Advertisement
৩০ জানুয়ারি ২০২৫
PM Narendra Modi

বিনি সুতোর মালা

বিবেচনার ধরনটি অনুমান করতে ইচ্ছা হয়, কেননা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতৈক্য আছে এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মুখে সম্প্রতি শোনা গিয়েছে কিছু জোরালো মন্তব্য, যার মধ্যে কেউ যদি সংবিধান নিয়ে বিতর্ক তোলার প্রচেষ্টা দেখেন, দোষ দেওয়া যাবে না।

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩১
Share: Save:

আরও একটি সাধারণতন্ত্র দিবস গেল— যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদাত্ত আহ্বানে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন। দেশবাসীকে সংবিধানমনস্ক হতে অনুরোধ জানালেন। বললেন, জাতিগত, ভাষাগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র ভারতের অমূল্য সম্পদ, তা যেন সকল ভারতীয়কে একতার বোধে বেঁধে রাখে। এ বছর ভারতীয় সংবিধানের পঁচাত্তরতম উদ্‌যাপন— সেই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথাগুলির গুরুত্ব অবশ্যই আলাদা। ধরে নেওয়া যায়, তিনি ও তাঁর দল সেই গুরুত্ব আগে থেকে বিচার-বিবেচনা করেই বার্তাটি দিয়েছেন। বিবেচনার ধরনটি অনুমান করতে ইচ্ছা হয়, কেননা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতৈক্য আছে এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মুখে সম্প্রতি শোনা গিয়েছে কিছু জোরালো মন্তব্য, যার মধ্যে কেউ যদি সংবিধান নিয়ে বিতর্ক তোলার প্রচেষ্টা দেখেন, দোষ দেওয়া যাবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিছু দিন আগেই সংসদে দাঁড়িয়ে আম্বেডকর সম্পর্কে যা বলেছেন, তাতে আম্বেডকর এবং সংবিধানের বিষয়ে তাঁর মনোভাবটি নিয়ে নতুন করে কংগ্রেস নেতৃত্ব সরব হয়েছেন। দেশ জুড়ে ‘জয় বাপু, জয় ভীম, জয় সংবিধান’ যাত্রা ও জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল গান্ধী দুই জনেই দলীয় কর্মীদের জানিয়েছেন যে তাঁদের সংবিধান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে: যেখানেই বিজেপি-আরএসএস সংবিধানের অমর্যাদা করার চেষ্টা করবে, তাঁদের রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশের সংবিধানের পঁচাত্তরতম বর্ষে এই বাতাবরণের নির্মাণ স্বভাবতই প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘সংবিধানমনস্কতা’র প্রতিজ্ঞাটি বিষয়ে সপ্রশ্ন করে তোলে। ভারসাম্য রক্ষার রাজনীতির মালাটি কী ভাবে গাঁথা হচ্ছে, প্রশ্ন জাগে তা নিয়েও।

বিজেপি-আরএসএস’এর তরফে স্বাধীন দেশের সংবিধানের আর একটি পরোক্ষ কিন্তু তীব্র সমালোচনা উত্থিত হয়েছে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের সাম্প্রতিক উক্তি থেকে। তিনি বলেছেন, এই জানুয়ারি মাসেই কূর্ম দ্বাদশী তিথিতে যে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেই দিনটিই ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস। স্পষ্টতই, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের জন্মদিন নয়, হিন্দুত্ববাদ নিয়ন্ত্রিত ভারতের ‘জন্মদিন’টিকেই তাঁরা প্রকৃত স্বাধীনতা বলতে চান। এবং যে-হেতু ‘স্বাধীনতা’র ধারণার সঙ্গেই কার কুক্ষি বা দমন বা নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীনতা— সেই প্রশ্নও ওঠে, বোঝাই যায় যে, এখানে প্রতিপক্ষ হিসাবে কল্পনা করা হচ্ছে ভিন্ন ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ উভয়কেই। প্রসঙ্গত, গত বছর নির্বাচনের আগে শোনা গিয়েছিল, বিজেপি জিতে এলে সংবিধান পরিবর্তিত হবে। ফলে প্রকৃত স্বাধীনতার কথা যখন উঠল, প্রকৃত সংবিধানের কথাও উঠতে পারে। এ দিকে মোহন ভাগবতের উক্তিই হোক, আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উক্তিই হোক, দুই ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর চিরাচরিত ব্যবহারবিধি অক্ষুণ্ণ রেখেছেন, কোনও মন্তব্য না করে হয় উদাসীনতা নয় নীরব স্বীকৃতির স্বাক্ষর রেখেছেন। অনতিদূরেই ছিল ছাব্বিশ জানুয়ারি, তিনি সে দিন যথাবিধি সমারোহে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন।

এই যে রাজনীতি, যা এখন ভারতীয় গণতন্ত্রের আকাশ অন্ধকারে ছেয়ে দিয়েছে, তার থেকে একটি কথা পরিষ্কার। গান্ধীহত্যার সাতাত্তরতম বর্ষে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলা জরুরি— ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শটির এখনও যে সাংবিধানিক সম্মান, সেটিকে আক্রমণ ও পরিবর্তন করাই রামরাজ্য-প্রতিষ্ঠাতাদের প্রকৃত কার্যক্রম। মোদী মনে করিয়ে দিয়েছেন, সংবিধানের পঁচিশ বছর পূর্তির সময় দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। গণতন্ত্রের পদদলনের সেই ভয়ানক স্মৃতি ভারতীয় সমাজকে এখনও পীড়িত ও ক্রুদ্ধ করে। কিন্তু সংবিধানের পঁচাত্তর বছর পূর্তির সময়ে যে সংবিধান-বিরোধিতার পরিব্যাপ্ত আবহ, তার সঙ্গে ভারতীয় নাগরিক কী ভাবে মোকাবিলা করবেন?

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi Indian Constitution Republic Day 2025
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy