Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Lift

অ-রক্ষিত

বিভিন্ন পুরনো সরকারি ভবনে ও হাসপাতালে লিফ্‌ট-এর কী দশা, ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। বিস্ময়কর ভাবে, নতুনগুলিতে অবস্থা যেন আরও খারাপ।

An image of the lift

অনেকেই লিফ্‌টে ওঠার সময় প্রতি বার জীবনভয় জয় করে তবেই পা ফেলেন। ছবি: প্রতীকী।

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ০৪:৩৭
Share: Save:

কিছু ঘটনার অভিঘাত এমনই তীব্র যে, তা সার্বিক ভাবে দীর্ঘ দিন লুকিয়ে থাকা ত্রুটি-বিচ্যুতির জায়গাগুলিকে নিমেষে উন্মুক্ত করে দেয়। কসবার নার্সিংহোমে লিফ্‌ট দুর্ঘটনাটিকে অনেকটা সেই গোত্রেই ফেলা যায়। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে এক মহিলা চিকিৎসকের। গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁর চিকিৎসক স্বামী। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই চার তলা থেকে লিফ্‌টটি ছিঁড়ে পড়ে। অথচ, লিফ্‌টি পুরনো নয়, মাত্র বছর দুয়েক আগেই সেটি বসানো হয়েছে। কিন্তু তার পর থেকেই একাধিক বার তাতে সমস্যা দেখা দেয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে লিফ্‌ট সারানোর সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগ আর পাওয়া গেল না। এত বড় যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটে কী ভাবে? তবে কি লিফ্‌ট বসানোর সময়ই তা যথাযথ পদ্ধতি মেনে সম্পন্ন হয়নি?

প্রশ্নগুলি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কলকাতা শহরে এটি একটি বিরাট সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন পুরনো সরকারি ভবনে ও হাসপাতালে লিফ্‌ট-এর কী দশা, ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। বিস্ময়কর ভাবে, নতুনগুলিতে অবস্থা যেন আরও খারাপ। অনেকেই লিফ্‌টে ওঠার সময় প্রতি বার জীবনভয় জয় করে তবেই পা ফেলেন। সাম্প্রতিক কালে কলকাতা শহর জুড়ে তৈরি হওয়া অজস্র বহুতলে ওঠা-নামার জন্য লিফ্‌টই একমাত্র ভরসা। বিশেষত, প্রবীণ এবং অসুস্থদের জন্য তো বটেই। প্রায়শই ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতি ছাড়াই সেগুলি চলাচল করে। এই শহরেই গত দু’মাসে দু’বার লিফ্‌ট বিপর্যয় ঘটেছে। গত এপ্রিলে পার্ক স্ট্রিটের একটি বহুতল আবাসনে লিফ্‌ট ভেঙে মৃত্যু হয় এক নিরাপত্তারক্ষীর। লিফ্‌টে তিন ঘণ্টা আটকে থাকার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে এই যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার এবং তাকে ‘সুস্থ’ রাখার ক্ষেত্রে টনক নড়েছে কি? নিয়ম অনুযায়ী, লিফ্‌ট লাগানোর ক্ষেত্রে পুরসভা এবং বিদ্যুৎ দফতরের অনুমতি নিতে হয়। এবং লিফ্‌ট লাগানোর পর ‘ফিট সার্টিফিকেট’ রাখাও বাধ্যতামূলক। এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে নিয়ম পালন যথাযথ হয় কি?

শহরজীবন যদি কোনও নাগরিক সমাজের সভ্যতা-মানের চিহ্নক হয়, তবে লিফ্‌ট নামক বস্তুটির রক্ষণাবেক্ষণকে কিন্তু ন্যূনতম নাগরিক সুরক্ষাব্যবস্থার মধ্যে ফেলতে হবে। শুধু লিফ্‌ট নয়, যে কোনও বহুতলের ক্ষেত্রেই আপৎকালীন ব্যবস্থাগুলির প্রতি নিয়মিত নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি বলে স্বীকার করতে হবে। এবং সরকারি বেসরকারি সমস্ত বাড়ির ক্ষেত্রেই নগর-প্রশাসনকে শেষ পর্যন্ত সেই দায় গ্রহণ করতে হবে। বাস্তবে দেখা যায়, বড় কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে এই দিকগুলি অবহেলিতই থেকে যায়। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলি ধুলোয় ঢাকা পড়ে থাকে, ‘ফায়ার এসকেপ’-এর সিঁড়িতে জমতে থাকে বাতিল জিনিসের স্তূপ, পুরনো বাড়িতে যত্রতত্র বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকে তারের জঞ্জাল। অথচ এগুলির প্রত্যেকটির সঙ্গে বাসিন্দা এবং ব্যবহারকারীর জীবনের প্রশ্নটি জড়িয়ে থাকে। ফলে, এগুলি সংস্কারের ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা, শরিকি বিবাদ-সহ কোনও অজুহাতই যথেষ্ট হতে পারে না। নির্ভরযোগ্য সংস্থাকে দিয়ে এগুলি বসানো এবং নিয়মিত প্রশিক্ষিত কর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা জরুরি। অন্যথায়, এমন দুর্ঘটনার সংখ্যাবৃদ্ধি সময়ের অপেক্ষামাত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

Lift accidents lack of maintenance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy