—প্রতীকী চিত্র।
গিগ কর্মী, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিযুক্ত অস্থায়ী কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় আইন পাশ করে ভারতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল রাজস্থান। অ্যাপ-ভিত্তিক পরিষেবায় নিযুক্ত এই কর্মীরা প্রধানত বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দেন। এই আইনের ফলে নিয়োগকারী সংস্থাগুলির কাছ থেকে ডেলিভারি পিছু ‘লেভি’ সংগ্রহ করা হবে, যা দিয়ে তৈরি হবে ডেলিভারি কর্মীদের কল্যাণ তহবিল। তা থেকে গিগ কর্মীদের নানাবিধ সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত স্বয়ং এই তহবিলের পরিচালনা সমিতির শীর্ষে থাকবেন। গিগ কর্মীদের প্রতিনিধি, এবং তাঁদের নিয়োগকারী সংস্থাগুলির প্রতিনিধি-সহ একটি কল্যাণ পর্ষদও তৈরি হবে। উদ্যোগটি সাধু। গিগ শ্রমকে কেন্দ্র করে যে সমস্যা ভারতে উদ্ভূত হয়েছে, সরকার তার নিরসনে একটি পক্ষ হিসাবে এগিয়ে না এলে, এক দিকে বাজারের নমনীয়তা বজায় রাখা, এবং অপর দিকে শ্রমিকের স্বার্থরক্ষার সূত্র মেলা সহজ হত না। সমস্যাটি নিহিত আছে ‘গিগ’ কাজের ধরনটিতেই। নিয়োগকারী সংস্থাগুলি গিগ কর্মীদের চুক্তিকর্মী (কনট্র্যাকটর), স্বাধীন কর্মী (ফ্রিল্যান্সার) অথবা অংশীদার (পার্টনার) হিসাবে গণ্য করে, এবং বাজারে চাহিদার ওঠা-পড়া অনুসারে চুক্তির শর্তে বদল করতে দ্বিধা করে না। মুক্ত বাজারে তেমনই দস্তুর। সমস্যা এই যে, ‘অংশীদার’ বা ‘চুক্তিকর্মী’ বলতে যা বাস্তবিক বোঝায়, গিগ কর্মীদের প্রকৃত পরিস্থিতির সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক। তার প্রধান কারণ, চুক্তির শর্তের উপরে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ কার্যত কিছুই নেই। অন্য দিকে, শ্রমবিধি কর্মীদের যে সব সুরক্ষা দেয়, সেগুলিও পান না গিগ কর্মীরা। অতীতে এমনও দেখা গিয়েছে যে, কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই চল্লিশ শতাংশ কমানো হয়েছে মজুরি, যার জেরে কর্মবিরতি করেছেন কর্মীরা। বিশ্বের নানা দেশে গিগ অর্থনীতিতে বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে বার বার শোরগোল উঠেছে। সমাধানের আশায় অনেক ক্ষেত্রে পুরোদস্তুর শ্রমিকের স্বীকৃতি দাবি নিয়ে আদালতে গিয়েছেন গিগ কর্মীরা।
সাবেক শ্রমিক সংগঠনগুলির সংঘাতপূর্ণ, অপচয়ী কৌশলে গিগ কর্মীদের সমস্যার নিরসন খুঁজতে যাওয়া বাতুলতা। শ্রমিককে তাঁর দক্ষতা, কার্যক্ষমতার সীমা অবধি বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া উদারবাদী ধনতন্ত্রেরই কাজ। অতিরিক্ত কাজ আদায়, যৎসামান্য মজুরি, বা সবেতন ছুটি থেকে শ্রমিকের বঞ্চনা কখনওই দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পের উন্নতি বা প্রসারের অনুকূল হতে পারে না। আর স্বল্প মেয়াদে লাভকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া ধনতন্ত্রের ধর্ম নয়। শ্রমিক কল্যাণ এবং নানাবিধ সামাজিক সুরক্ষার সরকারি ব্যবস্থায় শিল্পগুলি যোগ দেয় উদারবাদী অর্থনীতির নিয়ম অনুসারেই। অপর পক্ষে, কর্মীদের একটি বড় অংশও গিগ অর্থনীতির সুবিধা বুঝেছেন। ইচ্ছামতো কাজে যোগ দেওয়া, প্রয়োজন মতো কাজ করে বাড়তি রোজগারের সুযোগ গ্রহণ করতে অনেকেই আগ্রহী। এর ফলে বাজারে নতুন নতুন পরিষেবার চাহিদা তৈরি হয়, তা দেখা গিয়েছে সমীক্ষায়। তাতে কাজ পাওয়ার সুযোগও বাড়ে। প্রধান সমস্যা, সুরক্ষার অভাব। কাজেই, সেই বাজারটিকে যথাযথ পথচালিত করা সরকারের কর্তব্য।
নিয়োগকারী সংস্থাগুলি গিগ কর্মীর সঙ্গে চুক্তিতে কী শর্ত রাখবে, তা নির্দিষ্ট করা সরকারের কাজ নয়। তবে বাজারের স্বার্থে শ্রমিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারেরই কাজ। রাজস্থান সরকারের আইনটি সেই উদ্যোগ করল। উদ্বেগ অবশ্য রয়ে গেল। ভারতে নানা ধরনের কাজের সঙ্গে (নির্মাণ, পরিবহণ, বিড়ি প্রভৃতি) যুক্ত কর্মীদের জন্য কল্যাণ পর্ষদ এবং বিশেষ তহবিল অনেক রয়েছে। আক্ষেপ, শ্রমিকদের সদস্য হিসাবে নথিভুক্তি, এবং সদস্য পদের নবীকরণে বহু ফাঁক থেকে যায়। তহবিলে টাকা থাকলেও তা থেকে যথাযথ সহায়তা মেলে না কর্মীদের। কোভিডের সময়ে এর প্রমাণ মিলেছিল। অতএব পর্ষদ গঠন বা তহবিল নির্মাণ গিগ কর্মীদের কল্যাণে প্রথম পদক্ষেপ মাত্র, এমনই ভাবা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy