প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তীব্র গরমে শ্রমিকরা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন, তার জন্য নির্দেশিকা জারি করল বিধানসভা এবং কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্র এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও প্রতি বছরই সতর্কবার্তা প্রকাশ করে থাকে। চড়া রোদ এড়াতে সকালে এবং সন্ধ্যায় কর্মদিবস ভাগ করে দেওয়া, কর্মস্থলে যথেষ্ট জল, ওআরএস প্রভৃতির জোগান রাখা, টুপি-ছাতার যথাসাধ্য ব্যবহার, একটানা রোদে না থেকে মাঝেমাঝেই ছায়ায় বিশ্রাম, হিট স্ট্রোকের চিহ্নগুলি জানা এবং দ্রুত চিকিৎসা, এমন নানা বিধি-নিষেধের কথা জানানো হয়েছে। নির্মাণ এবং খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সতর্কতার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এই নিয়মগুলি জরুরি, মানার প্রয়োজন সম্পর্কেও দ্বিমত নেই। প্রশ্ন হল, ভারতের নব্বই শতাংশ কর্মী অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত। অনেকেই স্বনিযুক্ত, দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল। ফলে বিধি মানার নিশ্চয়তা কতটুকু? এ বিষয়ে শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে প্রচারই বা কতখানি হচ্ছে? জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গরম আরও তীব্র, দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বিশ্বের সত্তর শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের ঝুঁকি বেড়েছে, জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন। এক দিকে তাপমাত্রার বৃদ্ধি অতীতের সব নজির ভাঙছে— এ বছরের জানুয়ারি মাসটি ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম। অন্য দিকে, কেবল শ্রমের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে তাপ-আক্রান্ত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। মানব দেহের অভ্যন্তরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে গেলে গুরুতর অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যু অবধি হতে পারে।
যে-হেতু বিশ্বের উষ্ণতর দেশগুলিতে দারিদ্র বেশি, তাই কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, স্বনিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। তাপ থেকে রক্ষার বিধি তাঁদের কাছে পৌঁছনো যত কঠিন, তাঁদের পক্ষে সেগুলিকে মানাও তেমনই দুঃসাধ্য। আইএলও-র প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকায় কৃষিজীবীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কিডনির অসুখ দ্রুত বেড়েছে, যার কোনও আপাত-কারণ মিলছে না। সংস্থার আন্দাজ, কর্মস্থলে অতিরিক্ত গরমের জন্য কিডনি-জনিত অসুখে আক্রান্ত আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ। ভারতে নির্মাণ শ্রমিকদের এক আলোচনায় জানা গিয়েছে, মহিলা-শ্রমিকরা বিশেষ ভাবে আক্রান্ত, কারণ কর্মক্ষেত্রে শৌচালয় না থাকায় তাঁরা জল কম খেতে অভ্যস্ত। কাজের সময় পরিবর্তন করে সকালে এবং সন্ধ্যায় কর্মদিবস বিভাজন করায় মহিলাদেরই সঙ্কট বেশি, কারণ তাঁরা ভোরে ও সন্ধ্যায় বাড়ির কাজ করেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা (২০২২) দেখিয়েছিল যে, কম জল খাওয়া এবং অত্যন্ত গরমে বাইরে কাজ করা তামিলনাড়ুর গর্ভবতী মেয়েদের গর্ভ নষ্ট হওয়া, এবং কম ওজনের সন্তান প্রসবের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছে।
অতিরিক্ত উষ্ণতার জন্য শ্রমজীবী, কৃষিজীবী মানুষের কাজের সময় কমছে, ফলে রোজগার কমছে, অথচ স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা কেবল স্বাস্থ্যবিধি জারি করে হবে না। শ্রমিক-ঠিকাদার ও সরকারি-বেসরকারি নিয়োগকারীদের কাজে নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। আক্ষেপ, চারটি নয়া শ্রম কোড শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধিকে আগের তুলনায় অনেক শিথিল করেছে। শ্রমিকের জীবনের ঝুঁকি, শ্রমের উৎপাদনশীলতা হ্রাস, এই দুই সঙ্কটই কি এখনই মনোযোগ দাবি করে না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy