পশ্চিমবঙ্গ সরকার রেরা-কে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকল্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করতে উদ্যোগী হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত আবাসন প্রকল্পের ক্রেতাদের ক্ষেত্রে। কারণ, কেন্দ্রের আবাসন নিয়ন্ত্রণ আইন (আরইআরএ বা রেরা) যে মাপের জমি বা আবাসনে সাধারণত কার্যকর হয়, তার থেকেও ছোট জমি বা আবাসনকে এই আইনের আওতায় আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। ৫০০ বর্গমিটারের বড় জমি বা আটটি ফ্ল্যাট-সমেত বড় আবাসন রেরা-র আওতায় পড়ে। কিন্তু অনেক সময়েই বেশি সমস্যায় পড়েন ছোট সম্পত্তির ক্রেতারা। তার জন্যই তিন কাঠার বেশি জমি এবং ছ’টির বেশি ফ্ল্যাটসমেত আবাসনকেও রেরা-র আওতায় আনার পরিকল্পনা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই পদক্ষেপের ফলে সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে ছোট সম্পত্তির ক্রেতারা নির্মাতাদের বিরুদ্ধে চুক্তি খেলাপের অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখার সুযোগ থাকবে। রয়েছে অন্যান্য বিধিও। যেমন, রেরা আইনের শর্ত অনুযায়ী, যোগ্য সমস্ত প্রকল্পকে বাধ্যতামূলক ভাবে রাজ্য রেরা কর্তৃপক্ষের কাছে নথিভুক্ত হতে হবে। না হলে সেই সম্পত্তির বিপণন, বুকিং কিংবা বিক্রি করা যাবে না। নির্মাতাদের তিন মাস অন্তর প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্য দিতে হবে ওয়েবসাইটে। আর, প্রকল্প নথিভুক্তির সময় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের শুরু ও শেষের তারিখও ঘোষণা করতে হবে ডেভলপার বা প্রোমোটারকে। দেরিতে হলেও রাজ্যে এই কেন্দ্রীয় আইন চালু হওয়ায় নিঃসন্দেহে উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ।
নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করা, অনুমোদিত নির্দিষ্ট নকশা থেকে বিচ্যুত হওয়া, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার মতো চুক্তিভঙ্গের বহুবিধ অভিযোগ ওঠে অসাধু প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে। তাদের দৌরাত্ম্য রুখতে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার চালু করে আবাসন নিয়ন্ত্রণ আইন। ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই আইনে নানান নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। এই আইনের নির্দেশ অনুযায়ী, সব নতুন আবাসন প্রকল্পকে নথিভুক্ত হতে হবে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি (আরইআরএ)-র কাছে। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রের এই আইন চালু না করে ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজ়িং ইন্ডাস্ট্রি রেগুলেশন অ্যাক্ট (এইচআইআরএ বা হিরা) নামে আলাদা একটি আইন চালু করে ২০১৮ সালে। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গের ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজ়িং ইন্ডাস্ট্রি রেগুলেশন অ্যাক্ট-কে অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেয়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার রেরা-কে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকল্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করতে উদ্যোগী হয়েছে, তা ভাল খবর। কিন্তু, আইনের পাশাপাশি দুর্নীতির রাজনৈতিক অর্থনীতিকেও চিহ্নিত করতে হবে। কেন ছোট-বড় নানান প্রোমোটার ক্রেতাদের ঠকাতে পারেন, সেই প্রশ্নের উত্তরটি রাজনীতিরঞ্জিত। সেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টাও রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পথেই করতে হবে। আইন থাকা জরুরি, সেই আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকাও বাঞ্ছনীয়। কিন্তু, প্রতিটি বিবাদের সমাধানেই যদি আইনের দ্বারস্থ হতে হয়, তবে প্রক্রিয়াটি অতি দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, আইনের খাঁড়াটি থাকা দরকার নেতিবাচক প্রণোদনা হিসাবে। কিন্তু, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে নিশ্চিত করা দরকার যাতে এই জাতীয় প্রতারণার ঘটনা না ঘটে। যারা অন্যায় করে, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সংস্কৃতিটি দূর করতে পারলেই এই কাজ বহুলাংশে সম্ভব হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy