হাসপাতাল যদি আন্দোলনের পটভূমি হইয়া উঠে, রোগীরা যাইবেন কোথায়? কতকটা এই সুরেই সম্প্রতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আন্দোলনকারী পড়ুয়া-চিকিৎসকদের সতর্ক করিল কলিকাতা হাই কোর্ট। জানাইল, আন্দোলনের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের কাজ ব্যাহত হইলে তাহার দায় আন্দোলনকারীদেরই লইতে হইবে। প্রসঙ্গত, রাজ্যের অন্যতম সরকারি হাসপাতালটিতে নানাবিধ দাবি লইয়া অনশন-আন্দোলন শুরু করিয়াছিলেন পড়ুয়া-চিকিৎসকদের একাংশ। মেন্টর কমিটি, স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয় নাই। অনশন উঠিয়াছে, কিন্তু আন্দোলন অব্যাহত। দীর্ঘ আন্দোলনে ব্যাহত হইতেছে হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজগুলি। ইহার পরিপ্রেক্ষিতেই হাই কোর্টের এ-হেন সতর্কবার্তা সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আদালত জানাইয়াছে, রোগীদের যাহাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই দিকে নজর রাখিতে হইবে। অন্যথায় কড়া ব্যবস্থা করা হইবে।
ডাক্তারি ছাত্রদের দাবিদাওয়া অবশ্যই থাকিতে পারে। আন্দোলন করিবার অধিকারও। কিন্তু তাহা যেন কোনও ভাবেই তাহা রোগীর স্বার্থ বিঘ্নিত না করে। যে পেশাটিকে তাঁহারা বাছিয়া লইয়াছেন, তাহার সঙ্গে দায়িত্ববোধের প্রশ্নটি অঙ্গাঙ্গি। মানুষের জীবন বাঁচাইবার দায়িত্ব। এই দায়িত্ব এমন তুচ্ছ নহে যে, আন্দোলনের অজুহাতে তাহাকে অবহেলা করা চলে। অথচ, প্রায়শই সরকারি হাসপাতালগুলিতে দেখা যায় বিভিন্ন কারণে ডাক্তারি পড়ুয়া, তরুণ ডাক্তারদের আন্দোলন-বিক্ষোভে পরিষেবার কাজটি ব্যাহত হইতেছে। মনে রাখা প্রয়োজন, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলি রোগীর ভারে ধুঁকিতেছে। এমতাবস্থায় একটি প্রথম সারির হাসপাতালে যদি এক দিনও পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটে, তাহা হইলে বহু রোগীর প্রাণসংশয় হইতে পারে। সেইখানে তিন মাস ধরিয়া হাসপাতাল চত্বরে আন্দোলন চলিলে পরিণতি কী হইতে পারে, অনুমান করা কি কষ্টসাধ্য ছিল? রোগীকে সুস্থ করিতে যাঁহারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাঁহারা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করিবেন কেন?
কেবল একটি বিচ্ছিন্ন দৃষ্টান্ত নহে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় ক্ষেত্রগুলিতে ‘আন্দোলন’-এর পদ্ধতি লইয়া ভাবনাচিন্তা জরুরি। কেন আন্দোলন করিতে গেলে ধর্মঘট, অনশন, বিক্ষোভ প্রদর্শনের পথই লইতে হইবে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র বাহির করা যাইবে না, সেই কথাটি গণতান্ত্রিক দেশে বিবেচ্য হওয়া উচিত বইকি। বিপরীত দিক দিয়া, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বটিও গুরুতর— নিশ্চিত করিতে হইবে যাহাতে আন্দোলন-বিক্ষোভ চরমপন্থার পথ না ধরে। তত দূর যাইবার আগেই আন্দোলনকারীদের বক্তব্য যথাযোগ্য গুরুত্বের সঙ্গে শোনা প্রয়োজন। আন্দোলনরতদের বাড়িতে পুলিশ পাঠাইয়া, বাবা-মায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করিয়া যে কোনও সমাধানসূত্র বাহির হইতে পারে না, স্মরণে রাখিতে হইবে। ভিন্ন মতকে সম্মান করা এবং আলোচনা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়িয়া তোলাই কোনও প্রতিষ্ঠানের মূলমন্ত্র হওয়ার কথা। দুর্ভাগ্য, সেই পরিবেশ ক্রমেই অবলুপ্ত হইতেছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বারংবার রণক্ষেত্র হইয়া উঠিলে সমাজের পক্ষে তাহা অশনিসঙ্কেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy