Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
KMC Election 2021

কালি

মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ভুলিয়া যান নাই, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও জবরদস্তির মাসুল পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে তাঁহাদের গনিয়া দিতে হইয়াছিল।

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:০৪
Share: Save:

কলিকাতার পুরভোটকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উভয়েই ‘উৎসব’-এর সহিত তুলনা করিয়াছেন। রবিবার শহরের নানা এলাকায় বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি ও অনুগামীদের সংঘাত, ছাপ্পা ভোট, গোলমালের কারণে ভোটদানের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত, হুমকি, মারধর, বোমাবাজি ইত্যাদির যে সব অভিযোগ উঠিয়াছে, অশান্তি এবং অনাচারের যে সকল চিত্র সংবাদমাধ্যম তথা সাংবাদিকের দৃষ্টিতে ও ক্যামেরায় ধরা পড়িয়াছে, তাহার পরে শাসক দলের কর্ণধারদের বাণী শুনিয়া হতবাক নাগরিক ভাবিতেই পারেন— তবে কি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির জন্য নূতন অভিধান রচিত হইয়াছে, যে অভিধানে উৎসব-এর সংজ্ঞা বদলাইয়া গিয়াছে? ‘ভোট মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ছিল’ বা ‘বড় রকমের কোনও অশান্তি হয় নাই’ গোছের যে সকল শংসাপত্র রাজ্য প্রশাসন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বয়ানে প্রচারিত, সেইগুলিও অনুরূপ বিস্ময় সৃষ্টি করিতে পারে— বড় রকমের অশান্তি, ধুন্ধুমার লড়াই, বিস্তর খুন-জখম ইত্যাদিই কি তবে শান্তি-অশান্তি বিচারের মাপকাঠি? রবিবার তো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিল না, ছিল একটি পুরসভার নির্বাচন, তাহাতে আদৌ অশান্তি হইবে কেন, ভোটে কারচুপি বা জবরদস্তির অভিযোগই বা উঠিবে কেন?

জবাব দিবার প্রধান দায় অবশ্যই রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের। প্রথমত, নৈতিক দায়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করা তাঁহাদের কর্তব্য, তাহাই প্রশাসন তথা প্রকৃষ্ট শাসন-এর আবশ্যিক শর্ত, যে শর্ত পালন করিবার জন্য তাঁহারা জনসাধারণের নিকট দায়বদ্ধ। কিন্তু দায় কেবল নৈতিক নহে, বাস্তব পরিস্থিতিতে ব্যবহারিক দায়ও বিপুল। নির্বাচনী অনাচার ও উপদ্রবের অধিকাংশ অভিযোগই শাসক দলের বিরুদ্ধে, সেই অভিযোগের জবাবে ‘প্রমাণ দিলে অপরাধীকে দল হইতে বহিষ্কার করিব’ বলিয়া দলপতিরা পার পাইতে পারেন না। প্রমাণ দিবার দায় তাঁহারা কাহার উপর চাপাইতেছেন? বিভিন্ন বুথে নজরদার ক্যামেরার মুখ ছাদের অথবা মেঝের দিকে ঘুরাইয়া দেওয়ার যে অভিযোগ তাহা কি প্রমাণ লোপাটের অভিসন্ধিকেই চিনাইয়া দেয় না? পাড়ায় পাড়ায় যাহাদের নিয়ম ভাঙিতে দেখা গিয়াছে, সেই অন্যায়ের ছবি উঠিয়াছে এবং প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাদের শনাক্ত করিবার কাজটি কি শাসক দল তথা প্রশাসনের পরিচালকদের নহে? সদিচ্ছা প্রমাণ করিতে চাহিলে ছেঁদো কথা বলিয়া দায় এড়াইবার বদলে তাঁহারা অবিলম্বে তৎপর হউন, অপরাধীদের শনাক্ত করিয়া শাস্তির ব্যবস্থা করুন, তাহা হইলেই নাগরিকের ভরসা ফিরিতে পারে। গণতান্ত্রিক প্রশাসনের ভরসা।

সেই ভরসা নষ্ট হইলে দীর্ঘমেয়াদে শাসকদেরও ক্ষতি। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ভুলিয়া যান নাই, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও জবরদস্তির মাসুল পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে তাঁহাদের গনিয়া দিতে হইয়াছিল। বিরোধীদের নির্মূল করিবার সেই উদগ্র অভিযান গণতন্ত্রের প্রতি শাসকদের অশ্রদ্ধার বিজ্ঞাপন হিসাবেই নাগরিকদের নিকট প্রতিভাত হইয়াছিল। পুরনির্বাচনের ‘উৎসব’ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করিবে না। মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদের ‘নাটক করিবার’ জন্য তিরস্কার করিয়াছেন। বিরোধীদের অভিযোগে নাটকীয়তা থাকিতেই পারে, তিনি নিজে বিরোধী থাকিবার কালে নাটক করেন নাই এমন কথা তাঁহার অতি বড় ভক্তও সৎ ভাবে বলিতে পারিবেন না। সেই আমলে নির্বাচনে, বিশেষত পুরনির্বাচনে শাসকের অনাচারের ঘটনা বিরল ছিল না, তাহাও অনস্বীকার্য। কিন্তু তাহাতে শাসকের দায় কিছুমাত্র কমে না। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন আসিলেই অশান্তি আসে— এই সত্যের কলঙ্ক পশ্চিমবঙ্গ যাঁহারা চালাইতেছেন তাঁহাদেরই। রবিবারের ভোটপর্বে তাঁহাদের মূর্তিতে আরও এক পোঁচ কালি লাগিল।

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy