Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
BJP

দুর্বিষহ

ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভাবটি ঠিক পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিরই মতো, যত বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর, তত তাহাদের রাজনৈতিক লাভ।

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২০
Share: Save:

রাজধর্ম কাহাকে বলে, আজিকার পৃথিবীতে, এবং ভারতে, সেই বিষয়ে ঐকমত্যের আশা করাই বাতুলতা। কিন্তু কিছু কিছু কাজকে যে কোনও মতেই রাজধর্ম বলা যায় না, বরং তাহার সম্পূর্ণ বিপরীত বলা চলে— এই প্রশ্নেও একটি সাধারণ মতৈক্য না থাকিলে নাগরিকের পক্ষে জীবন দুর্বিষহ। কোনও রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ হইতে যদি শাসিত সমাজের একাংশের উপর মাত্রাছাড়া হিংসা লেলাইয়া দেওয়া হয়, এবং সরকার তাহা থামাইতে রাজি না হয়, তাহার একটিই অভিধা: সরকারি গুন্ডামি। এই মুহূর্তে ত্রিপুরা রাজ্যে যাহা চলিতেছে, তাহা সেই সরকারি গুন্ডামির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিজেপি দলের কর্মীরা বিরোধীদের বাড়িতে আগুন লাগাইতেছেন, গাড়ি পুড়াইতেছেন, নির্যাতনের হুমকি দিতেছেন, সংবাদপত্রের অফিসে হামলা চালাইতেছেন। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষও পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পার হইয়া ত্রিপুরায় পৌঁছাইয়াছে। পুলিশ, প্রত্যাশিত ভাবেই, নিষ্ক্রিয়। বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা হাইওয়ে অবরুদ্ধ করিলেও সেখানকার পুলিশ অন্য দিকে তাকাইয়া নির্বিকার থাকাই সাব্যস্ত করে। বাস্তবিক, পরিস্থিতি এখন যে স্তরে, তাহাতে ত্রিপুরার সীমানা ছাড়াইয়া প্রতিবাদ অন্যত্রও ছড়াইয়া পড়া উচিত ছিল, কিন্তু তাহার পরিবর্তে কেবল ঘটনার প্রত্যক্ষ অভিঘাতে দলীয় ভিত্তিতে হইচই ছাড়া অন্য প্রতিবাদ নিতান্ত বিরল। প্রচারমাধ্যম হইতে শুরু করিয়া প্রগতিশীল নাগরিক সমাজ সকলেই চুপ করিয়া দ্রৌপদীর লাঞ্ছনার মতো দেখিতেছেন ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের নামে কুৎসাপ্রচারের ঘটা। শুনিতেছেন রুচিহীন মন্তব্য যে— কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, কিংবা বাংলাদেশে গিয়া শ্রীযুক্ত সরকার আশ্রয় লইলেই পারেন। বাংলাদেশের উল্লেখ অবশ্যই অকারণ নহে। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ধ্যানধারণার প্রতি বিজেপির নিজস্ব ব্যঙ্গের অভ্রান্ত স্বাক্ষর তাহাতে।

ত্রিপুরার রাজনৈতিক পরিবেশে এই অতিরিক্ত উত্তাপের একটি হেতু কি সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের সাম্প্রতিক নবকার্যক্রম? প্রশ্নটি ভাবাইতেছে, কেননা অসম এবং ত্রিপুরায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তাঁহার দল যে ভাবে কোমর বাঁধিয়া নামিয়াছে, তাহার রাজনৈতিক ফলাফল এখনও স্পষ্ট নহে। নির্বাচনী সাফল্য ও রাজনৈতিক সাফল্য আলাদা বস্তু, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন পরীক্ষায় বিজেপির মার্কশিটই তাহার প্রমাণ। ত্রিপুরায় তৃণমূলের ভাবটি ঠিক পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিরই মতো, যত বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর, তত তাহাদের রাজনৈতিক লাভ। বলা যায় না, সেই লাভের খানিকটা ভোটের হিসাবেও প্রতিফলিত হইবার সম্ভাবনা!

দুই রাজ্যে দুই বিরোধী দলের মধ্যেই কেবল সাদৃশ্য নাই, শাসক দলের ভাবনাতেও কিছু নৈকট্য আছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনায় রাজ্য সরকার অন্ধ সাজিয়া থাকিয়াছে, কখনও এমনকি প্রচ্ছন্ন মদত দিয়াছে। শাসক দলের সমর্থকদের দাপটে বিভিন্ন জায়গায় এখনও অনেক বিজেপি সমর্থক ঘরছাড়া, কিংবা ঘরেই ভয়ের আচ্ছাদনে অবরুদ্ধ। তবে কিনা, পশ্চিমবঙ্গের ভোট-পরবর্তী হিংসা এবং তাহাতে শাসক দলের মদতের অভিযোগ গোটা দেশের সংবাদ হইয়াছে, সর্বোচ্চ আদালতে তাহার বিচার চলিতেছে, কেন্দ্রীয় সরকার তাহা হইতে রাজনৈতিক লাভ নিষ্কাশন করিতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখে নাই। একই কথা ত্রিপুরা বিষয়ে বলা চলে না। সেখানে যে হেতু বিজেপির নিজেরই রাজত্ব, ত্রিপুরার সরকারি দৌরাত্ম্যের কোনও আশু বিরোধিতা হইবে, এমন আশা দূর অস্ত্। বিরোধী পক্ষের নীরবতার মাঝে দিল্লিতে সীতারাম ইয়েচুরি একক প্রয়াসে যতই প্রধানমন্ত্রীর কাছে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়ার অনুরোধ করুন, রাজ্য সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার এই ক্ষেত্রে রাজধর্ম পালন করিবে, এই আশাতে জলাঞ্জলি। নাগরিক প্রতিবাদের প্রত্যাশা ছাড়া গতি নাই। তবে তাহা প্রত্যাশাই মাত্র— কোনও ভরসা নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy