Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
OBC

ভাবের ঘরে

ওবিসির তালিকা ও সেই তালিকাভুক্ত লোকের সংখ্যা— দুই-ই বাস্তবকে জানিবার অপরিহার্য উপকরণ। তাহাকে ধামাচাপা দিয়া রাজনীতি চলিতে পারে না।

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ০৪:৪৮
Share: Save:

অগস্ট বিপ্লব বলিলে ভুল হইবে না। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) তালিকা রচনার সম্পূর্ণ অধিকার রাজ্যের হাতে তুলিয়া দিবার জন্য ১২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুই দিনের মধ্যে পাশ হইয়াছে। সংসদের বাদল অধিবেশনের নিরবচ্ছিন্ন তাণ্ডবের মধ্যে সমস্ত শিবিরের সাংসদরা এই একটি আইন প্রণয়নের জন্য যে ভাবে ‘দশে মিলি করি কাজ’ বলিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িলেন, তাহা আক্ষরিক অর্থেই চমকপ্রদ। উদ্যোগপর্বটিতেও চমক কম ছিল না। গত মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ওবিসি তালিকা নির্ধারণে রাজ্যের স্বাধিকার খর্বিত হয়। রাজ্যের অধিকার খর্ব হইলে কেন্দ্র বিচলিত হইয়া সেই অধিকার ফিরাইতে ব্যস্ত হইতেছে, এমন ঘটনা বর্তমান ভারতে সুলভ নহে। কেন্দ্রীয় বিজেপি শাসকরা তো রাজ্যের স্বাধিকার দশ হাতে কাড়িতে তৎপর। কিন্তু এই ক্ষেত্রে দেখা গেল, তাঁহারা দুই মাসের মধ্যে রাজ্যের ‘ক্ষমতায়ন’-এ বিল আনিয়া ফেলিলেন!

এই অ-সামান্য তৎপরতার কারণ কী? উত্তর: নির্বাচনী রাজনীতি। তিন দশক যাবৎ সেই রাজনীতিতে ওবিসি একটি জোরদার প্রকরণ। মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করিয়া বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ যে রাজনীতির পথ খুলিয়া দিয়াছিলেন, কার্যত সমস্ত দল সেই পথে চলিতে বাধ্য হইয়াছে, কারণ ওবিসি-র জাতিগত দাবিকে অস্বীকার করিলে ভোটের বাজারে লোকসানের আশঙ্কা প্রবল। এই জন্যই উত্তরপ্রদেশের আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রাখিয়া সংবিধান সংশোধনে তৎপর হইয়াছে বিজেপি। অতঃপর উচ্চকণ্ঠে প্রচার চলিবে: অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির উন্নতিবিধানে বিজেপি চেষ্টার ত্রুটি রাখে নাই। যোগী আদিত্যনাথ ইতিমধ্যেই এই আইনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাইয়াছেন। উল্লেখ্য: তাঁহার রাজ্যে ওবিসি ভোটের প্রধান দাবিদার সমাজবাদী পার্টি বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ।

এখন, ওবিসির মঙ্গলের জন্য যাঁহারা এতটা তৎপর, তাঁহারা রাজ্যে রাজ্যে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত লোকের সংখ্যা নির্ণয়ের জন্যও তৎপর হইবেন, ইহাই স্বাভাবিক। কারণ, সেই সংখ্যা জানিলে সংরক্ষণের নীতি সুচারু ভাবে কার্যকর করা যায়, ওবিসি বর্গের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধার সুষ্ঠু আয়োজনও করা যায়। এই সংখ্যা জানিবার বড় সুযোগ রহিয়াছে ২০২১-এর জনশুমারিতে। প্রত্যেক নাগরিকের নিকট বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের সময়েই জাতিপরিচয় সংক্রান্ত তথ্যও জানিয়া লইবার কাজটি করিয়া ফেলা যায়। কিন্তু সরকার জনশুমারির মধ্যে জাতিগণনায় নারাজ। অবশ্য ইহার জন্য কেবল তাঁহাদের দোষ দিলে অবিচার হইবে। স্বাধীন ভারতে জনশুমারিতে নাগরিকের জাতিপরিচয় জানিবার কাজটি বন্ধ করিয়া দেওয়া হয় এই যুক্তিতে যে, তাহাতে জাতপাতের বিভাজনকে স্বীকৃতি দেওয়া হইবে। স্বাধীনতার লগ্নে এই ধারণার মধ্যে হয়তো এক ধরনের রোম্যান্টিক নৈতিকতার প্রভাবই প্রবল ছিল, কিন্তু ক্রমশ ভারতীয় রাজনীতিতে জাতিপরিচয় যে বিপুল এবং সংঘাতবহুল গুরুত্ব অর্জন করিয়াছে, তাহাতে রাষ্ট্রের এই ‘জাতিপরিচয় জানিব না’ নীতি আজ কেবল অর্থহীন নহে, তঞ্চকতার শামিল। বস্তুত, ইউপিএ আমলে আর্থ-সামাজিক জাতিগণনার অনুমোদন দিয়া ভারতীয় রাষ্ট্র ইতিমধ্যে জাতিপরিচয় সম্পর্কে এই ছুতমার্গ পরিত্যাগও করিয়াছে। সন্দেহ নাই, জাতিগণনা শুরু হইলে রাজনীতিতে নূতন জটিলতা দেখা দিবে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর যে-সব অনুমানলব্ধ সংখ্যার ভিত্তিতে সংরক্ষণ চলিতেছে, সেগুলির যাথার্থ্য লইয়া বড় রকমের প্রশ্ন উঠিতে পারে। কিন্তু তাহা রাজনীতিরই অঙ্গ। জাতিপরিচয়ের প্রকৃত বাস্তবকে জানিতে হইবে। ওবিসির তালিকা ও সেই তালিকাভুক্ত লোকের সংখ্যা— দুই-ই বাস্তবকে জানিবার অপরিহার্য উপকরণ। তাহাকে ধামাচাপা দিয়া রাজনীতি চলিতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

OBC Reservation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy