Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Tripura Municipal Election 2021

আবারও বার্তা

পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা যেন গত কয়েক মাস আয়নার মতো হইয়া উঠিয়াছিল, এক স্থানের বিরোধী অন্য স্থানের শাসক হিসাবে রাজনৈতিক প্রতিশোধে মাতিয়াছিল।

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:৩৫
Share: Save:

খেলা জমিল না। ত্রিপুরার পুরনির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন ভাবে জিতিয়া গেল। তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল উদ্দীপনায় শাসক দলকে বেগ দিতে মাঠে নামিয়া ‘খেলা হ‌ইবে’ ঘোষণা করিলেও শেষ পর্যন্ত আসনপ্রাপ্তির খাতায় নগণ্য থাকিয়া গেল। পূর্ববর্তী শাসক দল, এবং অধুনা দুর্বল বিরোধী, সিপিএমও তথৈবচ। অর্থাৎ, পরবর্তী পর্বেও কার্যত বিরোধীহীন ভাবেই বিজেপি ত্রিপুরা শাসন করিতে চলিয়াছে। ইহাই ছিল লক্ষ্য। কেবল জিতিলে চলিবে না, এমন ভাবে জিতিতে হইবে, যাহাতে বিরোধীদের মেরুদণ্ডটি ভাঙিয়া দেওয়া যায়। কেবল আসন পাইলে হইবে না, ভয় দেখাইয়া এমন পরিবেশ তৈরি করিতে হইবে যাহাতে বিরোধিতার টুঁ শব্দটি শোনা না যায়। এই লক্ষ্যের অভিমুখে অগ্রসর হইবার জন্যই এত হিংসা, এত রক্তক্ষয়, পরিকল্পনামাফিক এত ভয়ানক পরিবেশ নির্মাণ করা। বাস্তবিক, ভোটের দিন পুলিশ অফিসাররা নিজেরাই বিস্মিত, সে দিন তাঁহারা অত কম মারপিট, রক্তারক্তি আশা করেন নাই। হয়তো ‘শ্মশানের শান্তি’ বিষয়টি তাঁহারা ভুলিয়া গিয়াছিলেন। আগে হইতেই হিংসার প্লাবন বহাইয়া দিলে যে উঠিয়া দাঁড়াইবার ক্ষমতাই বিনষ্ট করিয়া দেওয়া যায়, এই ভীষণ সত্যটি মনে রাখেন নাই।

লক্ষণীয়, ভোটের ফল বাহির হইবার দুই দিনের মধ্যে জানা গেল, দেশের উচ্চতম আদালত কেন্দ্র এবং রাজ্যকে আলাদা ভাবে ত্রিপুরা-হিংসার তদন্ত করিতে বলিয়াছে। কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি নামিয়া আসা নির্যাতন নহে, বহু সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীকে প্রবল মারধর করা হইয়াছে, অনেকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ আনিয়া জীবনের মতো তাঁহাদের জেলে পুরিবার ব্যবস্থা হইয়াছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারি অত্যাচারের খবর প্রচারের ‘অপরাধে’ তাঁহাদের ‘দেশদ্রোহী’ বলিয়া গ্রেফতার করা হইয়াছে। ইতিমধ্যে ইউএপিএ আইনটির যথেচ্ছ রাজনীতি-প্রণোদিত প্রয়োগ লইয়া বহু আলোচনা ও বিশ্লেষণ হইলেও স্পষ্ট, নরেন্দ্র মোদী সরকারের তাহাতে সামান্য হেলদোলও ঘটে নাই। ত্রিপুরাতে সাংবাদিকদের উপর গত কয়েক মাসে যে ভয়াবহ হামলা ঘটিয়াছে, গোটা দেশের পক্ষেই তা ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ। নিশ্চিত ভাবে ত্রিপুরার হিংসাকাণ্ড আসলে সমগ্র দেশের বিরোধীদের উদ্দেশে একটি স্পষ্ট বার্তা। আর এইখানেই ত্রিপুরাপর্বের গুরুত্ব। দেশের পূর্ব সীমান্তের ক্ষুদ্রাকার রাজ্য বলিয়া বিজেপি মোটেই তাহাকে হালকা ভাবে লয় নাই। ত্রিপুরার ভোট তাহার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল মোদী-ভারতে বিজেপির কর্মপদ্ধতির ধারাবাহিকতা এবং বিশিষ্টতা আরও এক বার এখানে স্পষ্ট করিয়া দিবার জন্য।

ইহার অর্থ এই নহে যে দেশের অন্যত্র শাসক দল গণতান্ত্রিকতার আদর্শমাফিক চলিয়া থাকে। অতীতে বামফ্রন্ট এবং বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস শাসনাধীন পশ্চিমবঙ্গকে এই সত্য আর নূতন করিয়া মনে করাইয়া দিতে হইবে না। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যকে যে ভাবে বিরোধীশূন্য করিয়া ফেলিবার জন্য হিংসাযজ্ঞ সাধিত হইয়াছিল, এই রাজ্যের হিংসাদীর্ণ ইতিহাসেও তাহা একটি অবিস্মরণীয় বিন্দু। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা যেন গত কয়েক মাস আয়নার মতো হইয়া উঠিয়াছিল, এক স্থানের বিরোধী অন্য স্থানের শাসক হিসাবে রাজনৈতিক প্রতিশোধে মাতিয়াছিল। তবে, এতৎসত্ত্বেও, বিজেপির কর্মপদ্ধতিকে বিশিষ্ট না বলিয়া উপায় নাই। তাহার প্রধান প্রমাণ, ইউএপিএ। কী ভাবে সকল রাষ্ট্রীয় যন্ত্র, প্রতিষ্ঠান এবং আইনকে বিকৃত করিয়া সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে কাজে লাগাইয়া, মুক্ত রাজনৈতিক পরিসর বিনাশ করিয়া, কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহার যে নিদর্শন বর্তমান ভারতে দেখা যাইতেছে, নানা দিক দিয়াই তাহা অভূতপূর্ব। ত্রিপুরা নির্বাচন ২০২১ এই ধারারই আর একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

অন্য বিষয়গুলি:

Tripura Municipal Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy