প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
তাসের খেলায় একটি প্রথা আছে নিজের মন্দ তাস নিজেই হজম করতে বাধ্য হওয়া। ভারতীয় জনতা পার্টিকে তেমনই একটা সঙ্কটের মধ্যে ফেলার প্যাঁচ কষছেন দেশের কতিপয় প্রধান বিরোধী দলের নেতা, সাম্প্রতিক সংবাদ বুঝিয়ে দিচ্ছে। নতুবা, সামনের অতিপ্রতীক্ষিত বিরোধী বৈঠকের আগে আবার নতুন করে জাতগণনার প্রশ্নটা এ ভাবে উঠে আসত না। দাবিটি হল— অবশেষে যখন জনগণনার কথা শোনা গিয়েছে মোদী সরকারের মুখে, তা হলে জনগণনার সঙ্গেই জাতগণনার কাজটাও হোক। এমনিতে দাবিটি শুনতে সহজ-সরল, প্রত্যাশিতও বটে। কেননা, ২০২১ সালের না-হওয়া জনগণনা হলে জাতগণনার কাজ এমনিতেই এগিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু অত সরল অঙ্ক বিরোধীরা কষছেন না। যে-হেতু নরেন্দ্র মোদীর দল সাম্প্রতিক কালে নানা ভাবে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে নিম্নবর্ণ এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকেও নিজের পক্ষে টানার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এ বার বিরোধীরা হয়তো ভাবছেন, অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি ভোট দিয়ে বিজেপিকে কুপোকাত করার সুযোগটা তাঁরা কাজে লাগাবেন।
সুযোগটা কাজে লাগাতে পারবেন কি না নেতারা, সেটা এখনই বলা কঠিন। তবে সুযোগ একটা রয়েছে বটে। অঙ্কের হিসাব বলে, দেশের সমাজের অর্ধাংশেরও বেশি ওবিসি বা অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত। উনিশশো নব্বই দশকের মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টেই বলা হয়েছিল, ওবিসিরা মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ। এই হিসাবের মধ্যে কোনও অস্পষ্টতা আছে কি না, তা নতুন জাতগণনায় বোঝা যাবে, কিন্তু দেশের এক বিপুল অংশ যে এর মধ্যে পড়ে, এবং সংহত চেহারায় সংখ্যার খেলায় যে তারা উচ্চবর্ণ হিন্দুকে হেলায় হারিয়ে দিতে পারে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। বিজেপি নিজেও এ হিসাব করেই নিশ্চয় নরেন্দ্র মোদীকে ওবিসি পরিচিতিতে ভূষিত করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। কিংবা সাম্প্রতিক কালে অভিযোগ তুলেছে যে রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের মতো রাজ্যে ওবিসিদের সঙ্গে বিরোধী দলগুলি মন্দ ব্যবহার করছে। মুশকিল হল, বিভিন্ন রাজ্যে এখনও ওবিসিদের মূল প্রতিপক্ষ কিন্তু হিন্দু উচ্চবর্ণই, অর্থাৎ বিজেপির প্রধান সমর্থক সমাজ। আবার পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে মুসলমানদের এক বড় অংশ ওবিসি শংসাপত্রে বলীয়ান। তৃণমূল জমানায় যত ওবিসি শংসাপত্র বিলি হয়েছে, তার সিংহভাগই গেছে মুসলমানদের কাছে। ফলে ঠিকমতো প্রচার করলে নীতীশ কুমার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা যে ওবিসি কার্ড খেলতে ব্যস্তবিজেপিকে ওবিসি কার্ডেই হারিয়ে দিতে পারবেন, সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
গত কয়েক বছর ধরে যে সমানেই জাতগণনার কাজটা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার কারণও বিজেপির এই বিপদের মধ্যেই রয়েছে। গড়িমসিতে কোনও অসুবিধা নেই: সরকারি হলফনামায় ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে— এক, বিচারবিভাগ এ বিষয়ে শাসনবিভাগকে কখনওই নির্দেশ বা আদেশ দিতে পারে না, এটা বিচারের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয় নয়; দুই, প্রশাসনিক ভাবে এ খুব কঠিন কাজ, কেননা এক ব্যক্তি একাধিক পরিচয়ের ভিত্তিতে একাধিক গোষ্ঠীতে নাম লেখাতে পারেন। উচ্চবর্ণ বা গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তথ্য যত ‘পরিচ্ছন্ন’, বাকিদের ক্ষেত্রে তা না-ই হতে পারে। এবং তিন ও প্রকৃত সমস্যা— রাজনৈতিক স্বার্থ। কেবল বিজেপি কেন, কংগ্রেসের মতো মূলস্রোতের দলও এতে বিপদে পড়তে পারে, ভারতীয় জনসমাজের প্রকৃত বাস্তব ও পরিচিতি-চিত্র যদি চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়। ঐতিহ্যগত ভাবে ক্ষমতাশালী সমাজের হাতে আর ক্ষমতাই অবশিষ্ট থাকবে না— এ সংশয় ভিত্তিহীন নয়। তবে কিনা, এখন কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল নিজেরা সমস্যায় পড়ার থেকে বেশি চিন্তিত বিজেপিকে কী ভাবে সমস্যায় ফেলা যায় তা নিয়ে, সেই জন্যই কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীদের সহসা উৎসাহ— জাতগণনার তাসটি খেলবার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy