—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
জগতে দরিদ্ররূপে ফিরি দয়াতরে: বলেন যে দেবতা, দয়া না দেখালে তিনি বিদায় নেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাঙালি পড়ে আসছেন, এবং তার পর দশকের পর দশক ধরে পূজারাধনা কিংবা পুজোৎসবের নামে একই দয়াহীনতার প্রদর্শনী করে আসছেন। এ বছরও তার বহুবিধ দৃষ্টান্ত। বহু পুজো-কমিটির কার্যকলাপ পরিষ্কার করে দেয়, পুজোর কাজ যাঁরা করেন, প্যান্ডেল যাঁরা বাঁধেন, সেই সব শ্রমিকের প্রাণের মূল্য পুজো-মণ্ডপের তুলনায় কতটাই কম! সেরা পুজোর পুরস্কার জেতার লোভে মণ্ডপ, প্রতিমা, প্রতিমার গয়না, এমনকি দর্শনার্থীদের বিমা করানোর ক্ষেত্রে বিমার অঙ্ক নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। অথচ, মণ্ডপ তৈরির কারিগর যাঁরা, সেই শ্রমিকদের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হয় না ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও। তাঁদের জন্য বরাদ্দ হয় না কোনও বিমা। পুজো-কমিটির কাজ যাঁরা করেন, তাঁরা প্রশ্ন করেন না, দুর্ঘটনার আশঙ্কায় যেখানে দর্শনার্থীদেরও বিমা করানো হচ্ছে, সেখানে প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করা শ্রমিকদের এই মানবিকতাটুকু কেন দেখাতে পারে না কমিটি? অন্য দিকে জানা যায়, শ্রমিকদের কাজে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যে-হেতু বেশি, টাকাও দিতে হয় যখন-তখন, তাই বিমা সংস্থাগুলি নাকি এই বিষয়ে প্রচারবিমুখ।
প্যান্ডেল থেকে বহুতল— যে কোনও নির্মাণকাজে অবিচ্ছেদ্য এই শ্রমিকেরা। নির্মাণস্থলে বিপদ এড়াতে বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ অবশ্যকর্তব্য। যেমন, শ্রমিকদের সেফটি হেলমেট, সেলুলয়েড লেন্সের চশমা, চামড়া বা রবারের দস্তানার মতো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া জরুরি। যাঁরা বহুতলে কাজ করেন, তাঁদের জন্য জরুরি সেফটি বেল্ট এবং নেট-এর মতো জিনিসপত্রেরও। শুধু তা-ই নয়, কোনও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যাতে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সাহায্য পাওয়া যায়, রাখার কথা তেমন ব্যবস্থাও। শ্রমিকের এ-হেন কল্যাণ ও নিরাপত্তার মান নির্ধারণ করে সরকারই। নিয়োগকর্তা তা অনুসরণ করেন যখন নজরদারি কড়া হয়, অন্যথায় তা এড়িয়ে চলেন। যে দেশে শ্রমিকের অভাব নেই, সেখানে প্রাণের ঝুঁকি না নিলে কাজও জোটে না। সম্প্রতি ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের। সুরক্ষা-সরঞ্জামের অভাবেই ঘটেছে এই কাণ্ড, অভিযোগ। শ্রমিকমৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত সংস্থা বা ঠিকাদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে— এমনটা অবশ্য কোনও বছর দেখা যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ থেকেও বঞ্চিত হয় মৃতের পরিবার।
শ্রম বিধি (২০২১) আইনের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়গুলি ‘পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য’ শিরোনামে উল্লেখ করা আছে। সেখানে চুক্তি-শ্রমিকদের স্থায়ী-শ্রমিকদের সঙ্গে বেতন বৈষম্য না থাকা এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত না হওয়ার কথাও উল্লিখিত রয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ পালিত হয় না। শ্রম আইন লঙ্ঘিত হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার কথা সরকারেরই। বিমার ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে কি না, সেটা দেখার কথাও প্রশাসনের। রুজি-রুটির খোঁজে আসা এই শ্রমজীবী মানুষগুলির যে অন্তত বেঁচে থাকার অধিকারটুকু আছে, দেবীর পুজোয় যে মানবপ্রাণ মূল্যহীন হওয়া উচিত নয়— তা গণতান্ত্রিক সরকার বুঝবে না, গণতন্ত্রের নাগরিক তো নয়ই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy