প্রতীকী ছবি।
শীতলখুচি পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে নাম তুলিয়া লইল। এই রাজ্যের নির্বাচনের ইতিহাসে অগৌরব ও দুর্ভাগ্যের ঘটনা নূতন নহে, কিন্তু কোচবিহারের এই স্থানটিতে শনিবারের ঘটনা সেই ইতিহাসে এক নূতন মাত্রা যোগ করিয়াছে। ইতিপূর্বে পশ্চিমবঙ্গ বহু দলীয় সংঘাত ও প্রাণহানি ঘটিতে দেখিয়াছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন প্রচারপর্বেও প্রাণহানির সংবাদ কম নহে। কিন্তু নির্বাচন চলাকালীন সশস্ত্র কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিরস্ত্র জনতার উপর গুলিচালনা ও নিধন: অভূতপূর্ব বলা চলে। এই নিহতদের কী পরিচয়, কী ধর্ম, তাঁহারা কোন দল, সমস্ত কিছুই এই ঘটনার মর্মান্তিকতার পাশে তুচ্ছ। এই রাজ্যের রাজনীতি কোন পর্যায়ে পৌঁছাইয়াছে যে ভোটের নামে তরুণ প্রাণের উপর শাসকের সশস্ত্র বাহিনীর গুলিবর্ষণ নামিয়া আসে, আপাতত সংবাদ ইহাই। ঘটনার দায় নিশ্চিত ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর। কোনও অজুহাতের আড়ালে ইহা চাপা যাইবে না। গ্রামবাসীদের সঙ্গে তেমন গুরুতর অস্ত্র ছিল না, তাঁহারা তাড়িয়া আসিলেও উত্তেজিত, এমনকি আক্রমণমুখী জনতাকে কী ভাবে নিরস্ত করিতে হয়, তাহা এমন যে কোনও বাহিনীর প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গ। গুলিচালনার আগে অনেকগুলি স্তর রহিয়াছে: লাঠি হইতে কাঁদানে গ্যাস, অনেক কিছুই। বাস্তবিক, শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির কথা ভাবিয়া তো তাঁহাদের পাঠানো হয় নাই। সহস্রাধিক কোম্পানির বাহিনী এই রাজ্যের বুকে আবির্ভূত হইয়াছে অশান্তি ও সংঘর্ষের আশঙ্কাতেই। তাঁহাদের উপর কি নির্দেশ ছিল সংঘর্ষ-মাত্র গুলি চালাইয়া নিধনের? সুতরাং দায় অবশ্যই নিরাপত্তা বাহিনীকেই লইতে হইবে, এবং/সুতরাং কেন্দ্রীয় সরকারকে। নির্বাচন কমিশন যে দায়ভাগ অস্বীকার করিতে পারে না তাহাও অনস্বীকার্য। সেই দায় স্বীকার করিয়া এই ঘটনার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রতিকার চাই: রাজ্যের তরফে দাবি থাকিল।
প্রত্যাশিত ভাবেই, সিআরপিএফ এবং বিজেপি সমর্থকদের পাল্টা যুক্তি: গ্রামবাসী ‘আক্রমণাত্মক’ হওয়ায় ‘আত্মরক্ষার্থে’ বাহিনীকে এই কাজ করিতে হইয়াছে, এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্ররোচনাতেই শীতলখুচির গ্রাম অমন মারমুখী হইয়া উঠিয়াছিল, তাই সমান দায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের। অবশ্যই, নির্বাচনকালীন সংঘর্ষ ও হিংসায় যাঁহারা কোনও রূপ ইন্ধন দিয়াছেন, তাঁহারা প্রত্যেকেই অন্যায় করিয়াছেন। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে দুই দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রীর নিন্দা প্রকাশ হইয়াছে, ‘গোলমাল দেখিলে’ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে জনতার ‘ঘিরিয়া রাখিবার’ কথা বলিবার জন্য (‘লজ্জা’, ১০/৪)। কিন্তু সেই অজুহাত দেখাইয়া জওয়ানদের গুলিচালনার অপরাধকে তিলমাত্র লঘু করা চলে না। আর, কুবাক্য এবং প্ররোচনার কথাই যদি উঠে, তবে আবারও বলা দরকার, ‘আসল পরিবর্তন’-এর ডাক দিতেছে যে বিজেপি, তাহারা আরও নিশ্চিত ভাবে সেই অপরাধে অপরাধী। এই দলের বিভিন্ন নেতা বারংবার নানা প্ররোচনামূলক উক্তি করিয়া আসিতেছেন, কেহ কেহ জনসভায় দাঁড়াইয়া হুমকি দিয়াছেন যে তাঁহারা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ‘বুক লক্ষ্য করিয়া’ গুলি চালাইবার নির্দেশ দিবেন! ইহাও স্মরণীয় যে, শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে বলিয়াছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার ক্ষমতায় আসিলে পশ্চিমবঙ্গকে পাকিস্তান বানাইয়া দিবেন। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের কী ভয়ঙ্কর প্ররোচনা এমন উক্তিতে থাকিতে পারে! এখন প্রশ্ন উঠিতে পারে, রাজ্যে ক্ষমতায় না আসিয়াও কি শ্রীঅধিকারীর দল পশ্চিমবঙ্গকে কাশ্মীর বানাইয়া দিতেছে, যেখানে জনতার উপর নির্বিচার গুলি চলিতে পারে? লক্ষণীয়, বঙ্গ বিজেপির নেতা দিলীপ ঘোষ সোৎসাহে বলিয়াছেন, এ বার গোলমাল হইলেই জায়গায় জায়গায় শীতলখুচি ঘটিবে। তাহা হইলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘেরাও’ বক্তব্য নেহাত নিমিত্তমাত্র— কেন্দ্রীয় বাহিনীর আসল উদ্দেশ্য ও বিধেয় ইহাই? বিরোধী অবস্থাতেই যাঁহাদের কণ্ঠ হইতে এমন ভয়ঙ্কর নির্লজ্জ ফ্যাসিবাদ ঝরঝর করিয়া ঝরিয়া পড়ে, শাসক হইতে পারিলে তাঁহারা কোন জনকল্যাণ করিবেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy