—ফাইল চিত্র।
অতীতে এক বাঙালি কবি যখন আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, “উই আর ইঁদুরের দেখ ব্যবহার, যাহা পায় তাহা কেটে করে ছারখার,” তখনও কলকাতায় এত সেতু তৈরি হয়নি, মাটির তলায় এত রকম কেব্ল-ও বসেনি। কলকাতা ও বাংলা কবিতার দুয়েরই অনেক বদল হয়েছে, কিন্তু ইঁদুর তার ব্যবহার বদলায়নি। কলকাতার বড় বড় সৌধ, সেতু, ফুটপাথ ইঁদুর-বাহিনীর আক্রমণে ফোঁপরা, কোনওটা বা ধসে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংবাদে প্রকাশ, কলকাতার পুরসভার আধিকারিকরা ইঁদুরের আক্রমণের তীব্রতায় উদ্বিগ্ন। ইঁদুর মাটি ফোঁপরা করে দিচ্ছে, কেব্ল কেটে দিচ্ছে। কলকাতার বেশ কয়েকটি প্রধান রাজপথের ফুটপাথ অসমান, উঁচুনিচু হয়ে গিয়েছে, কারণ তার নীচের জমি খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর। ইঁদুরের দেহ, বা তার জড়ো-করা প্লাস্টিক প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে বিদ্যুৎ সরবরাহের বাক্সগুলিতে শর্ট সার্কিট হচ্ছে। আক্ষেপ, এত ঝুঁকি সত্ত্বেও ইঁদুরের দৌরাত্ম্য কমাতে কোনও নির্দিষ্ট কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না। বরং কলকাতার বুকে বিপুল পরিমাণ আবর্জনা জমে থাকছে, যা ইঁদুরকে খাদ্য জোগাচ্ছে। অনেক মহানগর কিন্তু ইঁদুর-নিধনে তৎপর। মুম্বই পুর নিগমের তথ্য, সে শহরে প্রতি বছর তিন লক্ষ ইঁদুর মেরে ফেলা হয়। নিউ ইয়র্ক শহরের পাতাল রেলে ইঁদুরের উপস্থিতি দীর্ঘ দিনের, কিন্তু সেখানেও ইঁদুর কমানোর এক বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এ বছর, এক বিশেষজ্ঞকেও নিযুক্ত করা হয়েছে। কলকাতা পুরসভা ডেঙ্গির মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার অভিযোগ সামাল দিতেই ব্যস্ত, ইঁদুর নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ কতটুকু, এখনও তার আভাস মেলেনি।
সম্ভবত অন্যান্য সঙ্কটের মতোই, ইঁদুরের সমস্যাও ভয়ানক রূপ নিয়ে দেখা না দেওয়া পর্যন্ত গুরুত্ব পাবে না। সেই সমস্যা আসতে পারে জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে, এমন সম্ভাবনা যথেষ্ট। ইঁদুর যে রোগবাহী জীব, তা কারও অজানা নয়। প্লেগ-আক্রান্ত ইঁদুর সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করলে তা কতটা ভয়ানক হয়, ভারতে তার নিদর্শন মিলেছিল ১৯৯৪ সালে। সে বছর মধ্য ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে প্রায় সাতশো মানুষ বিউবোনিক এবং নিউমোনিক প্লেগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, পঞ্চাশ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছিলেন। তবে অস্বাস্থ্যকর জায়গায় ইঁদুরের বাস, তাই আরও নানা ধরনের অসুখ ছড়াতে পারে ইঁদুর। তার মল, মূত্রের সংস্পর্শ, বা ইঁদুরের কামড়েও মানুষের শরীরে রোগ হতে পারে, মৃত্যুও। মাটি কাটার কাজ করেন যে শ্রমিকরা, তাঁদের ঝুঁকি সর্বাধিক। হয়তো অনেকেই ইঁদুর-সঞ্জাত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, রোগ নির্ণয় হয়নি। পেশাগত রোগের নির্ণয়ে কারই বা আগ্রহ রয়েছে?
ইঁদুর, মাছি, মশা প্রভৃতি রোগবাহী জীবের নিয়ন্ত্রণ জনস্বাস্থ্যের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর জন্য বর্ষব্যাপী কার্যসূচি প্রয়োজন। ঝুঁকিগ্রস্ত এলাকাগুলি চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে নিয়মিত রাসায়নিক ওষুধের প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগ নির্ণয়ের নির্দেশাবলির প্রচার, চিকিৎসার প্রণালী নির্দিষ্ট করা চাই। চাই সুনির্দিষ্ট আধিকারিক নিয়োগ, বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয় ও প্রশিক্ষিত কর্মী। নির্দিষ্ট জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমের ফাঁক বুঝেই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া অব্যাহত, কালাজ্বরও মাথাচাড়া দিচ্ছে এ রাজ্যে। অথচ দেখাই যাচ্ছে— রোগের প্রকোপ কমানোর চাইতে, রোগীর সংখ্যা কম দেখানোতেই সরকারের আগ্রহ যেন বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy