তবে কি নাগরিকের কোভিড-যন্ত্রণা সরকারকে স্পর্শ করে নাই? না কি কেন্দ্রীয় সরকার সত্যই মনে করে, কোভিড টিকার প্রয়োজন কমিয়াছে? শিশুদের টিকা অধিকাংশই বাকি, তরুণদের টিকাদান অসম্পূর্ণ, বয়স্কদের বুস্টার ডোজ় দিবার কাজ সদ্য শুরু হইয়াছে মাত্র। অথচ, বাজেটে টিকার বরাদ্দ পঁচাশি শতাংশ কমিয়াছে। এই বৎসর টিকার জন্য ৩৯ হাজার কোটি টাকা খরচ হইলেও আগামী অর্থবর্ষে ধার্য হইয়াছে মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট বক্তৃতায় সকল নাগরিকের টিকাদানের দায় স্বীকার করিলে অন্তত এই প্রত্যয় জাগিত যে, দেশের সরকার ও নাগরিক একত্রে এই মহাসঙ্কটকে অতিক্রম করিতে প্রস্তুত। সেই মনোবল গড়িয়া উঠিবার পূর্বেই ভাঙিয়াছে। এই অযৌক্তিক কার্পণ্য স্বাস্থ্য বাজেটের সকল খাতে প্রতিফলিত হইয়াছে। স্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ ও মেডিক্যাল গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ে নাই বলিলেই ঠিক হয়— মাত্র ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চোরাবালিতে অদৃশ্য হইবে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কারে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সুযোগ মিলিবে না। তৎসহ প্রশ্ন জাগিল, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিতে (২০১৭) স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বাড়াইয়া ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপি-র অন্তত আড়াই শতাংশ করিবার যে অঙ্গীকার কেন্দ্র করিয়াছিল, তাহা কার্যে পরিণত হইবার সম্ভাবনা কতটুকু? ২০২১-২২ সালে প্রথম স্বাস্থ্যে বরাদ্দ জিডিপি-র দুই শতাংশ ছাড়াইয়াছিল, এই বাজেটে তাহা ফের কমিয়া পরিচিত স্তরে নামিয়া আসিয়াছে।
কিন্তু প্রয়োজন কমিয়াছে কি? কোভিড অতিমারি কেবল ভাইরাসের শক্তি দেখায় নাই, ভারতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতাও দেখাইয়াছে। জনপদে রোগের বিস্তারে নজরদারি করিবার মতো যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী নাই, নমুনা পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট ল্যাবরেটরি নাই, ব্লক ও জেলাস্তরের হাসপাতালগুলিতে সঙ্কটাপন্ন রোগীর চিকিৎসার যথেষ্ট ব্যবস্থা নাই, অক্সিজেন প্রভৃতি সরঞ্জাম দ্রুত প্রস্তুত করিবার পরিকাঠামো নাই— এই সকল অভাবই কি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় নাই? অতিমারির দিনগুলিতে সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতা, উভয়ই স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। তৎসত্ত্বেও বরাদ্দ বাড়ে নাই। ইহা কি কেবলই স্বাস্থ্যের প্রতি সরকারের অবহেলা, না কি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয় করিবার সামর্থ্যেরও অভাব— অর্থাভাব নহে, ব্যয় করিয়া উঠিতে পারিবার অক্ষমতা? স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করিবার জন্য গত বৎসর ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনে পাঁচ বৎসরে চৌষট্টি হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের অঙ্গীকার করিয়াছিল কেন্দ্র। এই বৎসর তাহাতে খরচ হইয়াছে মাত্র ৯০০ কোটি টাকা। হয়তো সেই কারণেই আগামী অর্থবর্ষে কেবল ছয় হাজার কোটি টাকা ধার্য হইয়াছে। ব্যয়ের ক্ষমতা বাড়াইতে হইলেও জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিষেবায় অধিক বিনিয়োগ প্রয়োজন, বিশেষত নানা স্তরে নানাবিধ প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ না করিলেই নয়। ব্যয়ের এই গতি কখনওই পরিকাঠামোর বিস্তার, পরিষেবায় উন্নতি আনিতে পারিবে না। বিশেষত মফস্সল ও গ্রামে অচিকিৎসা, অপচিকিৎসায় প্রাণ হারাইবার ধারা অব্যাহত থাকিবে।
জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা যে কোনও দেশেই এক জটিল কাজ, উন্নত দেশগুলিও অতিমারি মোকাবিলা করিতে গিয়া পর্যুদস্ত হইতেছে। বিপুল স্বাস্থ্য সঙ্কটের সম্মুখে নাগরিকের সকল চাহিদাই ভারত সরকার মিটাইতে পারিবে, এমন প্রত্যাশা যুক্তিযুক্ত নহে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবার কোন দিকগুলি প্রাধান্য পাইবে এবং কেন, সেই বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা নাগরিকের নিকট প্রকাশ করিতে হইবে সরকারকে। এই বাজেট দেখিলে মনে হয়, চিকিৎসাপ্রার্থীর তথ্যসম্বলিত ডিজিটাল তথ্যভান্ডারই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তাই তাহাতে বরাদ্দ বাড়িয়াছে সাড়ে পাঁচশো শতাংশ। গণতন্ত্রের এমন অসুখ সারিবে কোন বিশল্যকরণীতে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy