Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Rahul Gandhi

পেনসিলটুকুও নেই

তেলঙ্গানায় কংগ্রেস জিতল বটে, কিন্তু বিজেপির ভোট দ্বিগুণ হল, আসনসংখ্যা এক থেকে বেড়ে দাঁড়াল আট।

Rahul Gandhi.

রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:০৭
Share: Save:

বছরের গোড়ায় ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার পথে নেমে আসা স্বতঃস্ফূর্ত জনতার ঢল দেখে যখন কারও কারও মনে আশার আলো জ্বলে উঠছিল, রাজনীতির ভাগ্যদেবী তখন অলক্ষ্যে মুচকি হেসেছিলেন। তার পর কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হল বিজেপি। তারও কয়েক মাস পরে বেঙ্গালুরুর মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিরোধী নেতারা পরস্পরের হাত ধরে ঘোষণা করলেন নতুন জোট: ‘ইন্ডিয়া’। কারও কারও মনে আশার আলো উজ্জ্বলতর হল; রাজনীতির দেবী আরও এক বার হাসলেন। সে হাসির মর্মার্থ বোঝা গেল বছরের শেষ প্রান্তে পৌঁছে, হিসাব মেলাতে গিয়ে যখন দেখা গেল, হাতে পেনসিলটুকুও নেই। নভেম্বরে পাঁচ রাজ্যের ভোটে কংগ্রেসের হাতছাড়া হল রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশে বিজেপির দখল কায়েম থাকল। তেলঙ্গানায় কংগ্রেস জিতল বটে, কিন্তু বিজেপির ভোট দ্বিগুণ হল, আসনসংখ্যা এক থেকে বেড়ে দাঁড়াল আট। লজ্জা নিবারণের জন্য পড়ে রইল খড়কুটো: এই বিশ্বাস যে, বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে বিজেপির বিজয়রথ অচল। অবশ্য সামান্য পাটিগণিতই বলে দিল, সংসদে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বিজেপির আদৌ দাক্ষিণাত্যের প্রয়োজন নেই। মজার কথা হল, বছরের গোড়ার আপাত-উত্তুঙ্গ জনসমর্থন থেকে বছর শেষের নিশ্চিত পরাভব, এই যাত্রাপথে আর এক বারও ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্যোগই তৈরি হল না। এর মধ্যে মন্দির উদ্বোধনের দিনক্ষণ স্থির করে দেশব্যাপী প্রচার করে ফেলল গেরুয়া শিবির, শুধু নিজের জোরে বিধানসভা নির্বাচন করানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাজ্য চষে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী। এখন শোনা যাচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে নাকি আরও এক বার যাত্রায় বেরোবেন রাহুল গান্ধী। তা হবে হয়তো— বসন্তকালে পথ চলায় কষ্ট কম হবে।

অবশ্য, রাজনীতির অধিষ্ঠাত্রী দেবী শুধু কংগ্রেসের কথা ভেবেই হেসেছিলেন, তেমনটা বলা মুশকিল। বছর গড়িয়ে গেল প্রায়, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিকরা কিছুই স্থির করতে পারলেন না— প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে, আসন সমঝোতা কোন সূত্র মেনে হবে, জানা গেল না এ সব কিছুই। যেটুকু জানা গেল, তার মূল কথা হল, কোনও দলই এই জোটের স্বার্থে তিলমাত্র জমি ছাড়তে নারাজ। শরদ পওয়ার জোটে আছেন না নেই, বছরের শেষে সেই ধাঁধার উত্তর খোঁজার পাশাপাশি খোঁজ করতেই হবে, জোটসঙ্গী যখন অন্য রাজ্যে নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, উদয়নিধি স্ট্যালিন তখন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করলেন কেন? অথবা, ঠিক কোন কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অরবিন্দ কেজরীওয়াল হঠাৎ সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মল্লিকার্জুন খড়্গের নাম হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন? এই জোটকে তাঁরাই যদি প্রাপ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ হন— অথবা, দুর্জনের মতে, তাঁরাই যদি জোট সম্ভাবনায় অন্তর্ঘাত ঘটাতে চান— তা হলে সাধারণ মানুষ এই জোটের উপর ভরসা করবেন কোন সাহসে?

অথচ, এ বছর একের পর এক এমন ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যার জোরে বিরোধী রাজনীতি দেশব্যাপী ঝড় তুলতে পারত, জোটকে দাঁড় করিয়ে দিতে পারত শক্ত ভিতের উপরে। বছরের গোড়ায় রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ থেকে বছরের শেষ প্রান্তে মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার, পাইকারি হারে বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ড করা— গণতন্ত্রের বিবিধ অবমাননা সেই ঘটনাক্রমের এক দিক। আর এক দিকে রয়েছে মণিপুর বা হরিয়ানার সাম্প্রদায়িক সংঘাত। রয়েছে অর্থনীতির বিবিধ অন্ধকার— বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান আর্থিক অসাম্য। কিন্তু, এই বিষয়গুলিকে রাজনীতির অস্ত্র করে তোলার জন্য যে পরিশ্রম ও মানসিকতা প্রয়োজন, ভারতের বিরোধী রাজনীতি তার থেকে শত যোজন দূরেই থাকল। কেন, তার কারণ দেশবাসী অনুমান করতে পারেন। শেষ অবধি ইন্ডিয়া জোট যদি হয়ও, ২০২৩-এ তার জন্য কোনও আশার বীজ বপন করা গেল না।

অন্য বিষয়গুলি:

Rahul Gandhi Congress BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy