ফাইল চিত্র।
লালবাজার বা কলিকাতা পুরসভার কেহ কি জুতা আবিষ্কার কবিতাটি পড়িয়াছেন? না পড়িলেও মনে করাইয়া দেওয়া যাইতে পারে। রাজার পায়ে যাহাতে ধুলা না লাগে তাহা লইয়া রাজ্যে হুলস্থুল পড়িয়াছিল। ধুলা ব্যতীত রাজার পদধুলা মিলিবে কী রূপে, মাটি না থাকিলে শস্য জন্মিবে কোথায়, এই সব বাহানা পার হইয়া সাড়ে সতেরো লক্ষ ঝাঁটা আসিয়াছিল, ধূলিঝড়ে অন্ধকার ঘনাইলে একুশ লক্ষ ভিস্তিওলার জলে সব কাদা হইয়াছিল। অতঃপর গোটা পৃথিবী চামড়ায় মুড়িবার পণ্ডিত-নিদানে যখন সকলে ব্যস্তসমস্ত, চর্মকার-প্রধান আসিয়া রাজার পা দুইটি চামড়ায় মুড়াইয়া দিলেন। সেই হইতে জুতার চল হইল, ধরা রক্ষা পাইল।
হঠাৎ রবীন্দ্র-রসকবিতা উদ্ধারের প্রয়োজন পড়িল কেন? হঠাৎ নহে, ঘটনার গুরুতর গুরুত্ব বিচারে। মা উড়ালপুলে উড়িয়া আসিয়া পড়া ঘুড়ির ভয়ঙ্কর চিনা মাঞ্জায় সাম্প্রতিক অতীতে একের পর এক বাইক-আরোহী দুর্ঘটনাগ্রস্ত হইয়াছেন, এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটিয়াছে। তাহারই জেরে কলিকাতা পুলিশ পুরসভাকে উড়ালপুল তারের আবরণীতে ঘিরিবার আবেদন জানাইয়াছিল। দীর্ঘ উড়ালপুলের কতকাংশ— বিশেষত সেই অংশগুলি যাহা ঘুড়ি উড়াইবার জনবসতি ও বহুতল-সংলগ্ন— তারে ঢাকাও পড়িয়াছিল, তবু দুর্ঘটনা থামে নাই। বিস্তর ফাঁকা অংশে কোথা হইতে ঘুড়ির সুতা উড়িয়া আসিবে কেহ জানে না, তাই উড়ালপুলে নজরদারি, বিশেষত বিশ্বকর্মা পূজা-সহ উৎসবের মরসুমে অতিরিক্ত নজরদারি, চিনা মাঞ্জার সুতা ‘ধরিতে’ উড়ালপুলে অধিক সংখ্যায় পুলিশকর্মী বহাল— সমস্ত পদক্ষেপের শেষে অবিলম্বে গোটা উড়ালপুল লোহার তারের প্রাচীরে ঘিরিবার আবেদন পুরসভাকে জানাইয়াছে লালবাজার।
আর এইখানেই বিস্ময় জাগিতেছে। ধুলা ঢাকিতে চামড়ায় পৃথিবী ঘিরিবার ন্যায়, চিনা মাঞ্জা হইতে বাঁচিতে উড়ালপুল লোহার তারে ঘিরিবার প্রস্তাব কি হাস্যকর নহে? সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ মা উড়ালপুল মহানগরের সম্পদ, দর্শনীয় পুর-কীর্তিও, পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় হইতে বাইপাসে পরমা আইল্যান্ড পর্যন্ত সমগ্র উড়ালপুল লোহার তারের দেওয়ালে ঘিরিলে ভাল দেখাইবে? দর্শনীয়তা এখানে জরুরি নহে সত্য, কিন্তু তাহা কি প্রয়োজনীয়ও? বরং নাইলনের সূক্ষ্ম সুতায় ধাতু ও কাচের গুঁড়া মাখাইয়া তৈরি হয় যে ভয়ঙ্কর চিনা মাঞ্জা, যাহা গলায় চাপিয়া বসিয়া রক্তপাতে মৃত্যু অবধি হইতেছে, তাহার ক্রয়বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা, পুলিশি ধরপাকড় ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করাই কি কাজের কাজ নহে? মনে রাখিতে হইবে, চিনা মাঞ্জা তৈরি ও বিক্রিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে সেই ২০১৬ সালেই, সুপ্রিম কোর্টেও সেই রায় বহাল ছিল। তাহার পরেও যে এই সুতার বেচাকেনা থামে নাই, উড়ালপুলের দুর্ঘটনাই প্রমাণ। পুলিশ তথা প্রশাসনের ব্যর্থতারও কি প্রমাণ নহে? চিনা মাঞ্জা লইয়া প্রচার যথেষ্ট নহে, দরকার কঠোর নীতি, দণ্ডবিধান, এমনকি প্রয়োজনে ঘুড়ি উড়াইবার উপরেও নিষেধাজ্ঞা— কারণ নাগরিকের প্রাণ সবার আগে। পুলিশকর্মীরা উড়ালপুলে সুতা না ধরিয়া নীচে চিনা মাঞ্জার আস্তানাগুলি চিহ্নিত করিলে বরং ভাল। কবিতায় রাজা ‘আগের কাজ আগে’ সারিতে বলিয়াছিলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কি সেই কাজটি ধরাইয়া দিতে পারেন না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy