোনও কারণে ৫০ বছর বয়স অবধি বিমার বাজারের বাইরে থাকেন, তাঁর আর সেই বাজারে প্রবেশের অধিকার রইল না। এই সিদ্ধান্তটিও সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী।

আশঙ্কা হয়, জীবনবিমা নিগমের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তগুলির পিছনে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতে বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত মানুষের কাছেই জীবনবিমা শুধুমাত্র বিমা নয়, তা লগ্নির একটি মাধ্যম। বস্তুত, অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। প্রিমিয়ামের ব্যয় বাড়ার অর্থ, সেই লগ্নিতে প্রত্যাশিত লাভের তুলনায় লগ্নির ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া। অর্থাৎ, লগ্নির ক্ষেত্র হিসাবে বিমার গ্রহণযোগ্যতা কমবে। ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজ়িট ইতিমধ্যেই তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। অতএব, লগ্নির ক্ষেত্র হিসাবে পড়ে থাকবে শেয়ার বাজার। গোটা দুনিয়াই ক্রমে শেয়ার বাজারে লগ্নির দিকে ঝুঁকেছে, ফলে এই বিশ্বায়িত দুনিয়ায় ভারতও সেই প্রবণতার বাইরে থাকতে পারে না। সাধারণ মানুষকে সে দিকে যেতে উৎসাহ দেওয়া নীতি হিসাবে অগ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু, তার জন্য মানুষকে জীবনবিমা থেকে দূরে ঠেললে তার আর্থিক ফলাফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। বিশেষত আর্থিক ভাবে তুলনায় অসচ্ছলদের ক্ষেত্রে। অতএব, নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। জনস্বার্থের পরিপন্থী নীতি সর্বদাই বর্জনীয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Premium
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE