Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Indian Government

নীতিকথনের আগে

বর্তমান সরকারের গত আট বছরের ইতিহাসে বার বার প্রমাণিত, কূটনীতির অভিমুখটি নির্ণীত হচ্ছে ঘরোয়া রাজনীতির প্রয়োজন অনুযায়ী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৭
Share: Save:

আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখানো নীতি হিসাবে নিশ্চয় দুরূহ। তা সত্ত্বেও ‘পর’কে কিছু শেখানোর আগে সেটা নিজে করে দেখানোর অন্তত একটা প্রয়াস করা ভদ্রোচিত, নতুবা বড়ই হাস্যাস্পদ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই যেমন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে, রাষ্ট্রপুঞ্জেও, ভারতের মুখে একনাগাড়ে শোনা যাচ্ছে পাকিস্তান ও চিনের বিষয়ে দ্বিচারিতার অভিযোগ। সন্ত্রাস বিষয়ে দ্বিচারী এই দুই দেশ এক দিকে সন্ত্রাস দমনের কথা বলে, অন্য দিকে লস্কর-ই-তইবার মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের অলক্ষ্য প্রশ্রয় দেয়: অভিযোগটি সত্য। কিন্তু বর্তমান ভারত সরকারের মুখে কেন যেন তা মানায় না। বিভিন্ন বিষয়ে ভারত সরকারের নীতির অস্পষ্টতা ও দ্বিচারিতা এত অস্বস্তিকর যে তার দিকে আঙুল তোলার জন্যে দড় কূটনীতিক হতে হয় না, সাধারণ দৃষ্টিতেই ধরা পড়ে। ভারতের চিন-নীতি ও পাকিস্তান-নীতির তফাত খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় বিষয়টি। এমনিতে দুই দেশের সঙ্গে দুই রকম সম্পর্ক থাকা কূটনীতিতে প্রচলিত ধারা, কিন্তু নিজের ভূমিদখলের প্রশ্নেও যদি দুই ক্ষেত্রে দুই রকম নীতি গৃহীত হয়, সেটা অবশ্যই প্রশ্নযোগ্য। ভারতের চিন-অধিকৃত অংশগুলি বিষয়ে মোদী সরকার নীরব ও উদাসীন, প্রায় নমনীয়। অন্য দিকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বিতর্কিত অংশগুলি নিয়ে পাকিস্তানের বিষয়ে খড্গহস্ত। অথচ কাশ্মীরের ক্ষেত্রটি ঐতিহাসিক ভাবেই অনেক জটিল, ভারতের অবস্থানেও সেই জটিলতার ছায়া। চিনের ক্ষেত্রটি একেবারে আলাদা— তার আগ্রাসন প্রশ্নাতীত। সম্প্রতি ভারতের কিছু প্রাক্তন সামরিক কর্তাব্যক্তি বিষয়টির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করলেন। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ক্রোধ প্রকাশ থেকে শুরু করে সেখানে সামরিক টহল, আংশিক উদ্ধার বিষয়ে গৌরব প্রদর্শন— দিল্লির সরকারি মহলে একটি নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু দুই বছর আগে গালোয়ান অঞ্চলে যে হাজার বর্গ কিলোমিটার চিনা বাহিনী অধিকার করে নিল, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার হয় নিশ্চুপ, নয় উদাসীন— যেন কিছুই হয়নি। একই অঞ্চলের পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে দুই ভিন্ন দেশের আগ্রাসন, তবু এত প্রকাশ্য এবং স্পষ্ট দ্বিচারিতা?

কেন এই দ্বিচারিতা, সেটা বুঝতে বিদেশনীতির দিকে তাকালে চলবে না, অন্তর্দেশীয় নীতিই বুঝিয়ে দেবে। বর্তমান সরকারের গত আট বছরের ইতিহাসে বার বার প্রমাণিত, কূটনীতির অভিমুখটি নির্ণীত হচ্ছে ঘরোয়া রাজনীতির প্রয়োজন অনুযায়ী। দেশের অভ্যন্তরে কোনটি বিজেপির পক্ষে সুবিধাজনক, সেটাই এই আমলে কূটনীতির নির্দেশবিধি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রদর্শন থেকে দ্রুত সরে এসে উরি অভিযান, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বাতিলের পথ ধরে বালাকোট পর্ব, এবং ক্রমান্বিত উষ্ণায়িত বার্তাবিতরণ তার প্রমাণ। এই সমগ্র পর্বে পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ যেমন সত্য, ভারত সরকারের ক্রমাগত পাকবিরোধিতার সুর চড়ানোও তেমনই সত্য।

অভ্যন্তরীণ জাতীয়তাবাদের জন্য বিদেশনীতির সুরটি স্থির করার বিপদ বিরাট: কূটনৈতিক অভিমুখটির দীর্ঘকালীন ক্ষতি ঘটতে পারে। কূটনীতির মূল মন্ত্রই হল, দীর্ঘকালীন ক্ষতি যাতে না হয়, সে দিকে পদচারণা। চিনের আগ্রাসনের বিষয়ে ঠিক তথ্য না জানানো, কূটনীতির স্তরে চিন-অধিকৃত অঞ্চল নিয়ে বেজিং-এর সঙ্গে কোনও আলোচনার পরিবেশই না তৈরি করার মধ্যেও ঘরোয়া রাজনীতিতে বিজেপির নিজেকে নিরাপদ রাখার প্রচেষ্টাটি স্পষ্ট। এ নিয়ে বেশি কথা বাড়ালে সরকারের দুর্বলতাই প্রকাশিত হয়ে পড়বে, এটাই সম্ভবত আশঙ্কা। জাতীয় ক্ষতির মূল্যেও দলীয় স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা যাঁরা করেন, এবং তা সত্ত্বেও অন্যান্য দেশের যথেচ্ছ সমালোচনা করেন, কূটনীতিতে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠবেই। এখনই না হলেও, ক্রমশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Government PM Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy