—ফাইল চিত্র।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, দু’-তিন দশক আগে অবধিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি এই সমাজ বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধাশীল ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি ছাত্রছাত্রীর
চরিত্র গঠন করবে, এমনটাই ছিল ধারণা। কিন্তু পরিবর্তিত রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির চরিত্রই যদি আমূল বদলে যেতে থাকে, ‘শিক্ষা’কেই বাদ দিয়ে যদি তা হয়ে দাঁড়ায় রাজনীতি, স্বজনপোষণ, ক্ষমতা প্রদর্শন এবং গুন্ডামির আখড়া, তবে সেই ভরসা অটুট থাকে কি? সম্প্রতি নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার একটি স্কুলের ঘটনা এই প্রশ্নটিকেই সামনে এনে দাঁড় করাচ্ছে। সেখানে পারস্পরিক অভিযোগ বিস্তর— স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, প্রধানশিক্ষকের মদতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর হামলার অভিযোগ, ক্লাসরুমে ঢুকে বহিরাগতদের তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ। সে সব অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু অরাজকতার মধ্য দিয়ে যে পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যটির সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া শিক্ষাব্যবস্থার এক টুকরো ছবি ফের সামনে এসে দাঁড়াল, সেই লজ্জা প্রশাসকরা রাখবেন কোথায়?
অবশ্য এই অরাজকতা নতুন নয়। যবে থেকে রাজনীতি শিক্ষার পরিসরটিকে নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হল, তবে থেকেই এই বঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনের শুরু। এই শহর সত্তরের দশকের সাক্ষী। পরবর্তী কালে বাম আমলেও শিক্ষকদের নিজ দলের অনুগত সৈনিকে পরিণত করার জন্য হুমকি, শাসানি বাদ পড়েনি কিছুই। ছাত্র-আন্দোলনও অনেক সময়েই মাত্রা ছাড়িয়েছে। কিন্তু তখনও শিক্ষাক্ষেত্রে এমন সার্বিক অধঃপতন চোখে পড়েনি। সেই অধঃপতন পরিবর্তনের সরকারের অবদান বললে অত্যুক্তি হয় না। এক দিকে দুর্নীতি এবং ক্রমান্বয় অবহেলার ধাক্কায় সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাটাই লাটে উঠেছে, অন্য দিকে তুচ্ছ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-নিগ্রহ নিয়মে পরিণত হয়েছে। সূচনা করেছিলেন ভাঙড়ের ‘দাপুটে’ তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম ভাঙড় কলেজের শিক্ষিকার দিকে জগ ছুড়ে মেরে, অতঃপর কালে-দিনে তার উগ্রতা আরও বেড়েছে। শিক্ষককে সপাটে চড়, কদর্য ভাষায় হেনস্থা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘেরাও, ক্লাসরুম ভাঙচুর, অশালীন পোস্টার— এই কি এক ‘সংস্কৃতিমনস্ক’ রাজ্যের শিক্ষাচিত্র?
এই কুনাট্যে রাশ টানার দায়িত্ব ছিল রাজ্য প্রশাসনের। শিক্ষাকে রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরে রাখা এবং শিক্ষাক্ষেত্রের সুস্থ, স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখায় প্রশাসনের কঠোর মনোভাব আখেরে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায় সুবাতাস আনতে পারত। তৃণমূল সরকার দৃশ্যতই সেই পথে হাঁটতে চায়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে তার ভূমিকা নির্লজ্জ প্রশ্রয় দানকারীর। ‘শিক্ষককে হেনস্থার ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়’ বা ‘আরও সংযত হওয়া উচিত’-গোছের নরম বাক্যে যে ‘তাজা নেতা’দের থামানো যাবে না, ‘ছোট ছোট ছেলেদের দু্ষ্টামি’ অব্যাহত থাকবে— সে কথা প্রশাসনের শীর্ষমহলের অজ্ঞাত থাকার কথা নয়। কিন্তু তাঁরা শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রসঙ্গের মতোই এই ক্ষেত্রেও চোখটি বন্ধ রাখার কৌশল নিয়েছেন। তদুপরি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একদা হুঙ্কার দিয়েছিলেন, শিক্ষকদের বেতন তাঁরাই দেন। সুতরাং, শিক্ষককুল তাঁদের অঙ্গুলি নির্দেশেই চলতে বাধ্য— এই মর্মে। শিক্ষক-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সরকারি মনোভাবই যদি এরূপ হয়, তবে সেই ইঙ্গিত অন্যরাও দ্রুত বুঝে নেবেন, তাতে আশ্চর্য কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy