নেই তাই পাচ্ছ, থাকলে কোথা পেতে— পুরনো সেই ধাঁধা মনে করিয়ে দিল কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের রিপোর্ট। তাতে দেখা যাচ্ছে, মেয়েদের বেকারত্বের হার এ রাজ্যে সর্বনিম্ন। ২০২১ সালের এপ্রিল-জুনে সব বয়সি মেয়েদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল মাত্র পাঁচ শতাংশ। আর ১৫-২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে তা সাড়ে দশ শতাংশ। এমনকি এই রাজ্যেরই অতীত হারের চাইতে তা কম— ২০২০ সালের এপ্রিল-জুনে রাজ্যের মেয়েদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, এই আপাত ‘উন্নতি’ বস্তুত এক গভীর সঙ্কটের ইশারা। যত মানুষ কর্মপ্রার্থী, আর তাঁদের মধ্যে যত কাজ পাননি, তাঁদের অনুপাতই স্থির করে বেকারত্বের হার। পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের বেকারত্বের হার আগের তুলনায় কম হওয়ার অর্থ এই নয় যে, বহু মেয়ের ফের নিয়োগ হয়েছে কাজে। তার অর্থ, বহু মেয়ে কাজ খোঁজাই ছেড়ে দিচ্ছেন, তাঁরা আর কর্মপ্রার্থী হয়ে শ্রমের বাজারে আসছেন না। অতিমারি আর লকডাউনের জেরে ভারতে পুরুষ-মহিলা সকলেই কাজ হারিয়েছেন, কিন্তু সেই সঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে মেয়েদের ক্ষেত্রে। লকডাউন উঠে গেলে অধিকাংশ পুরুষ কাজ ফিরে পেয়েছেন, মেয়েরা পাননি। এই কাজ-হারানো মেয়েদের একটি বড় অংশ কাজের বাজারে আর নেই, সেই জন্যই পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের বেকারত্বের সর্বনিম্ন হার পাচ্ছে কেন্দ্রীয় সমীক্ষা।
কেন মেয়েদের সরে যেতে হচ্ছে কাজের বাজার থেকে গৃহস্থালির পারিশ্রমিকহীন কাজের ক্ষেত্রে? তার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ দেখা যাচ্ছে। এক, অর্থনীতির মন্দ দশার জন্য সার্বিক ভাবেই কাজের সুযোগ কমেছে। ব্যবসায় মন্দা, শ্রমিকও আগের চাইতে সুলভ, তাই কমেছে মজুরিও। বহু মেয়ের কাছে যা কাজে নিযুক্তির আকর্ষণ কমিয়ে দিয়েছে। দুই, যে ধরনের কাজে মেয়েদের নিয়োগ বেশি হত, সেই আতিথেয়তা, পরিষেবা ক্ষেত্রগুলি কোভিডের আঘাতে সবচেয়ে সঙ্কুচিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে দরিদ্র মেয়েদের নিয়োগের একটি প্রধান ক্ষেত্র গৃহশ্রম। সংক্রমণের ভয়ে গৃহপরিচারিকাদের ব্যাপক হারে ছাঁটাই করা হয়েছে কোভিড মরসুমে, অনেকেই টিকা পাননি বলে কাজে ফিরতে পারেননি। তৃতীয়ত, দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুসন্তানের দৈনন্দিন পরিচর্যা, গৃহে প্রত্যাগত পুরুষরা এবং কোভিড-সহ নানা অসুখে আক্রান্ত বৃদ্ধদের সেবাযত্ন, এমন বাড়তি নানা গৃহস্থালির কাজ মেয়েদের ব্যস্ত রেখেছে। গৃহশ্রমের বোঝা মেয়েদের উপরে চাপানো ভারতের এক দীর্ঘ দিনের প্রথা। লকডাউনে কর্মহীন পুরুষদের উপস্থিতিও সে অভ্যাসের কোনও পরিবর্তন করেনি।
এর ফলে আজ এক এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে, বাংলার পাঁচ জন কর্মক্ষম মেয়ের মাত্র এক জন কাজের বাজারে অংশগ্রহণ করে রোজগার করতে পারছেন, যেখানে চার জন পুরুষের তিন জনই রোজগার করছেন। এই বিপুল অসাম্য যে মেয়েদের আর্থ-সামাজিক সুরক্ষা ও মর্যাদাকে আঘাত করবে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষিত, দক্ষ, পরিশ্রমী হয়েও শুধুমাত্র মেয়ে হওয়ার জন্য কাজের বাজার থেকে মেয়েরা কেন বাদ পড়ছেন, সে প্রশ্নকে সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছে রাজনীতিও। মেয়েদের অনুদানের প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে, কিন্তু তাঁরা কাজে ফিরবেন কী করে, সে প্রসঙ্গে রাজ্য নিরুত্তর। এই সমীক্ষা সেই প্রশ্ন ফের তুলে দিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy