Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Mini Bus Accident

দুর্ঘটনার দায়

মিনিবাস দুর্ঘটনার সময় নীচে লাগানো একটি পাত ভেঙে যাওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে উল্টে যায় বাসটি। ছিল অন্যান্য সমস্যাও।

A Photograph of  a mini bus accident

নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বাসটির এমন দশা বলে উঠেছে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঘটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৭
Share: Save:

সম্প্রতি শহরের বুকে মিনিবাস দুর্ঘটনায় দুই বাস আরোহীর মৃত্যুর ঘটনাটি নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। এই ঘটনায় আহতও হয়েছেন বেশ কয়েক জন। এবং এই গোত্রের দুর্ঘটনার পিছনে যে কারণটি প্রধানত দায়ী হয়ে থাকে, তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে, এ ক্ষেত্রেও গাফিলতি সেখানেই— বাসের রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। দেখা গিয়েছে, বাসের কিছু জায়গায় লোহার অংশ ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার সময় নীচে লাগানো একটি পাত ভেঙে যাওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে উল্টে যায় বাসটি। ছিল অন্যান্য সমস্যাও। রিসোলিং করা চাকা ব্যবহার করা হচ্ছিল, প্রায় সম্পূর্ণ ক্ষয়ে গিয়েছিল ব্রেক প্যাডও। ছিল স্টিয়ারিং-এরও একাধিক সমস্যা। গণপরিবহণের নিয়ম অনুযায়ী, আগামী বছর বাসটির বাতিল হওয়ার কথা। তার আগে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বাসটির এমন দশা বলে উঠেছে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঘটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ সূত্রে এ-ও জানা যায়, পথে নামার এক বছরের মধ্যে, ২০১০ সালে দুর্ঘটনায় পড়ে সেটি। সেই সময়ও এর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মুহূর্তে বাসটির বিরুদ্ধেই আদালতে ৭৪টি মামলা দায়ের রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাসের মালিক এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেননি।

এই দুর্ঘটনার দায় কার? সর্বাগ্রে, অবশ্যই বাস মালিকের। শহরে এমন বহু বাস চলাচল করে, যেগুলির পথ চলার মেয়াদ প্রায় উত্তীর্ণ হয়ে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাসমালিকরা সেই সব বাসের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বন্ধ করে দেন। যে গণপরিবহণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে বহু মানুষের জীবন জড়িত, সে ক্ষেত্রে এমন গাফিলতি ক্ষমাহীন অপরাধ। অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে বাস চালকদের কারণেও। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকা, ট্র্যাফিক আইন মেনে না চলা, অযথা রেষারেষিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে বিপন্ন হয় বাস আরোহী, তথা পথচারীদের প্রাণ। বহু ক্ষেত্রে এমনকি চালকের অভাবে খালাসিদের দিয়েও বাস চালানো হয়ে থাকে। দায় এড়াতে পারে না পুলিশও। আদালতের ৭৪টি মামলা ছাড়াও পুলিশের কাছেও ২৬টি কেস রয়েছে বাসটির। এমন ‘স্বভাবসিদ্ধ’ নিয়মভঙ্গকারী কী করে পুলিশের নজর এড়িয়ে শহরের রাস্তায় চলাচল করে, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও প্রয়োজন। অন্য দিকে, নিজ অঞ্চলের বিভিন্ন যানবাহন কী অবস্থায় রয়েছে, তার যাবতীয় তথ্য সংগৃহীত রাখার দায়িত্ব রিজনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসের (আরটিও)। কিন্তু অভিযোগ, ফিটনেস সার্টিফিকেট, অথাৎ বাসটি রাস্তায় চলার মতো অবস্থায় আছে কি না তার শংসাপত্র প্রদানের ক্ষেত্রে বাসের সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব পায় ঘুষের অঙ্কটি— টাকা দেওয়া হলে সার্টিফিকেট এমনিই মেলে। অর্থাৎ, দুর্ঘটনার দায় কার, সেই খোঁজ করলে কার্যত কাউকেই বাদ দেওয়ার উপায় থাকে না।

তবে, অন্য দিকের বক্তব্যটিও প্রণিধানযোগ্য। বাসমালিকদের বহু দিনের দাবি, বর্ধিত তেল ও আনুষঙ্গিক ব্যয়বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া না বাড়ালে যথাযথ পরিষেবা চালু রাখা সম্ভবপর হচ্ছে না। তাঁদের এই দাবি কতখানি যুক্তিসঙ্গত, সে বিষয়ে রাজ্য পরিবহণ দফতরের একটি যথোপযুক্ত মূল্যায়নের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রশাসনের ‘জনদরদি নীতি’-র জেরে বহু দিন ধরেই বাসভাড়া বৃদ্ধি না পাওয়ায়, শহরের বহু রুটের বাস গিয়েছে কমে। বাধ্য হয়েই মানুষকে বিকল্প পরিষেবা হিসাবে অটো-নির্ভর হতে হচ্ছে। যে বাসগুলি চলছে, সেগুলিতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব প্রকট এবং ভয়ঙ্কর। যে কলকাতা এক সময় সস্তা গণপরিবহণের কারণে দেশের মধ্যে উদাহরণযোগ্য ছিল, আজ তার গণপরিবহণের পরিকাঠামো ধ্বংসের মুখে। একে সার্বিক ভাবে পুনরুজ্জীবিত করার দায় সরকারেরই। না হলে, আগামী দিনে এমন দুর্ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা। এবং সেই অবিবেচনার মাসুল প্রাণ দিয়ে গুনতে হবে নাগরিককে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident Road Accident lack of maintenance Mini Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy