—প্রতীকী ছবি।
কিছু দিন আগেই সংবাদপাঠককে ধাক্কা দিয়ে যাওয়ার মতো একটা ছবি দেখা দিয়েছিল। বেঙ্গালুরু অঞ্চলের মাটি গরমে ফুটিফাটা, এক বিন্দু জলের চিহ্নবিহীন। ছবিটি হয়তো নতুন কিছু নয়, প্রতি বছরের বাস্তব। তবু তা ধাক্কা দিয়ে যায়, কারণ জায়গাটা বেঙ্গালুরু, ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মহানগরগুলির অন্যতম। অল্প কয়েক দশকের মধ্যেই সম্ভ্রান্ত ভারতবাসীর পছন্দের বাসস্থান হয়ে ওঠা বেঙ্গালুরুর প্রধান সঙ্কটই জল, তা এত দিনে জানা খবর। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে কেবল বেঙ্গালুরু নয়, মুম্বই, চেন্নাই, লখনউ, জয়পুর এবং খাস দিল্লি: এতগুলি নগর অদূর ভবিষ্যতেই জলাভাবে নিমজ্জিত হবে। এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এই জলাভাব গোটা দেশকে বিপন্ন করে ফেলবে। মহানগরগুলির পরিস্থিতি দু’টি কথা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয়: এক, বড় শহরেরই যদি এই হাল, তবে মধ্য, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ দেশভূমির অবস্থা কতখানি শোচনীয়। এবং দুই, বড় শহরে যে-হেতু জনঘনত্ব ও মোট জনসংখ্যা বেশি, তার জন্য আলাদা ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ কত জরুরি। ভূগর্ভস্থ জলের সুরাহা যেমন কৃষি অঞ্চলের জন্য আবশ্যিক, তেমনই শহরাঞ্চলের জলসঙ্কটের সমাধানের দিকেও প্রশাসনিক, এবং রাজনৈতিক, মনোযোগ ধাবিত হওয়া জরুরি।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভূগর্ভস্থ জলের খরচের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল সামগ্রিক জলসঙ্কটের পরিমাণ। সে দিক থেকে ভারতের অবস্থা বিশেষ ভাবে বিপজ্জনক। প্রথমেই লক্ষণীয়, বিশ্বের ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের এক-চতুর্থাংশ হয়ে থাকে ভারতে, যেখানে এ দেশের জনসংখ্যা বিশ্বের ১৬ শতাংশের মতো। এই যে জলখরচ, তা কিন্তু চিন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিলিত খরচের থেকেও অনেকটা বেশি। কৃষিফসলের ধরনই এর জন্য প্রধান দায়ী, বিশেষত ধানচাষ। বর্ষার জলের উপর অত্যধিক নির্ভরতা এবং সেচের অপ্রতুলতার কারণে সঙ্কট কেবল বাড়েই, কমে না। এখন প্রশ্ন হল, হেতু জানা থাকলেই তো সমাধান সহজ হয় না। বহু আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় স্পষ্ট, জলসঙ্কটে সমাধানের প্রয়াস প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য, বরং জলাভূমি বোজানো থেকে জলস্তর কমানোর প্রকল্প চলছে অবাধে। অন্যান্য দেশ, যেমন চিন যেখানে বৃষ্টিজলের উপর নির্ভরতা অনেক কম, কিংবা ইজ়রায়েল যেখানে বৃষ্টিজলসঞ্চয়ের প্রযুক্তি বিশেষ উন্নত, সে সব দেশের শিক্ষাও এখানে কাজে লাগানো হয় না। বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে, এ দিকে বিষয়টিকে এখনও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে না, ভোটের আগেও নয়।
কয়েক সপ্তাহ আগে মুম্বই শহরে ওয়াটারশেড অর্গানাইজ়েশন ট্রাস্ট আয়োজিত একটি জল-আলোচনা সভায় এই প্রশ্ন উঠে এল, সঙ্গে এল এই দাবিও যে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে যেন জলের এই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়। কেন্দ্রীয় জল মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব শশী শেখর জোরের সঙ্গে বলেছেন এ কথা। তাঁর আবেদন যে কোথাও পৌঁছয়নি দেখাই যাচ্ছে। বর্তমান রাজনীতির ধরনটিই বলে দেয় বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতিনাট্যমঞ্চে জলের মতো একাধারে পরিবেশ ও মানব উন্নয়নের আবশ্যিক উপাদানের কোনও জায়গা নেই। কেবল জল নয়, পরিবেশ বিষয়টিই নির্বাচনী প্রচারে আশ্চর্য ভাবে অনুপস্থিত, ইস্তাহারে এ বিষয়ে দু’-একটি বাক্য ব্যয়িত হলেও তার পিছনে কোনও সুচিন্তিত কর্মপন্থা নেই। এই প্রসঙ্গেই বেঙ্গালুরুর ছবিটি আবার ফিরিয়ে আনা জরুরি। যেখানে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ সতত চলমান, আর তা নিয়ে ভারতীয় জনসমাজের গৌরবের অবধি নেই, সেখানেও এই মৌলিক সঙ্কট কমার বদলে ক্রমশ দ্রুতবেগে বাড়ছে, অথচ শাসকপক্ষ কিংবা বিরোধীপক্ষ উভয়েরই চিত্তপটে এ সব বিষয়ের বদলে ধর্ম ও জাত পরিচিতির সঙ্কীর্ণ সংঘর্ষের চাপানউতোরই সর্বদা বিরাজ করছে। নির্মাণ আর সমাধানের বদলে রাজনীতি এখন অবনমন আর বিনাশের মাধ্যম, ভারত একাই তা প্রমাণ করতে সমর্থ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy