প্রেমজ বিবাহের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের একটি ‘কো-রিলেশন’ থাকা অসম্ভব নয়। প্রতীকী ছবি।
বিবাহবিচ্ছেদ বেশি ঘটছে প্রেমজ বিবাহের ক্ষেত্রেই, খাপ পঞ্চায়েত আলো করে বসা জ্যাঠামশাইদের মুখে এমন কথা শুনলে কিঞ্চিৎ বিরক্তি সহযোগে অগ্রাহ্য করা চলে। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত যদি এমন মন্তব্য করে? সে ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখেও গোটাকয়েক প্রশ্ন করা প্রয়োজন। প্রথমত, যে বিবাহবিচ্ছেদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মন্তব্যটি করল, বিবাহটি প্রেমজ ছিল কি না, এই প্রশ্নের উত্তর সেই মামলার ক্ষেত্রে কি অপরিহার্য? বা, আদৌ প্রাসঙ্গিক? যদি তা না হয়, এমন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থাকাই কি উচিত ছিল না? বলা বাহুল্য যে, দেশের সাধারণ নাগরিকের কাছে খাপ পঞ্চায়েত আর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের গুরুত্ব সমান নয়। সেই কারণেই, আদালতের উচ্চারিত প্রতিটি কথার তাৎপর্য এবং অভিঘাত অনেক বেশি। শুধুমাত্র এই মামলার ক্ষেত্রেই নয়, অথবা এই মন্তব্যটির ক্ষেত্রেই নয়— ভারতীয় গণতন্ত্র আদালতের কাছে সুবিবেচিত বাক্সংযম প্রত্যাশা করে। অর্থাৎ, যে কথাটি না বললেও চলে, সে কথা না বলাই বিধেয়। মান্য শীর্ষ আদালত বিবেচনা করে দেখতে পারে, এই মামলাটির ক্ষেত্রে এমন কোনও পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য ছিল কি না।
তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যাক যে, বিচ্ছেদের মামলায় সংশ্লিষ্ট বিবাহটি প্রেমজ কি না, সেই বিবেচনা অত্যন্ত কেন্দ্রীয়। কিন্তু, কোনও একটি বিশেষ মামলার পরিসরে যদি একটি বৃহত্তর পর্যবেক্ষণ উচ্চারিত হয়— যেমন, যত বিবাহবিচ্ছেদ ঘটছে, তার অধিকাংশই ঘটছে প্রেমজ বিবাহের ক্ষেত্রে— তা হলে প্রথম প্রশ্ন ওঠে যে, অন্যান্য ক্ষেত্রে কী ঘটছে অথবা ঘটছে না, তা এই নির্দিষ্ট মামলাটির ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কেন? এবং, যদি বা প্রাসঙ্গিক হয়, তা হলেও বোঝা প্রয়োজন যে, এ-হেন তথ্য পাওয়া গেল কোথায়? বিবাহবিচ্ছিন্ন দম্পতির মধ্যে এমন কোনও সমীক্ষা হয়েছে কি, যাতে বিবাহটি প্রেমজ না কি পরিবারের দ্বারা আয়োজিত, সেই পরিসংখ্যান গৃহীত হয়েছে? তেমন কোনও সমীক্ষার সংবাদ গণপরিসরে অমিল। তথ্যটি যদি কোনও বিশেষ সমীক্ষা থেকে পাওয়া যায়, তবে সেই সূত্র উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় ছিল। আর, যদি তেমন কোনও সমীক্ষা না থাকে, তবে একে ‘তথ্য’ বলা চলে না— এটি ব্যক্তিবিশেষের অভিমতমাত্র। বিচারব্যবস্থার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা বজায় রেখেও প্রশ্ন করা প্রয়োজন যে, সে ক্ষেত্রে আদালতের পরিসরে এমন কোনও সার্বিক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই উচিত ছিল না কি?
তবে, প্রেমজ বিবাহের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের একটি ‘কো-রিলেশন’ থাকা অসম্ভব নয়। সেটি এই কারণে নয় যে, প্রেমজ বিবাহ বস্তটি গোলমেলে— বরং এই কারণে যে, প্রেমজ বিবাহের একেবারে মূলে রয়েছে নিজের জীবন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা। বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটিতেও এই ক্ষমতার প্রয়োজন— যাঁরা বিচ্ছেদ চান, তাঁরা নিজেদের ভাগ্যের হাতে সঁপে না দিয়ে বরং নিজের জীবনের রাশ ধরতে চান। অনুমান করা চলে, বিবাহের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ‘এজেন্সি’ যে ব্যক্তিবিশেষের থাকে, বিচ্ছেদের প্রয়োজন অনুভব করতে পারা এবং সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সচেতনতাও তাঁদেরই বেশি থাকবে। এই ব্যাখ্যায় উপনীত হওয়ার পরিসর বর্তমান মামলাটিতে আদালতের ছিল না বলেই অনুমান করা চলে। সে ক্ষেত্রে, মন্তব্যটি থেকে বিরত থাকলে অনভিপ্রেত বিতর্ক এড়ানো যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy