Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Ayodhya

নিরালোক

বিজ্ঞানীরা কী নিয়ে কাজ করবেন, কোন বিজ্ঞান-গবেষণা বা নির্মাণে সময় ও শ্রম দেবেন, সে নিয়ে সাধারণের কথা বলা সাজে না, তা বিজ্ঞানীদেরই ব্যাপার।

অযোধ্যায় নির্মীয়মাণ রামমন্দির।

অযোধ্যায় নির্মীয়মাণ রামমন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ ০৭:১৬
Share: Save:

বিজ্ঞানীরা অযোধ্যায় নির্মীয়মাণ রামমন্দিরের ট্রাস্টিদের বুঝিয়েছেন, কোন উপায় অবলম্বন করলে ২০২৪ সালে রামনবমীর দিন প্রথম সূর্যরশ্মি ঠিক রামলালার কপালে এসে পড়বে। দেশের বিজ্ঞান গবেষণাক্ষেত্রের অগ্রণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’ (সিএসআইআর) টুইটে ফলাও করে জানিয়েছে তা, আর সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গিয়েছে খুঁটিনাটি: এ আসলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জটিল গণনা— একটি নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের অবস্থান নির্ণয়— এবং অপ্টো-মেকানিক্যাল প্রযুক্তিতে আয়না, লেন্স ইত্যাদির ব্যবহারে এমন এক বন্দোবস্ত তৈরি, যাতে রামনবমীর দিন প্রথম আলো স্পর্শ করবে দেববিগ্রহকে। প্রতি বছর সূর্যের অবস্থান পরিবর্তন অনুযায়ী সেই যান্ত্রিক ব্যবস্থাও স্বয়ংক্রিয় ভাবে পাল্টে নেবে নিজেকে, যাতে কোনও বছর রামনবমীতেই রামলালার উপরে সূর্যালোক এসে পড়া ব্যর্থ না হয়।

কিন্তু এ-ই কি বিজ্ঞানীদের কাজ? টুইট করে সগর্বে বলার মতো কীর্তি? সিএসআইআর-এর মতো দেশের অগ্রগণ্য গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা কি এ ধরনের কাজের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সুনাম কুড়োতে বা পরিচিত হতে চাইবেন? এ সব প্রশ্ন ওঠা অসঙ্গত নয়। প্রশ্ন উঠেছেও, বিরোধী দলের সাংসদ অভিযোগ করেছেন সরকারি তথা জনগণের টাকার এ-হেন অপব্যবহারের বিরুদ্ধে। সিএসআইআর কাজ করে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে— রাজনীতি নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত বিজ্ঞান-নীতি তার নিয়ামক। অথচ রামমন্দির কেন্দ্রে শাসক দল বিজেপির রাজনীতির মূর্তিমান প্রতিরূপ, আর তারই অতি নগণ্য একটি কাজে সিএসআইআর-এর গবেষক-বিজ্ঞানীদের সময়, মেধা ও শ্রমের ব্যবহার করা হল। যাঁদের ব্যস্ত থাকার কথা বৃহত্তর লক্ষ্যে— গবেষণার প্রসারে, মানুষের কল্যাণে, বিজ্ঞানেরই স্বার্থে— তাঁরা মগ্ন দেববিগ্রহ আলোকিত করার কাজে। নির্বাচন ও ভোটারের মন জিততে এমন কাজ রাজনৈতিক দল ও সরকারের কাজে লাগবে বটে, কিন্তু বিজ্ঞানের জন্য এ কি খুব সুস্থ বিজ্ঞাপন?

বিজ্ঞানীরা কী নিয়ে কাজ করবেন, কোন বিজ্ঞান-গবেষণা বা নির্মাণে সময় ও শ্রম দেবেন, সে নিয়ে সাধারণের কথা বলা সাজে না, তা বিজ্ঞানীদেরই ব্যাপার। সহকর্মী, অর্থ ও পরিকাঠামো-দাতা এবং সরকারি বিজ্ঞানসংস্থার ক্ষেত্রে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরাই এ ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবিদার। কিন্তু কোন কাজটি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পরিসরকে উন্নততর করছে, এ সিদ্ধান্ত তাঁরা গোড়াতেই নিতে পারেন। সিএসআইআর-এর টুইটের পর বহু বিজ্ঞানী একত্রে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন, তার মূল কথাটিই হল, রামমন্দিরে যে যান্ত্রিক প্রযুক্তি গবেষকেরা বানাচ্ছেন তা স্নাতক স্তরের কোনও বিজ্ঞান-ছাত্রের হাত মকশো করার জন্য উপযুক্ত; সিএসআইআর-এর প্রথিতযশা বিজ্ঞানী-গবেষকদের কাছে বরং এমন অবদান কাম্য, যাতে এই পৃথিবীতে মানুষের জ্ঞান চর্চার বহতা ধারাটি পুষ্ট ও বেগবতী হয়। রামনবমীতে রামলালার গায়ে প্রথম আলোকরেখাটি এসে পড়লে দেবভক্তেরা গলদশ্রু হবেন নিশ্চয়ই, কিন্তু তখন আর বিজ্ঞানীদের মনে থাকবে না, রাজনীতির কারবারিরাই প্রচারের সবটুকু আলো নিয়ে যাবেন। বিজ্ঞানে অর্থ অনুদান সম্মাননা সবই ক্রমে নিবে আসা এই দেশের উপরে বরং বিজ্ঞানীরা আলোকপাত করলে ভাল হত না?

অন্য বিষয়গুলি:

Ayodhya Ram Mandir Science Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy