—প্রতীকী চিত্র।
পুজোর আবহে সেজেছে শহর। তবে সে সাজে মণ্ডপ এবং আলোকসজ্জার পাশাপাশি সমান তালে ভিড় জমিয়েছে হোর্ডিং-ব্যানারের সারি। তাতে শহরের নান্দনিকতায় কত
দূর কুপ্রভাব পড়ছে, সেই নিয়ে বহু আলোচনা ইতিপূর্বে হয়েছে। কিন্তু সুরাহা হয়নি, কারণ তার সঙ্গে পুরসভার আয়ের প্রশ্নটি যুক্ত। তবে দৃশ্যদূষণের অভিযোগের মানুষ সরব হলে, বা উৎসবের মরসুমে হোর্ডিং-ব্যানার নিয়ে কিছুটা কড়া মনোভাব প্রকাশিত হয় পুরসভার তরফে। ঘোষিত হয় নয়া নির্দেশিকা। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, কোনও পুজো কমিটিই মাটি থেকে কুড়ি ফুটের বেশি উচ্চতায় হোর্ডিং বা ব্যানার লাগাতে পারবে না। শুধু তা-ই নয়, বাসস্ট্যান্ড বন্ধ করে বা পথ বিভাজিকাতেও লাগানো যাবে না হোর্ডিং। সমস্যা আরও— দুর্গাপুজো বা কালীপুজো পেরিয়েও শহরময় জ্বলজ্বল করবে আনন্দ-উদ্যাপনের এই অপরিহার্য চিহ্নগুলি। উদ্দেশ্যপূরণের পরেও সাধারণত সেগুলি থেকে যায় নিজ স্থানে, সরানোর কষ্টটুকুও করেন না কেউ।
এমনিতেই ব্যানার-হোর্ডিংয়ের গোটা প্রক্রিয়াটা পুজো কমিটি, বিজ্ঞাপন সংস্থা এবং ডেকরেটরদের পারস্পরিক উদ্যোগ-সংযোগের ফলে হয়। পুরসভার নজরদারি বা তদারকিতে কাঠামোগুলি তৈরি হয় না। ডেকরেটররা কাঠামোগুলি তৈরি করেন, ব্যানার লাগানোর দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলির উপরে। উৎসব শেষে কাঠামোগুলি খোলার ভার ডেকরেটরদের। কিন্তু পুজো পেরোলে কোথায়ই বা বিজ্ঞাপন সংস্থা, কোথায়ই বা পুজো কমিটির তৎপরতা। ডেকরেটরদের দেখেও মনে হয় না তাঁদের পুরসভা নির্ধারিত কোনও সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। হোর্ডিংগুলি শহরের রাজপথে দৃশ্যদূষণ তো ঘটায়ই, পাশাপাশি জনসাধারণের বিপদের কথাটি কি উড়িয়ে দেওয়া যায়? প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক জায়গাতেই হেলে পড়া এই সব বাঁশের কাঠামো ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা। অন্য দিকে, এই হোর্ডিং-এর কারণেই প্রাণান্ত অবস্থা হয় শহরের গাছগুলির। বহু জায়গায় নির্মম ভাবে ছেঁটে ফেলা হয় তাদের ডালপালা।
অন্য দিকে, পুজো শেষে শহর জুড়ে থাকে হোর্ডিং জঞ্জাল এবং হোর্ডিংজাত প্লাস্টিক বর্জ্য। বহু পুজো সংলগ্ন পার্ক, খোলা জায়গা বা খেলার মাঠে ছড়িয়ে থাকে ভাঙা প্লাইউডের টুকরো, স্টাইরোফোমের প্লেট-বাটি, প্লাস্টিক, ছেঁড়া ব্যানার ও অন্যান্য আবর্জনা, যা শুধু দৃষ্টিকটুই নয়, অস্বাস্থ্যকরও। এবং পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তা ছাড়া, শহরে ডেঙ্গির আধিক্যকালে বৃষ্টি হলে বা জল জমে থাকলে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের হোর্ডিং বা ছেঁড়া ব্যানারই হয়ে উঠতে পারে এডিস ইজিপ্টাই-এর আঁতুড়ঘর। অনেক ক্ষেত্রেই জঞ্জাল সাফাইয়ের বিষয়ে পুরসভা এবং পুজো কমিটিগুলির মধ্যে চলে চাপানউতোর। ফলে, জঞ্জাল সরানোর উদ্যোগ করে না কোনও পক্ষই। পুজো ফুরোনোর পরে শহর পরিক্রমা করলে দেখা যাবে যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে মণ্ডপের অবশেষ, হোর্ডিং-এর বাঁশের কাঠামো, প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা। প্রশ্ন হল, উৎসবের আগে থেকে কি এই বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া যায় না? হোর্ডিং-এর সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ করা হলে অথবা হোর্ডিং লাগানোর পর তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরিয়ে না নিলে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করলে এই দূষণ থেকে অনেকটা রেহাই তো মিলতে পারত?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy