সঙ্কটাপন্ন রোগীকে লইয়া পরিজনদের বিভিন্ন হাসপাতালের দ্বারে ঘুরিবার অভিজ্ঞতা এই বঙ্গে নূতন নহে। সম্প্রতি নদিয়ার এক হৃদ্রোগীর ক্ষেত্রেও অনুরূপ চিত্র দেখা গেল। জেলা এবং কলিকাতার সাতটি হাসপাতালে ঘুরিবার পরও তাঁহাকে ভর্তি করা যায় নাই। লক্ষণীয়, যে হাসপাতালগুলি তাঁহাকে ফিরাইয়াছে, তাহাদের মধ্যে কলিকাতার প্রথম সারির তিনটি মেডিক্যাল কলেজ এবং কল্যাণীর একটি সরকারি হাসপাতালের নামও আছে। কেহ পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলিয়াছে, কেহ নিয়মের প্রসঙ্গ তুলিয়াছে, কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠিয়াছে। পরিণাম, চিকিৎসা সময়ে শুরু করা যায় নাই। রোগী বাঁচেন নাই।
এই মৃত্যুর দায় কাহার? রোগীর রোগ কত জটিল ছিল, চিকিৎসা শুরু হইলেও তিনি বাঁচিতেন কি না, তাহা পরের প্রশ্ন। সর্বাগ্রে ভাবিতে হইবে, হাসপাতালগুলির এ-হেন ‘রেফার’ রোগের চিকিৎসা হইবে কোন উপায়ে? সাতটি হাসপাতালের কোনওটিতেই কি এক জন হৃদ্রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যাইত না? শুধুমাত্র এই ঘটনাটিই নহে। বহু ক্ষেত্রে জটিল রোগাক্রান্তের প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও না করিয়া পত্রপাঠ অন্যত্র রেফার করিয়া দেওয়া হয়। এই ‘রেফারাল সিস্টেম’ও ক্ষেত্রবিশেষে কাজ করে না। ফলে, বহু অর্থব্যয় এবং সময় নষ্টের শেষে রোগীর প্রাণ বাঁচানো দায় হইয়া পড়ে। হাসপাতালের রেফার-রোগের দাওয়াই হিসাবে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশও যে কাজে আসে নাই, সাম্প্রতিক ঘটনা তাহার প্রমাণ। জেলায় জেলায় সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়িয়া তবে লাভ কী হইল? মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ নাই, পরিকাঠামো নাই, শয্যা নাই— কোনও অজুহাত যথেষ্ট নহে। কেন দগ্ধ শিশুকে লইয়া অসহায় বাবা-মা ছুটিয়া বেড়াইবেন, হাসপাতালে ঠাঁই না পাইয়া প্রসূতি পথেই প্রসব করিবেন? এমনও উদাহরণ আছে, যেখানে পরিজনদের দিয়া ‘স্বেচ্ছায় লইয়া যাইবার’ বন্ড সই করাইয়া অন্য হাসপাতালে রোগীকে পাঠানো হইয়াছে। ইহা অপরাধ নহে? চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিটি ঘণ্টার মূল্য কি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা জানেন না? আরও উদ্বেগের বিষয় হইল, খাস কলিকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিও রেফার-রোগের শিকার। গরিব মানুষ তবে যাইবেন কোথায়?
অতিমারিতে স্বাস্থ্যের বিষয়টি যখন সর্বালোচিত, তখন আশা করা গিয়াছিল রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থাটির পুনর্গঠন হইবে। সুসংগঠিত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নির্মিত হইলে এবং জেলা হইতে শহর— বিভিন্ন স্তরের মধ্যে একটি স্বচ্ছ সমন্বয় ব্যবস্থা গড়িয়া উঠিলে যে কোনও জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় সামাল দেওয়া যায়। অথচ, এই রাজ্যে তাহা হয় নাই। বরং সমগ্র স্বাস্থ্যব্যবস্থাটি অতিমাত্রায় কোভিড-কেন্দ্রিক হইয়া পড়ায় অন্য রোগীরা হয়রানির শিকার হইতেছেন। বহু গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল কোভিড-হাসপাতালে পরিণত হইবার ফলে সেই অঞ্চলের রোগীরা জরুরি অবস্থায় কোথায় যাইবেন, তাহা যেমন অনেক জায়গায় নির্দিষ্ট হয় নাই, তেমনই অবশিষ্ট হাসপাতালগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়িতেছে। ফলে, শয্যা, পরিষেবা সঙ্কট এবং পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা স্পষ্ট হইতেছে। এবং ইহার সঙ্গেই যোগ হইয়াছে রোগী প্রত্যাখ্যানের বহু পুরাতন ব্যাধি। অতিমারির আঘাতেও যে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢালিয়া সাজাইবার গুরুত্বটি বুঝা গেল না, ইহা নিতান্তই দুর্ভাগ্যের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy