Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Swati Maliwal

নির্যাতন রাজনীতি

পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র রাজধানীতেই ২০২১ সালে মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসার প্রায় চোদ্দো হাজারটি অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছিল।

দিল্লির ক্ষেত্রে মেয়েদের সুরক্ষা-চিত্রটি বিশেষ উদ্বেগজনক।

দিল্লির ক্ষেত্রে মেয়েদের সুরক্ষা-চিত্রটি বিশেষ উদ্বেগজনক। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩৩
Share: Save:

দিল্লিতে যদি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনই নিরাপদ না হন, তা হলে বাস্তব পরিস্থিতি সহজে অনুমেয়—ডিসিডব্লিউ-র প্রধান স্বাতী মালিওয়ালের কথাটি যথার্থ। সম্প্রতি দিল্লি এমস-এর সামনে ভোররাতে তাঁকে এক মত্ত গাড়িচালকের কুপ্রস্তাব, প্রতিবাদ জানালে এবং অভিযুক্তকে ধরার চেষ্টা করলে গাড়ির কাচে তাঁর হাত আটকে প্রায় ১৫ মিটার টেনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা স্তম্ভিত করে দেয়। প্রাণে বেঁচেছেন স্বাতী। প্রসঙ্গত মনে পড়ে বর্ষবরণের রাতে সুলতানপুরী এলাকার অঞ্জলির কথা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ১২ কিলোমিটার গাড়ির চাকায় হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ায় কুড়ি বছরের তরুণীর মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা ছিল না। তারও বেশ কিছু দিন আগে এক যুবতীকে গণধর্ষণের পর বস্তায় মুড়ে, যৌনাঙ্গে রড ঢোকানো অবস্থায়, হাত-পা বেঁধে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল দিল্লিরই রাস্তায়। অর্থাৎ, গণধর্ষণ, নৃশংস অত্যাচার এ শহরে নতুন নয়। কিন্তু দেশের প্রথম সারির এক হাসপাতালের নিকটে খোদ মহিলা কমিশনের প্রধানের উপর আক্রমণ মেয়েদের চরম অসুরক্ষিত অবস্থার সঙ্গে তাদের প্রতি সমাজের এক শ্রেণির হিংস্র আচরণের যে নমুনা তুলে ধরল, তা আতঙ্কের।

দিল্লির ক্ষেত্রে মেয়েদের সুরক্ষা-চিত্রটি বিশেষ উদ্বেগজনক। পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র রাজধানীতেই ২০২১ সালে মেয়েদের বিরুদ্ধে হিংসার প্রায় চোদ্দো হাজারটি অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছিল। অথচ, ২০১২ সালের নির্ভয়া-কাণ্ডের পর নারীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়নকে মাথায় রেখে তৎকালীন সরকারের গড়ে তোলা নির্ভয়া তহবিল আশা জাগিয়েছিল— দেশ জুড়ে নারী নির্যাতনের এই বহমান ধারায় হয়তো সচেতন ভাবে বাঁধ দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা শুরু হল। সে আশা পূরণ হয়নি। কেন্দ্রে সরকারপরিবর্তন হয়েছে, অথচ নারী নির্যাতনের একের পর এক ভয়াবহ ঘটনায় দেশের শিউরে ওঠা থামেনি। অন্য দিকে, বিভিন্ন রাজ্যে নির্ভয়া তহবিলের টাকা অব্যবহৃত থেকেছে। কোথাও আবার তহবিলের টাকায় কেনা পুলিশের টহলদার গাড়ি ছুটেছেমন্ত্রী-বিধায়কদের কনভয়ে।

তবে আশ্চর্য হতে হয়, এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার পরেও রাজনৈতিক কুনাট্য দেখে। প্রকাশ্য রাস্তায় যে ঘটনার পর প্রশাসক মহল এবং পুলিশের অবিলম্বে ফাঁকগুলি চিহ্নিত করে মেরামতে মন দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, সেই সময় তারা ব্যস্ত থাকল পারস্পরিক দোষারোপে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা দিল্লির উপরাজ্যপালের বিরুদ্ধে। তাঁর বক্তব্য, দিল্লির আইনশৃঙ্খলার দ্রুত অবনতি ঘটছে, অথচ লেফটেন্যান্ট গভর্নমেন্ট পরিস্থিতির উন্নতির পরিবর্তে নোংরা রাজনীতিতে ব্যস্ত। অন্য দিকে, বিজেপির দাবি— দিল্লি পুলিশকে কলঙ্কিত করতেই মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা বস্তুত আপ-এরই সাজানো ঘটনা। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় থাকায় কেজরীওয়ালের সঙ্গে বিজেপির মতান্তর সহজবোধ্য। কিন্তু দিল্লিতে কোনও ঘটনা ঘটলেই দায় চাপানো নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন চলবে, সেটা কি সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ? বিশেষত, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনাতেও যদি রাজনৈতিক কটুগন্ধ সঙ্গ না ছাড়ে, তবে তা সর্বাধিক দুর্ভাবনার। এই রাজনীতি সভ্য, সংবেদনশীল সমাজের মাথা হেঁট করে দেয়। মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে সর্বাগ্রে এই বিষয় থেকে রাজনীতিকে দূরে সরাতে হবে। নারী নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনা উন্নত, সভ্য সমাজের কাছে লজ্জার। এবং এই লজ্জা শুধুমাত্র দিল্লির নিজস্ব নয়, সারা দেশের। তাই সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ আর দলীয় কোন্দলের বাইরে বেরিয়ে এসে এমত ঘটনাগুলিকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসাবে মেনে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে প্রত্যেকটি দলকে। ভারত কি সেই পথে হাঁটতে প্রস্তুত?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy