দিনকয়েক আগে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় মোট চাহিদা পৌঁছেছিল ৯০২৪ মেগাওয়াটে। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি চাহিদার নিরিখে নজির গড়েছে বিদ্যুৎ। দিনকয়েক আগে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় মোট চাহিদা পৌঁছেছিল ৯০২৪ মেগাওয়াটে। সিইএসসি এলাকাতেও সর্বোচ্চ চাহিদা ওঠে ২৫২৪ মেগাওয়াটে। বিদ্যুৎমন্ত্রীর দাবি, এমন রেকর্ড চাহিদাকালেও রাজ্যের ২.২২ কোটি গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুতের জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির কর্মদক্ষতার কারণে। কিন্তু সত্যিই কি বিদ্যুতের জোগান ‘নিরবচ্ছিন্ন’ থেকেছে? গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে বেড়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। বাড়তি চাপের কারণে বিভিন্ন জায়গায় ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়া ও যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। এমন সমস্যার আগাম আঁচ করে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ ভবনে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তরফে চব্বিশ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছিল। সঙ্গে দু’টি হেল্পলাইন নম্বরও দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও গ্রাহকের হয়রানি রোখা যায়নি।
চাহিদা অকস্মাৎ বৃদ্ধি পেলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটার সম্ভাবনা থাকে, বিশেষত বণ্টন সংস্থা যদি অপ্রস্তুত হয়। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এলাকায় মার্চ মাস থেকে বোরো চাষের জন্য চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রবল গরমের কারণে বাড়তি চাহিদা। সংস্থার পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এই বছর নথিভুক্ত চাহিদাই বেড়েছে এক হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। অন্য দিকে, শহরাঞ্চলে পরিবার পিছু বাতানুকূল যন্ত্রের ব্যবহার ঢের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাড়ি থেকে অফিসের কাজ বা অনলাইন ক্লাসেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। সুতরাং, বণ্টন সংস্থাগুলির উপর অতিরিক্ত চাপের কারণটি বোঝা যায়। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুটা আগাম ব্যবস্থা করে রাখায় এ বার প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেওয়া গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার পরও রেকর্ড চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বল্পমেয়াদে বাজার থেকে চড়া দরে বিদ্যুৎ কিনতে হয়েছে বণ্টন সংস্থাগুলিকে। কিন্তু বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধি না হওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই বণ্টন সংস্থাগুলি আর্থিক চাপের সম্মুখীন। তারা উৎপাদন সংস্থাগুলির টাকা অনেক ক্ষেত্রে ঠিকমতো মেটাতে পারে না, নতুন লগ্নির পথ বন্ধ হয়, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, ফলে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ না মেলায় বণ্টন সংস্থাগুলিকে আবার বাজার থেকে স্বল্পমেয়াদে বিদ্যুৎ কিনতে হয়। এই বৃত্তকে ভাঙতে হলে প্রয়োজনে মাসুল বৃদ্ধি করা যায় কি না, ভাবা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষেত্র বা আর্থিক ভাবে দুর্বলদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করা যায়।
সমস্যা রয়েছে গ্রাহকদের তরফেও। বণ্টন সংস্থার সঙ্গে তাঁদের যতটা বিদ্যুৎ নেওয়ার চুক্তি, বেআইনি ভাবে তার চেয়ে হামেশাই বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। ফলে, ট্রান্সফরমার বসে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। ‘নিরবচ্ছিন্ন’ বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে হলে এ ধরনের অসাধুতা পরিত্যাজ্য। একই সঙ্গে বাড়তি চাপ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারি করতে হবে বণ্টন সংস্থাগুলিকেও। এ জন্য ট্রান্সফরমারে মিটার বসিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগামী দিনে গরম এবং বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। আগাম প্রস্তুত না হলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy