Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Global Economy

অনিশ্চিত

বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা টালমাটাল হলে সেই ধাক্কা সামাল দিতে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির যে জোর থাকা প্রয়োজন, গত আট-দশ বছরে ভারত তা হারিয়েছে।

অনিশ্চয়তার অন্ধকার নিয়েই আসছে ২০২৩।

অনিশ্চয়তার অন্ধকার নিয়েই আসছে ২০২৩। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৫৯
Share: Save:

সকাল দেখে গোটা দিনের পূর্বাভাস করা যাদের অভ্যাস, ২০২২ তাদের বেজায় অবাক করেছে। অতিমারির দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ওঠার আশ্বাস দিয়ে বছরটি শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালে বৈশ্বিক আর্থিক বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ৫.৮ শতাংশ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছিল। মনে হচ্ছিল, ২০২২ সালে বৃদ্ধির নতুনতর পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতি। বছরের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে সেই আশ্বাসকে অলীক মনে হওয়াই স্বাভাবিক। বছরের গোড়ার দিকেই আরম্ভ হল মূল্যবৃদ্ধি। তাকে সামলাতে আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ বেশ কিছু বছরের শিথিল আর্থিক নীতি ত্যাগ করে সুদের হার বাড়াল, অনুসারী হল গোটা দুনিয়া। ফলে, লগ্নি পুঁজি আমেরিকামুখী হল, অন্যান্য মুদ্রার সাপেক্ষে ডলারের দাম বাড়ল, তার ধাক্কা লাগল বাণিজ্যের বাজারে। অন্য দিকে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ আরম্ভ হল। গম, ভুট্টা, সূর্যমুখী বীজের মতো বহু খাদ্যপণ্যের বাজারে এই দু’টি দেশ অন্যতম বৃহৎ রফতানিকারক— কাজেই, যুদ্ধের ফলে সেই বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হল। রাশিয়ার উপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হল পেট্রোলিয়াম ও কমোডিটির বাজারও। মূল্যবৃদ্ধি তীব্রতর হল। খাদ্যপণ্যের বাজারে এই অস্থিরতা তৈরি করল গত অর্ধশতকের মধ্যে সর্ববৃহৎ খাদ্য অনিশ্চয়তা। এবং, চিনে প্রবল বেগে ফিরে এল কোভিড অতিমারি। আপাতত অন্যত্র এই অতিমারি নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু বিমান যোগাযোগ যে-হেতু এখন স্বাভাবিক, ফলে আরও এক বার অতিমারি বৈশ্বিক হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে পুরোদস্তুর। বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থার সার্বিক ছবিটি এমনই ম্লান, এমনই আশঙ্কাজনক যে, আর্থিক বৃদ্ধির যাবতীয় পূর্বাভাস নিম্নমুখী। গোটা দুনিয়া যে এক বিপুল আর্থিক মন্দার খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কার্যত একমত। পাশাপাশি, এই বছর দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ যতই তীব্র হোক, যতই তা ঘাড়েরউপর এসে পড়ুক, সম্মিলিত ভাবে তার মোকাবিলা করতে রাজনীতি এখনও তৈরি নয়। ফলে, অনিশ্চয়তার অন্ধকার নিয়েই আসছে ২০২৩।

বছরটি ভারতকে কোথায় দাঁড় করাবে, তার কিছু আভাস ইতিমধ্যে মিলেছে। বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা টালমাটাল হলে সেই ধাক্কা সামাল দিতে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির যে জোর থাকা প্রয়োজন, গত আট-দশ বছরে ভারত তা হারিয়েছে। তার উপর, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ভারতের রফতানি গতি হারিয়েছে, কিন্তু আমদানির ব্যয় ক্রমবর্ধমান। অন্য দিকে, দেশে কর্মসংস্থানের হার নিম্নমুখী; জিডিপি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, কনজ়াম্পশন এক্সপেন্ডিচার বা ভোগ্যপণ্যের পিছনে ব্যয়ের বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। অর্থাৎ, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারের ধাক্কা সামলানোর সাধ্য ভারতের সীমিত। কিন্তু, তার পরও প্রশ্ন, বৃদ্ধির হার কতখানি কমতে পারে? বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, ২০২৩-এ ভারতীয় অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হার পাঁচ শতাংশের নীচে নেমে আসতে পারে। তবে, তখনও ভারতে দ্রুততম উন্নয়নশীল অর্থব্যবস্থা থাকবে কি না, তা নির্ভর করছে অন্য কিছু দেশের বৃদ্ধির হারের উপর— বিশেষত ইন্দোনেশিয়া। উন্নত দুনিয়ার সংবাদ তুলনায় মন্দতর। বিশ্ব-অর্থনীতির ষাট শতাংশ যে তিনটি আর্থিক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণাধীন, সেই আমেরিকা, ইউরোপ এবং চিনের সঙ্কট তীব্র। ইউরোপ ইতিমধ্যেই মন্দার কবলে, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের আর্থিক পরিস্থিতি আরও উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। বাজারের অনুমান যে, ২০২৩-এর প্রথমার্ধেই আমেরিকাও মন্দার কবলে পড়বে। চিনের অবস্থা বহুলাংশে নির্ভর করবে কোভিড অতিমারির নতুন প্রবাহ সামলাতে পারা বা না-পারার উপর। সব মিলিয়ে, ২০২৩-এর আকাশে দুশ্চিন্তার ঘন কালো মেঘ। ভারতের অর্থব্যবস্থার পরিচালনার ভার যাঁদের হাতে, তাঁদের দক্ষতা নিয়ে বাড়তি চিন্তা রইল।

অন্য বিষয়গুলি:

global economy Inflation India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy