কংগ্রেস কর্নাটকে লড়ার মতো লড়েছে। ফাইল ছবি।
সাম্প্রতিক অতীতের যাবতীয় অভিজ্ঞতাকে স্মরণে রেখেও বলতে হয়, কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির এই পরাজয় কোনও জাদুস্পর্শে— যেমন, ভিন্ন কোনও রাজ্যের অতিথিশালায় বিধায়ক-সমাবেশে, জাদু-সুটকেসের হাতবদলে, অথবা মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিংহ কোশিয়ারির মতো কোনও ‘এক্তিয়ারবহির্ভূত’ সিদ্ধান্তে— জয়ে পরিণত হবে, তেমন সম্ভাবনা প্রবল নয়। দেশশাসনের কথা ভুলে প্রধানমন্ত্রী কর্নাটকে পড়ে থেকেছেন— মণিপুরের আগুনও তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি। ‘রেউড়ি রাজনীতি’-র বিরুদ্ধে স্বঘোষিত জেহাদ ছেড়ে ইস্তেহার জুড়ে পাইয়ে-দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিলিয়েছিল বিজেপি। তার পরও এহেন ভরাডুবির কারণ কী, জাতীয় রাজনীতি নিঃসন্দেহে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে। কর্নাটকের রাজনীতিতে ‘স্থিতাবস্থা-বিরোধিতা’ রয়েছে— ১৯৮৫ সালের পর রাজ্যে কখনও ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় ফেরেনি। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ৬৪টি আসন বেড়েছিল। তবে, শুধু স্থিতাবস্থা-বিরোধিতার যুক্তিতে কংগ্রেসের এই বিপুল জয়ের ব্যাখ্যা হয় না। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ কংগ্রেসের প্রচারে গুরুত্ব পেয়েছিল, তারও প্রভাব পড়েছে এই ফলাফলে— বিশেষত, গত বছর এক ব্যবসায়ীর আত্মহত্যায় এক বিজেপি বিধায়কের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাটি রাজ্য রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। অন্য দিকে, বিজেপি একাধিক প্রবীণ নেতাকে ছেঁটে ফেলায় জাতপাতের রাজনীতির অঙ্কে তার প্রভাব পড়েছে— টিকিট না পেয়ে জগদীশ শেট্টার ও লক্ষ্মণ সাবাদির মতো নেতারা বিজেপির দিকে লিঙ্গায়েত-বিরোধিতার আঙুল তুলেছেন। এবং, এই নির্বাচনে জেডি(এস) বহুলাংশে তার গুরুত্ব হারিয়েছে, ফলে নির্বাচনটি কংগ্রেস-বিজেপির দ্বিমুখী দ্বৈরথ হয়ে উঠেছে।
এই কারণগুলির পাশাপাশি আরও দু’টি কারণ রয়েছে, যা শুধুমাত্র কর্নাটক-সাপেক্ষ নয়। প্রথম কারণটি হল, কংগ্রেস কর্নাটকে লড়ার মতো লড়েছে। সেই লড়াইয়ের এক দিকে রয়েছে দলের রাজ্য সভাপতি ডি কে শিবকুমারের ভূমিকা— গত দফায় জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট সরকার ভেঙে যাওয়ার পরে যিনি ২০২৩-এর কথা মাথায় রেখে রাজ্যে দলীয় সংগঠন মজবুত করার দিকে জোর দিয়েছিলেন; এবং অন্য দিকে রয়েছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রার ২২ দিন ছিল এ রাজ্যেই, তার চেয়েও বড় কথা হল, এই দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা সম্ভবত নাগরিক-মানসে তাঁর সম্পর্কে কিছু প্রত্যয় তৈরি করতে পেরেছে বলে এই নির্বাচনের ফল থেকে অনুমান করা যায়। দু’টি বিষয়ই ভারতের বিজেপি-বিরোধী রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে একটি বার্তা বহন করে— রাজনীতি করতে হলে সংগঠনে জোর দেওয়ার, এবং পথে নেমে জনসংযোগ করার কোনও বিকল্প নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার রাজনীতি দিয়ে সেই কাজ হয় না।
অন্য দিকে রয়েছে বিজেপির অত্যধিক মোদী-শাহ নির্ভরতা। সমগ্র দক্ষিণ ভারতে কর্নাটকই বিজেপির সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু, সে রাজ্যের বিজেপি-রাজনীতি কখনও হিন্দি বলয়ের উগ্র হিন্দুত্ববাদের সূত্রে পরিচালিত হয়নি, বরং রাজ্যের নিজস্ব প্রশ্নগুলিকে কেন্দ্র করে ঘুরেছে। এই দফায় নরেন্দ্র মোদীর উপর ভর করে বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টায় বিজেপি কর্নাটকে তার অভিজ্ঞানটি হারিয়েছে, চরিত্রে হয়ে উঠেছে উত্তর ভারতীয়। তার দু’টি নিদর্শন হল, মুসলমানদের জন্য অনগ্রসর শ্রেণির কোটা বাতিল করা, এবং বজরংবলী-কেন্দ্রিক প্রচার। কেউ বলতেই পারেন যে, রাজ্যে বিজেপি শেষ অবধি যতগুলি আসন পেল, মোদীর প্রচার ব্যতীত এই বার সেটুকুও সম্ভব হত না, দলের রাজ্যস্তরের নেতৃত্ব এমনই দুর্বল ছিল। তবে সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও ঠিক যে, পশ্চিমবঙ্গের পরে কর্নাটক দেখাল, রাজ্য নেতৃত্ব মজবুত না হলে কেবলমাত্র মোদীর ভরসায় নির্বাচন পার করা কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy