কোভিড প্রতিষেধকের শংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রীর ছবি কেন থাকিবে? ইহাতে ব্যক্তির নিজস্ব পরিসরের মর্যাদাহানি হইতেছে, কারণ তিনি টিকা লইবার প্রমাণ হিসাবে সেই ছবি সঙ্গে রাখিতে বাধ্য হইতেছেন। সম্প্রতি এই মর্মে কেরল হাই কোর্টে মামলা ঠুকিয়াছিলেন তথ্য জানিবার জন-অধিকার আন্দোলনের সহিত সংশ্লিষ্ট এক নাগরিক। তাঁহার আরও অভিযোগ, টিকার নথিতে নরেন্দ্র মোদীর ছবি ছাপাইবার ব্যবস্থাটি রাজনৈতিক প্রচারের প্রকরণ, সুতরাং অনৈতিক। আদালত কেবল নালিশটি খারিজ করে নাই, আবেদনকারীকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করিয়াছে। মাননীয় বিচারপতির বক্তব্য: দেশের প্রধানমন্ত্রী দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে, তাঁহার সহিত মতবিরোধ থাকিতেই পারে, কিন্তু তাঁহাকে সম্মান করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। এই আবেদনে জনস্বার্থের প্রতিফলন আছে বলিয়া আদালত মনে করে না, উপরন্তু অবান্তর মামলায় হাই কোর্টের সময় নষ্ট করা হইয়াছে, অতএব মামলা খারিজ, তদুপরি জরিমানা। মহামান্য বিচারপতির নির্দেশ শিরোধার্য। জনস্বার্থের নামে তুচ্ছ বিষয়ে অভিযোগ তুলিবার যে প্রবণতাটির কথা তিনি উত্থাপন করিয়াছেন তাহাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই দেশে অবান্তর বা তুলনায় লঘু চরিত্রের জনস্বার্থ মামলায় আদালতের অমূল্য সময় নষ্ট হয়, তাহার ফলে বকেয়া মামলার স্তূপ আরও বাড়িয়া যায়, বিচারব্যবস্থা ও সমাজের তাহাতে অকল্যাণ। সুতরাং প্রকৃত জনস্বার্থেই এই ধরনের নালিশ বিষয়ে আদালতের কঠোর হওয়া কাম্য।
মামলা অপ্রয়োজনীয় হইলেও তাহার সূত্রে কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠিয়া আসে। প্রথমত, শংসাপত্রে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাপানো বেআইনি না হউক, তাহা কি সঙ্গত? শোভন? অন্যান্য দেশেও কোভিডের টিকা দেওয়া হইতেছে, প্রায় সর্বত্রই বিনা খরচে টিকা মিলিতেছে, অনেক দেশই ভারতের তুলনায় অগ্রবর্তীও, তাহারা সার্টিফিকেটে রাষ্ট্রনেতার শ্রীমুখ সংযোজন করে নাই! সরকারের যাহা প্রাথমিক কাজ, প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়া তাহার কৃতিত্ব দাবি করিতে হইবে কেন? টিকা লইতে দেশবাসীর উৎসাহ বর্ধনের অনেক উপায় আছে, এমন একটি ‘ব্যতিক্রমী’ উপায়ই বাছিয়া লইতে হইল? প্রশ্নটি বিশেষত প্রবল আকার ধারণ করে, কারণ নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার সরকার তথা দলের আচরণে প্রচারসর্বস্ব মানসিকতার ছাপ অতিমাত্রায় প্রকট। গত সাড়ে সাত বছরে তিলপরিমাণ কাজ করিয়া ভূরিপরিমাণ প্রচারের এক অ-পূর্ব ঐতিহ্য তাঁহারা রচনা করিয়াছেন, যাহা গৌরবের ঐতিহ্য নহে। তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে সরকার এবং দলের সীমারেখা বেমালুম মুছিয়া দিয়া সমস্ত বিষয়ে দল ও দলনেতাদের গরিমা কীর্তনের ধারা। মাননীয় বিচারপতি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করিবার কর্তব্য স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন। অবশ্যই তাহা জরুরি। তবে, সম্মানজনক আচরণ কি রাষ্ট্রনায়কদের নিকটেও প্রত্যাশিত নহে? যথার্থ সম্মান দাবি করিতে হয় না, তাহা আপন আচরণের দ্বারাই অর্জন করিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী নেহরু বিরোধীদের কতটা সম্মান করিতেন, কেরল হাই কোর্টের বিচারপতিও সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়াছেন। প্রতিষেধকের শংসাপত্রে নিজের ছবি ছাপাইবার কথা যে নেহরু স্বপ্নেও ভাবিতে পারিতেন না, সেই কথাটিও কিন্তু মাননীয় নরেন্দ্র মোদীকে স্মরণ করাইয়া দেওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy