বড়দিনে পার্কস্ট্রিটে জনসমাগম। ফাইল চিত্র।
উৎসব আনন্দের, পরিপূর্ণতারও। কিন্তু উন্মত্ততার নয়, হতে পারে না। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি উৎসবের নামে যা চলছে, তাতে সেই বিকৃত রূপটিই প্রকাশ পায়। বড় দিনে সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থেকেছে। ইংরেজি বর্ষবরণ উৎসবও যে বিন্দুমাত্র পৃথক হবে না, প্রায় নিশ্চিত। কেমন সেই উন্মত্ততা? পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় বড়দিনের রাতে যে বিপুল জনসমাগম হয়েছে, তার সামনে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ এবং ভিড় সামলানোর যাবতীয় ব্যবস্থা— কিছুই কাজে আসেনি। বড় রাস্তা ছেড়ে গলিপথে বেসামাল বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক চলা অব্যাহত থেকেছে, মোটরবাইকের পিছনে একাধিক জনকে বসিয়ে ‘জয় রাইড’ চলেছে, মত্ত গাড়ি ছোটাতে দেখা গিয়েছে বহু জনকে। তীব্র যানজট, পার্কিংয়ের সমস্যা, হয়রানির পথ পরিবহণ, এবং ভিড়সন্ত্রস্ত মেট্রো— উৎসব তবে কাদের?
মনে রাখা প্রয়োজন, এই মরসুমি আমোদের দিনেও এমন অনেকে আছেন, যাঁদের প্রতি দিন পথে বেরোতে হয় প্রয়োজনের তাগিদে। হয়তো উৎসবের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত স্থানগুলির উপর দিয়ে যাতায়াতও করতে হয়। তাঁদের পক্ষে সাত-দশ দিনের এমন অব্যবস্থা প্রাণান্তকর হয়ে ওঠে। তাঁদের সহ-নাগরিকদের উচিত আমোদের ফাঁকে এই বিপরীত চিত্রটির কথাও মনে রাখা। ভাবা প্রয়োজন, মধ্যরাত্রে নববর্ষ উদ্যাপনের লগ্নে বাইকের সুতীব্র হর্ন, শব্দবাজি, বক্স বাজিয়ে তাণ্ডব— সকলের কাছে একই রকম উল্লাসের বার্তা বয়ে আনে না। সেই ‘অন্য’দেরও কিন্তু সমান অধিকার আছে উৎসবের দিনগুলিতে শান্তিতে, স্বস্তিতে নিজ কর্ম সুসম্পন্ন করার। সেই অধিকার থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা অমার্জনীয় অপরাধ। অথচ, নিয়ম করে প্রতি উৎসবে সেই অপরাধ সংঘটিত হয়ে চলেছে। বস্তুত, সুসংবদ্ধ ভাবে, শৃঙ্খলা মেনেও যে আনন্দ করা যায়, সেই বোধটিই আশ্চর্যজনক ভাবে অন্তর্হিত। পুজোর সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে সময়ে যাওয়া যাবে না, হাসপাতাল পৌঁছতে হলে ঘুরপথে যেতে হবে, ভিড়ের চাপে মেট্রোর সময়সূচি বিপর্যস্ত হবে— এমন অসম্ভব অনিয়মই এখন নিয়মে পর্যবসিত। মর্মান্তিক হল, এর ফলে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও মানুষ বেমালুম ভুলেছে।
কাণ্ডজ্ঞানের এ-হেন আকাল কেন ঘটল, তার সদুত্তর মেলা মুশকিল। যদি গত দু’বছরে অতিমারিজনিত বিধিনিষেধ এবং উৎসব-বঞ্চিত থাকার হতাশা পূরণই লক্ষ্য হয়, তা হলেও মাথায় রাখতে হবে, বিশ্ব জুড়ে কোভিড আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সত্য যে, বঙ্গে এখনও তার ছায়া পড়েনি, তাই অযথা আতঙ্কের কারণ নেই। কিন্তু উদ্বেগটুকুকে সমূলে বিসর্জন দিলে চলবে না। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে সতর্কতার কথা বলা হয়েছে, সেটুকু মেনে চলা একান্ত প্রয়োজন। ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ যখন দেওয়া হয়েছে, তখন তা মেনে চলাই সুস্থ, স্বাভাবিক বোধবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকের কর্তব্য। এবং শুধুমাত্র প্রশাসনই যে কড়া হাতে সেই সচেতনতা বৃদ্ধির দায়িত্ব নেবে, এমনটা নয়। নাগরিককেও নিজস্ব বিচারবুদ্ধির প্রমাণ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাঁধভাঙা হুল্লোড়ের পিছনে যে কারণই থাক, আত্মপ্রদর্শন অথবা নিছকই অবিবেচনা বোধ— বৃহত্তর সমাজের পক্ষে তা শুভ ইঙ্গিত নয়। তাই লাগাম প্রশাসনিক এবং নাগরিক— দুই হাতেই না টানলে বিপদ অনিবার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy