কলকাতা বইমেলা। —ফাইল চিত্র।
কলকাতার দরজায় কড়া নাড়ছে বইমেলা। গত বছর মেলায় এসেছিলেন ছাব্বিশ লক্ষ মানুষ, বই বিক্রি হয়েছে পঁচিশ কোটি টাকার, আগেই জানিয়েছিলেন কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলার আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড-এর কর্মকর্তারা। প্রত্যাশার চাপ বড় কম নয়, বিশেষত কলকাতার দুর্গাপুজোর পরেই যে মেলা দ্বিতীয় বৃহত্তম পার্বণের জায়গা নিয়েছে জনমনে, তার সার্বিক ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রত্যাশা। জানুয়ারির শেষে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য শিক্ষা বোর্ডের অধীন স্কুলগুলিতে বোর্ড পরীক্ষার কারণে এ বছর বইমেলা এগিয়ে এসেছে, শনি-রবির সপ্তাহান্ত ছাড়াও পাওয়া যাচ্ছে অন্তত দু’টি সরকারি ছুটির দিনের অবকাশ। শীতের কলকাতায় মিঠে রোদ গায়ে মেখে সেন্ট্রাল পার্ক প্রাঙ্গণে বইপ্রেমীদের কেমন ঢল নামবে সহজেই অনুমেয়, বিশেষত এই সময়ে, যখন পুজো থেকে বই, গান থেকে হস্তশিল্প সব কিছুকে কেন্দ্র করেই বাঙালির উচ্ছ্বাস উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমান।
বইমেলায় যে ভিড় সে কতটা সত্যিকারের বইপ্রেমীদের আর কতটা হুজুগপ্রিয়দের সে তর্ক প্রতি বারই মেলার আবহে উঠে আসে। পড়াশোনা তথা বিদ্যাচর্চা নিয়ে বাঙালির এক আগ্রহের ঐতিহ্য আছে, বিনোদন ও সমাজমাধ্যমমুখী এ কালেও বইমেলা এগিয়ে এলে সেই ঐতিহ্যধারাটির ক্ষীণস্রোত টের পাওয়া যায়। লেখকেরা অপেক্ষা করেন নতুন বই ঘিরে পাঠকের সঙ্গে সংযোগের, ছোট-বড় প্রকাশকেরা তাকিয়ে থাকেন বইয়ের বিক্রিবাটা ও ব্যবসার দিকে। বইমেলা প্রাঙ্গণের আয়তন নির্দিষ্ট, অথচ কোভিড-উত্তরকাল থেকেই বইপাড়ায় বেড়েছে প্রকাশক সংখ্যা, সকলেই মেলায় ঠাঁই চান। গত বছর দেখা গিয়েছিল এক-একটি স্টল এতই অপরিসর যে বিক্রেতাও বসে আছেন প্রায় স্টলের বাইরে, কারণ পাঠক-ক্রেতা বই দেখতে ঢুকলে আর স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। গিল্ড কর্মকর্তারা এ বার আরও বেশি সংখ্যক প্রকাশককে মেলায় জায়গা দেওয়ার কথা বলেছেন, সে ব্যবস্থা হয়তো এক চিলতে স্টলের মূল্যেই করতে হবে। লিটল ম্যাগাজ়িন প্যাভিলিয়ন এ বছর এক জায়গাতেই, কিন্তু কলকাতা, বাংলা ও বহির্বঙ্গের বিপুল সংখ্যক ছোট পত্রিকার মধ্য থেকে দু’শো পত্রিকার বাছাইও সমস্যার, বাকিরা কোথায় যাবেন!
বই ঘিরে ব্যবস্থার বাইরে থাকে পাঠক ক্রেতা তথা নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এক বিশাল কর্মকাণ্ড, যার সঙ্গে জড়িয়ে প্রশাসন পুলিশ দমকল বিদ্যুৎ-অফিস অ্যাম্বুল্যান্স ব্যাঙ্ক-সহ আরও বহু ক্ষেত্র। ফুড কোর্টে ভিড় উপচে পড়া নিয়ে বক্রোক্তি চোখে পড়ে বইমেলা এলেই, এমনকি শৌচালয়ের সামনে দীর্ঘ লাইন নিয়েও— কিন্তু খাবার, শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা এত বড় মেলার অতি জরুরি বিষয়। বয়স্ক মানুষেরা অভিযোগ করেন বইমেলায় দু’দণ্ড বসে জিরোনোর জায়গা আজও বড় কম, এই দিকটিতেও উদ্যোক্তাদের নজর দেওয়া দরকার। এত বড় মেলার একটি বড় দিক দূষণ, বিশেষত প্লাস্টিক দূষণ। এ বছর ন্যাশনাল জুট বোর্ড বইমেলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত, বোর্ডের কমিশনার বিশেষ ভাবে বলেছেন বইমেলাকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে, কিন্তু বলা আর করার মাঝে বিস্তর ফারাক। সাতচল্লিশ বছর যে বইমেলার বয়স, এই জরুরি বিষয়গুলি তার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা এবং বাস্তবায়িত করা দরকার। শুধু বই পড়া ও কেনা নিয়ে থরথর মরসুমি আবেগ তৈরিই তার কাজ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy