—প্রতীকী ছবি।
এক বেসরকারি বহুজাতিক পরিবহণ সংস্থা ঘোষণা করল, তারা অল্প দিনের মধ্যেই কলকাতায় বাস পরিষেবা আরম্ভ করবে। সে বাতানুকূল বাসে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করা যাবে না; ফোনের অ্যাপে দেখে নেওয়া যাবে বাসের অবস্থান; টিকিটও কাটা যাবে সেই অ্যাপেই। ইতিমধ্যেই দেশের একাধিক শহরে চালু হয়ে গিয়েছে সংস্থাটির এই বাস পরিষেবা। গণপরিবহণের ক্ষেত্রে এমন ব্যবসায়িক উদ্যোগ অতি স্বাগত। কলকাতার মতো শহরে যাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন, তাঁদের একটি বড় অংশ তা করেন নিতান্ত অপারগ হয়ে— ভাঙাচোরা ভিড়ে ঠাসা বাসে যাতায়াতে অনীহাই তাঁদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ব্যয়বহুল, ঝামেলাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। বেশির ভাগ অফিসযাত্রীর ব্যক্তিগত গাড়িতেই যাত্রী-সংখ্যা সচরাচর এক জন, ফলে মাথাপিছু রাস্তা দখলের হিসাবে ব্যক্তিগত গাড়ি তুলনাহীন। তাতে যানজট বাড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়ে দূষণের মাত্রাও। বিশ্ব-উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করা অপরিহার্য। কিন্তু, নানাবিধ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য বিকল্প না পাওয়া অবধি বেশির ভাগ মানুষই গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করেন না। এই বাস পরিষেবাটি তেমনই এক গ্রহণযোগ্য বিকল্প। তাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, নির্দিষ্ট সময়ে যাত্রার সুবিধা আছে, ভিড় নেই। অন্য দিকে, ব্যক্তিগত গাড়ির তুলনায় তাতে খরচও অনেকাংশে কম। ফলে, আশা করা যায় যে, কলকাতার রাস্তায় এই বাস পরিষেবা চালু হলে অনেকের কাছেই তা গ্রহণযোগ্য স্বাগত বিকল্প হয়ে উঠবে।
কিন্তু, তার পাশাপাশিই থেকে যাবে একটি দীর্ঘশ্বাস। অনতি-অতীতেও গণপরিবহণের ক্ষেত্রে কলকাতা ভারতের অন্যতম সেরা শহর ছিল— মুম্বই ব্যতিরেকে আর কোনও শহরে এমন বিস্তৃত, নিয়মিত এবং নাগালের মধ্যে খরচে গণপরিবহণ ব্যবস্থা ছিল না। সরকারি ও বেসরকারি বাস তো বটেই, মনে রাখা জরুরি যে, গোটা দেশের মধ্যে কলকাতাতেই প্রথম চালু হয়েছিল মেট্রো পরিষেবা। সেই সার্বিক গণপরিবহণ ব্যবস্থা মারা পড়ল রাজনীতির অপরিণামদর্শী জনমোহনের খেলায়। সেই দোষে যেমন বর্তমান শাসকরা দোষী, তেমনই পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারও দায়ী। নেতারা জেদ করলেন, তাঁরা বাসের ভাড়া বাড়াবেন না। ডিজ়েলের দাম বেড়ে গেল বেশ কয়েক গুণ, বাস কেনার ঋণের মাসিক কিস্তি ক্রমে ঊর্ধ্বমুুখী হল, কিন্তু কলকাতা শহরের বাসভাড়া হয় বাড়ল না, নচেৎ বাড়ল যৎসামান্য, প্রয়োজনের চেয়ে ঢের কম। অন্য শহরের তুলনায় মেট্রো ভাড়াও বাড়ল না, ফলে পরিষেবাও রয়ে গেল ন্যূনতম স্তরে। নেতারা মনে করলেন, এতে বুঝি সাধারণ মানুষের খুব উপকার হল। তাঁরা ভাবলেন না, যথেষ্ট লাভ না হলে ক্রমেই অনেক বাসমালিক ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন, শহরের রাস্তায় বাসের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান হবে। ঠিক তাই হল। এখন কলকাতায় বহু মানুষকে যাতায়াতের জন্য বাধ্যত নির্ভর করতে হয় অটোরিকশার উপর— যে দূরত্ব বাসে এক টিকিটে যাওয়া যেত, সেই দূরত্ব পাড়ি দিতে হয়তো তিন বার অটো বদলাতে হয়। আলোচ্য নতুন বাস পরিষেবাটিও শহরে গণপরিবহণের ব্যয় বাড়াবে— যাঁরা সেই বাসে চড়বেন না, পরোক্ষ ভাবে তাঁদের উপরও সেই বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে। নেতারা যদি গরিব মানুষকে ‘রক্ষা’ করার জন্য এত উদ্গ্রীব না হতেন, হয়তো তাঁদের খানিক উপকারই হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy