পাতে আগুন লাগিয়াছে। সরিষার তৈলের দাম লিটারপিছু দুইশত টাকা ছাড়াইয়াছে। অন্যান্য তেলের দরও সমানেই বাড়িয়া চলিতেছে। পোস্ত এমনই মহার্ঘ হইয়াছে যে, তাহাকে গ্রামের পরিবর্তে ভরির হিসাবে বেচিলে সুবিধা হয়। অবশ্য, তাহার মূল্যবৃদ্ধির পিছনে নাকি আন্তর্জাতিক কারণ রহিয়াছে— আফগানিস্তান টলোমলো হওয়াতেই এই কাণ্ড। কিন্তু, যাহার জন্য বিদেশি বাজারের দিকে চাহিবার প্রয়োজনমাত্র নাই, সেই ডালের দরও ঊর্ধ্বমুখী। মাছ-মাংস-আনাজ, মানুষ যে জিনিসেই হাত দিতে চাহে, ফোস্কা পড়িয়া যায়। এমন অবস্থা কত কাল চলিবে, সেই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করিতেছে দুইটি ভিন্নমুখী বলের উপর। এক দিকে আছে কেন্দ্রীয় সরকার। যে কোনও সরকারের নিকটই মূল্যস্ফীতির বাড়া আর্থিক শত্রু নাই— এবং, সব গোত্রের মূল্যস্ফীতির মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি রাজনৈতিক ভাবে সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক। কারণ, মূল্যস্ফীতির আঁচ সরাসরি মানুষের গায়ে লাগে, এবং সেই আঁচের তীব্রতার মাপকাঠিতেই মানুষ সরকারের আর্থিক সাফল্য-ব্যর্থতা পরিমাপ করিয়া থাকে। মূলত এই আঁচেই ইউপিএ সরকারের কপাল ঝলসাইয়া গিয়াছিল। সুতরাং, সরকার যে কোনও উপায়ে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করিবে— কিছু পণ্যের আমদানি বাড়াইয়া, কিছুর রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়া, এফসিআই-এর গুদাম হইতে চাল-গম বাজারে ছাড়িয়া, এমনকি কোনও কোনও পণ্যের দামের ঊর্ধ্বসীমা বাঁধিয়া দিয়া— দাম নিয়ন্ত্রণের প্রত্যক্ষ অস্ত্র সরকারের হাতে একাধিক। কিন্তু, যে বিপরীতমুখী বলটি সরকারের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ক্রিয়া করিবে, তাহাও বহুলাংশে সরকারেরই সৃষ্টি। এই দড়ি-টানাটানিতে যে পক্ষ জিতিবে, মূল্যস্ফীতির হার সেই দিকেই ঢলিবে। তবে ইতিহাস সাক্ষী, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও সরকারেরই রেকর্ড খুব উজ্জ্বল নহে।
তাহার প্রধান কারণ, যে বলগুলি মূল্যস্ফীতির হারকে কমিতে বাধা দেয়, সেইগুলি জোরদার। এবং, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের কৃতকর্মের ফল। ভারতে যেমন ডিজ়েলের দাম। প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেই কম-বেশি পরিবহণ প্রয়োজন। ডিজ়েলের দাম লিটারপিছু নব্বই টাকায় পৌঁছাইয়াছে— ভারতের ইতিহাসে যাহা অভূতপূর্ব। ফলে, পরিবহণ ব্যয়বাবদ প্রত্যক্ষ ভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িতেছে; আবার, পরিবহণ ব্যয় বাড়িবার ফলে সার্বিক যে মূল্যস্ফীতি ঘটিতেছে, খাদ্যপণ্যের বাজারদরে তাহারও আঁচ লাগিতেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম তুলনায় কম, তখনও দেশের বাজারে এমন চড়া দাম এবং তাহার ফলের দায় সরকারকে লইতে হইবে বইকি। আবার, অতিমারির ফলে দেশের জোগান-শৃঙ্খলে যে ধাক্কা লাগিয়াছিল, তাহা এখনও মেরামত হয় নাই। ফলে, খাদ্যপণ্য বাজারে পৌঁছাইবার প্রক্রিয়াটি এখনও বাধাহীন নহে। কেহ বলিতে পারেন যে, এই ধাক্কাটি অতিমারির তুলনায় পুরাতন— জিএসটি প্রবর্তনের পরই বাজারের জোগান-শৃঙ্খলের যে ক্ষতি হইয়াছিল, এখনও তাহার মাসুল গনিতে হইতেছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে অত্যাবশ্যক পণ্য আইন বিলোপের কথাও উঠিতেছে। গত বৎসর সরকার অতিমারির ক্ষতির মোকাবিলা করিবার অজুহাতে এই আইনটি তুলিয়া দেয়। ফলে, মজুতদারদের নিকট এখন এক অর্থে সরকারি আশ্বাস আছে যে, কোনও পণ্যের দাম অল্প সময়ের মধ্যে একেবারে দ্বিগুণ না হইয়া যাওয়া অবধি সরকার হস্তক্ষেপ করিবে না। এমন আশ্বাসের একটিই অর্থ— মজুতদাররা সেই সীমার মধ্যে থাকিয়া যথেচ্ছ দাম বাড়াইবার ব্যবস্থা করিবেন। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে পদক্ষেপগুলিই করুক না কেন, এই বিষয়গুলি তাহার উপর বিপরীত বল প্রয়োগ করিবে। অর্থব্যবস্থা সামলাইবার ক্ষেত্রে গত সাত বৎসরে এই সরকার যতখানি অদক্ষতার প্রমাণ দিয়াছে, তাহাতে এই যুদ্ধজয় বিষয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy