সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
একটা সময় ছিল যখন সমালোচনা তৈরি হত বিচারবিভাগের অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে। গণতন্ত্রের গুণ ও মান প্রত্যক্ষ ভাবে নির্ভর করে বিচারবিভাগ নামক স্তম্ভের উপর, কিন্তু শেষ অবধি তাকে তো শাসন প্রক্রিয়া থেকে দূরেই থাকতে হয়। ভারতের ক্ষেত্রে সেই দূরত্ব যেন কমে আসে বহু ক্ষেত্রে, অতিনির্ভরতা তৈরি হয় আদালতের উপর— এই ছিল সমালোচনা। ক্রমে সেই দিবসসমূহ গত হয়েছে। অতিসক্রিয়তার অভিযোগের বদলে বিচারবিভাগের সক্রিয়তার মুখপানেই গণতন্ত্রবিশ্বাসী নাগরিক তাকাতে শুরু করেছেন সুবিচার ও অধিকারের তাগিদে। এখন আবার এমন সময় এসেছে যখন বিচারবিভাগই নিজের কাজের সীমাটি অন্যদের মনে করিয়ে দেয়, বলতে বাধ্য হয় যে শাসনবিভাগের সামূহিক অকর্মণ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারবিভাগের উপর এই বিশাল পরিমাণ প্রত্যাশা স্বাভাবিক নয়, উচিতও নয়।
তেমনটাই করতে হল মহামান্য সুপ্রিম কোর্টকে— মণিপুর প্রসঙ্গে। আদালত থেকে মণিপুরকে শাসন করা যাবে না: এই তাঁদের তীক্ষ্ণ বক্তব্য। একের পর এক রায় দেওয়ার পরও সেগুলি কেন ঠিক ভাবে কাজে পরিণত করা হচ্ছে না, কেন অত্যাচারিত নাগরিকের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আরও দ্রুত এবং সংগঠিত ভাবে করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে— ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া-কে যথাসত্বর নতুন করে আধার কার্ড দিতে হবে ঘরছাড়া জনতার প্রত্যেককে, কেননা তাঁরা জাতিহিংসার ভয়াবহতায় ঘর ছাড়ার সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের আধার কার্ড সঙ্গে নিতে পারেননি, বহু মানুষের ক্ষেত্রে ঘর পুড়ে গিয়ে সে কার্ডের আর অস্তিত্বই নেই। মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ জানিয়েছে, বারংবার মণিপুরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে লাভ নেই। কাজ আসলে করতে হবে সেখানকার সরকারকেই, এবং সমস্যা হলে যেতে হবে হাই কোর্টের কাছেই, কিংবা আস্থা রাখতে হবে তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রাক্তন বিচারপতিদের কমিটির উপর— যে কমিটির শীর্ষে আছেন জম্মু ও কাশ্মীরের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গীতা মিত্তল। বিচারপতি চন্দ্রচূড় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তাঁরা বিশ্বাস করতে চান না যে ইম্ফলের হাই কোর্ট কাজ করতে অনিচ্ছুক।
কিন্তু এত মানুষের মধ্যে কে-ই বা জাতিহিংসায় নিগৃহীত গৃহহীন, কে-ই বা বেআইনি অভিবাসী, তার মীমাংসা হবে কী উপায়ে। পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা, স্বভাবতই। এই বিরাট সঙ্কট সমাধানের কোনও সহজ রাস্তা নেই, জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রশাসনকেই বুঝতে হবে কার কী পরিস্থিতি। এবং তার জন্য প্রশাসনকে সযত্ন প্রয়াসও করতে হবে নানা ভাবে। কেবল আধার কার্ড নয়, কে মণিপুরের বাসিন্দা, তা বোঝার অন্যান্য উপায় প্রশাসনের হাতে থাকা উচিত বলে মনে করেছে সর্বোচ্চ আদালত। সঙ্গে আইনজীবীদের কঠোর বার্তাও দিয়েছে, যাতে তাঁদের কেউ নিজেদের সহকর্মীদের মণিপুরের হাই কোর্টে অত্যাচারিতদের পক্ষ হয়ে দাঁড়াতে বাধা না দেন। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেছেন, প্রশাসনের উপরেই ভরসা রাখা সম্ভব। কথাটা ঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হল, মণিপুরের প্রশাসনের এমন বিপুল ব্যর্থতার পর এই তুষার মেহতা-দের এ-হেন প্রত্যয় আর আত্মশ্লাঘা আসছে কোথা থেকে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy