বিগত পাঁচ বৎসরে অসমে উন্নয়ন মুখ ফিরাইয়া থাকে নাই। রাস্তাঘাট মসৃণ হইয়াছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ অপেক্ষাকৃত নিরবচ্ছিন্ন হইয়াছে, ভূমিহীন মানুষ জমির পাট্টা পাইয়াছেন, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুফল জনতা অবধি পৌঁছাইয়াছে। তৎসত্ত্বেও, নির্বাচনী অঙ্গনে অবতীর্ণ হইবার পূর্বে উন্নয়নের সূচকে ভরসা রাখিতেছে না শাসক দল বিজেপি। অপ্রিয় সত্যটি প্রকাশেও তাহাদের দ্বিধা নাই। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলিয়াছেন, শুধুমাত্র উন্নয়নে ভর করিয়া জয় হাসিল অসম্ভব, অসমিয়া পরিচিতির প্রসঙ্গ তুলিতেই হইবে, উহা রাজ্যবাসীর প্রাণস্বরূপ। এহেন কৌশল আস্তিনে লুক্কায়িত রাখাই দস্তুর; কিন্তু তাহা সরাসরি প্রকাশিত হইয়াছে, ব্যাপার তাই গুরুতর। বুঝিতে হয়, এনআরসি-পরবর্তী প্রথম নির্বাচনে সমর্থনের ভিত্তি লইয়া সংশয়ে ভুগিতেছে বিজেপি। তাহারা ১৬০০ কোটি টাকা খরচ করিয়া সুবিশাল তথ্যভান্ডার নির্মাণ করিয়াছে, ব্যাপক অসঙ্গতির পর ভুল স্বীকার করিয়াছে, নাগরিকত্ব আইন পাশ করাইয়াও প্রণয়ন করে নাই, অসম চুক্তির ছয় নম্বর ধারা বিষয়ে কমিটি গঠন করিয়াও সেই রিপোর্ট কেন্দ্রে প্রেরণ করে নাই। ন যযৌ ন তস্থৌ।
জনমত সমীক্ষা বলিতেছে, বিজেপির আসনসংখ্যা যত কমিবে, তত লাভ হইবে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী জোটের। উক্ত জোটটিও অভূতপূর্ব— প্রধানত বাঙালি মুসলমানের দল বলিয়া পরিচিত এআইইউডিএফ-কে সঙ্গে লইয়া ভোট-ময়দানে অবতীর্ণ হইয়াছে কংগ্রেস। জন্মের পর বিগত ষোলো বৎসর ধরিয়া অসমের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলির নিকট নিত্য গালমন্দ শুনিয়াছেন দলের প্রধান বদরউদ্দিন আজমল, ‘অসম-বিরোধী’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা জুটিয়াছে। বহু দিনের শাসক কংগ্রেসের সহিত মিত্রতা তাহাদের ‘মিয়া’ পার্টির ‘কলঙ্ক’ ঘুচাইতে পারে, বদলাইতে পারে অসমের মূলধারার রাজনীতির চরিত্রও। হিন্দু হউন বা মুসলমান, এযাবৎ কাল আজমলের দল হইতে সযত্নে দূরত্ব রক্ষা করিতেন অসমিয়ারা। উক্ত দলকে শত্রু মনে করিতেন কংগ্রেসিরাও। এই বার অসমিয়া ও বাঙালি হিন্দুরা কি তালা-চাবি চিহ্নে বোতাম টিপিবেন? কিংবা অসমিয়া মুসলমানেরা? যাঁহারা ‘বহিরাগত’ বলিয়া কোণঠাসা, তাঁহাদের দলকে কি মানিয়া লইবেন ‘ভূমিপুত্র’গণ? এবং শেষাবধি, এনআরসি লইয়া শাসকবিরোধী ক্ষোভ কি মহাজোটের খাতায় জমা পড়িবে? প্রশ্নগুলি সহজ নহে, উত্তরও অজানা।
বস্তুত, এই বারের সম্মুখসমর কিছু ব্যতিক্রমী। অসমের নিরিখে, নির্বাচনী রাজনীতির হিসাবেও। পাঁচ বৎসর নির্বিঘ্নে সরকার চালাইয়াছে বিজেপি, ‘অরুণোদয়’ ইত্যাদি কল্যাণ প্রকল্পে গরিব জনগণের নিকট অর্থসহায়তা পৌঁছাইয়াছে, তবু অসম পুনর্দখলের বিষয়ে তাহারা আট আনাও নিশ্চিত নহে। বিপ্রতীপে সিএএ লইয়া খেপিয়া উঠিয়াছিল সমগ্র অসমিয়া জাতি, প্রতিবাদের ঝড় উঠিয়াছিল রাজ্যের প্রতিটি কোণে, প্রধানমন্ত্রীর সফর পর্যন্ত বাতিল হইয়াছিল, কিন্তু এই ক্ষোভ ভোটে রূপান্তরিত হইবার ব্যাপারে তাদৃশ আশাবাদী নহেন কংগ্রেস নেতারা। অতএব, আবারও সেই পরিচিতিকেন্দ্রিক রাজনীতির শরণ, আবারও অপরতার নির্মাণ, আবারও জাতি ও ধর্মভিত্তিক বিভাজন। আবারও এনআরসি। এক বার উনিশ লক্ষ মানুষের জীবন লইয়া ছেলেখেলা করিবার পরেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy