পাঁচশত টাকা। প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগ করিয়া ধরা পড়িলে এই পরিমাণ জরিমানা গনিতে হইবে, জানাইয়াছে কলিকাতা পুরসভা। এই বিষয়ে শহরের ফুটপাতবাসী এবং বস্তি এলাকার মানুষদের সতর্কীকরণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হইয়া গিয়াছে। পুরসভার একাধিক দল শীঘ্রই শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারাভিযানেও নামিবে বলিয়া সংবাদে প্রকাশ। অতি বিলম্বিত প্রয়াস, কোনও সংশয় নাই। একটি রাজধানী শহরের পথেঘাটে নাগরিকরা যে এমন অবলীলায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে অভ্যস্ত, তাহার একটি বড় কারণ ইহাও যে, শহরের প্রশাসন এই ব্যাধিটি লইয়া এত দিন কার্যত উদাসীন ছিল। হুঁশ ফিরিতেছে, তাহা আশার কথা।
অবশ্য এমন নহে যে, সমস্যাটি আগাগোড়া শুধু কলিকাতারই। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ-সহ দেশের অনেক শহর তো বটেই, জার্মানির হামবুর্গ বা আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো শহরের প্রশাসনও এক সময় মানুষের এমন অভদ্র আচরণে অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছিল। হামবুর্গ শহরের প্রশাসন নির্দিষ্ট এলাকার দেওয়ালগুলিতে বিশেষ রং লাগাইয়া এই অপকর্ম থামাইতে সক্ষম হয়। ভারতের অন্যান্য শহরেও আয়না লাগাইয়া, সিটি বাজাইয়া, মালা পরাইয়া প্রকাশ্যে মূত্রত্যাগের সমস্যা কিছুটা হইলেও বাগে আনা গিয়াছে। কিন্তু কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই। কেন পাল্টায় নাই এই শহরের চিত্র? তাহার একটি বড় কারণ সচেতনতার অভাব। প্রকাশ্য মূত্রত্যাগ যে শুধু দৃশ্যদূষণই করে না, ইহার ফলে বহুবিধ রোগ-ব্যাধি ছড়াইতে পারে— এই পরিচ্ছন্নতার পাঠটি শহরের মানুষ শিখিয়া উঠিতে পারেন নাই। এমন নহে যে, শহরের বিভিন্ন স্থানে গণ-শৌচালয় নাই। তাহা সত্ত্বেও অনেক সময় শৌচালয়ের বাহিরেই ‘মূত্র বিসর্জন’-এর বহু উদাহরণ মিলিয়া থাকে। এই কু-অভ্যাস পাল্টাইতে সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি অবশ্যই প্রয়োজন। মানুষের মধ্যে লজ্জাবোধ জাগাইয়া তুলিতে হইবে। কিন্তু, তাহার পাশাপাশি অর্থদণ্ডও জরুরি। অভিজ্ঞতা বলে যে, জরিমানার সহিত শুভবুদ্ধির সম্পর্ক অতি ঘনিষ্ঠ।
প্রশাসনেরও দোষ রহিয়াছে যথেষ্ট। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যে খোলা গণ-শৌচালয়গুলি ছিল, সেইগুলি এখন পুরসভা সংস্কার করিতে উদ্যোগী হইয়াছে। পরিবেশ বাঁচাইতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচালয় গড়িয়া তোলা হইবে। কিন্তু এত বিলম্বে তাহাদের ঘুম ভাঙিল কেন? সমস্যা রহিয়াছে গণ-শৌচালয়ের সংখ্যা লইয়াও। শহরের মধ্যে তবুও গণ-শৌচালয় চোখে পড়ে, শহর ছাড়াইলে তাহার দেখা মেলা ভার। শহরের ভিতরেও যে গণ-শৌচালয়গুলি রহিয়াছে, তাহাদের অনেকের অবস্থা শোচনীয়। পরিচ্ছন্নতার অভাব তীব্র। সংক্রমণের কারণে মানুষ সেইগুলি ব্যবহার করিতে চাহেন না। সেইগুলি পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে প্রশাসনকে নজর দিতে হইবে। শহরের জনসংখ্যার সঙ্গে তাল রাখিয়া গণ-শৌচালয়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এবং সেইগুলিকে এমন ভাবে গড়িয়া তুলিতে হইবে, যাহাতে মানুষ সেইগুলি সহজেই খুঁজিয়া পান। ওই সব শৌচালয়ের আশপাশে লাগানো যাইতে পারে সচেতনতামূলক পোস্টারও। শহর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের নয়, জনসাধারণেরও— কথাটি মানুষকে বোঝাইতে হইবে। প্রশাসনিক তৎপরতা ও মানুষের সচেতনতাই এই শহরকে ‘স্বচ্ছ’ বানাইতে সক্ষম হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy