চার সপ্তাহ, মানে এক মাস। একটি গোটা মাস যুদ্ধের মধ্যে কাটাচ্ছে ইউরোপ। এখনও তা চলবে কত দিন, কত সপ্তাহ— কেউ জানে না। নামে দামে বড়সড় দেশ যারা গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার অহঙ্কার প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়, তারা নিজেরাই এমন এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালনা করছে, কিংবা তার ক্ষেত্র সযত্নে প্রস্তুত করেছে— ভাবতে বিস্ময়বোধ হয়। তবে একটি বিষয়ে সন্দেহ নেই। এই একবিংশ শতকীয় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ আপাতদৃষ্টিতে শেষ হলেও বাস্তবে সহজে শেষ হবে না। রাশিয়া অস্ত্র সংবরণ করতে রাজি হলেও দূরপ্রসারী মীমাংসার দিশা মিলবে না। কারণ, ইতিমধ্যেই অবিশ্বাস ও আক্রমণপরায়ণতার যে চূড়ান্ত নিদর্শন স্থাপিত হয়ে গেল এই যুদ্ধে, বিশ্বের বহু দেশই পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়েছে তাতে। ‘সকলেই সকলকে আড়চোখে দেখার’ পরিবেশ নতুন করে অনেকখানি দৃঢ়প্রবিষ্ট হল। এই পরিবেশের শরিক হল ভারতও। ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকেও আবার নতুন করে নিজের কূটনীতির অন্দরবাহির পর্যালোচনা করতে হবে। নিজের ঘোষিত অবস্থানের ফল কী দাঁড়াল, কোনও ভাবে তাকে আবার পরিমার্জন করতে হবে কি না, এই সব নিয়ে দিল্লি ইতিমধ্যেই উদ্বেগগ্রস্ত।
প্রক্রিয়াটি যে শুরু হয়েছে, সেটা বোঝা যায় দিল্লিতে বিদেশি সরকারি অভ্যাগতদের অবতরণের ঘনঘটা দেখে। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও সরকারি কর্তাদের দেখা যাচ্ছে রাজধানীতে। দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক নানা ধরনের আলোচনায় যোগ দিতে এসেছেন তাঁরা। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক ঘটছে। ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সামনে। আমেরিকার আন্ডারসেক্রেটারি অব স্টেট-এর দিল্লি সফর হয়ে গেল, ইউরোপের নানা দেশের বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সফরও। সন্দেহ নেই, অধিকাংশ দেশেরই মনোভাব— রাশিয়ার প্রতি ভারত নরম মনোভাব দেখানোর ফলে তাঁদের নিজেদের দেশের সঙ্গেও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে চাপ পড়তে পারে। ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখেশুনে একটি কথা বলাই যায়। শেষ অবধি ফল যা-ই হোক না কেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে এবং সম্পর্ক রক্ষা করতে যে বিভিন্ন মহাদেশের অনেক দেশ আগ্রহী, এই আশার আলোটি মাথায় রেখেই কিন্তু দিল্লিকে ভবিষ্যৎ কূটনীতির নীল নকশায় মন দিতে হবে। কেননা, আশার মধ্যে আশা পূরণের দায়িত্বটিও থাকে।
রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ সুসম্পর্কের ইতিহাসের বাইরেও অনেকগুলি দেশের সঙ্গে ভারতের নির্ভরতার সম্পর্ক— ভা রতের ভূরাজনীতি বোঝেন এমন যে কোনও মানুষই তা স্বীকার করবেন। দিল্লির নকশায় রুশ খনিজ তেলের প্রয়োজন ও আকর্ষণ তো আছেই, কিন্তু যে প্রেসিডেন্ট অবলীলায় নিউক্লিয়ার হুমকি দিতে পারেন, তাঁর বিশ্ব স্ত বরকন্দাজ বনার মতো গুরুতর কি না সেই আকর্ষণ— ভাবতে হবে। নির্জোট আন্দোলনের ঐতিহ্য ভাবার দরকার নেই, কিন্তু পরমাণু-প্রশ্নে দায়বদ্ধতা থেকেই কিন্তু ভারতের সতর্ক হওয়া জরুরি। রাসায়নিক ও জৈব যুদ্ধ চালানোর বিষয়েও যে মস্কো ‘অগ্রসর’, তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলেছে। ভারতের কাছে নিজের স্বার্থচিন্তাটি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেই স্বার্থের দিক দিয়েও সভ্যতার নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়াসী হওয়ার যুক্তি যথেষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy