গয়ংগচ্ছ
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দফতর কি ক্রমশ গয়ংগচ্ছ ভাবটির প্রতীক হইয়া উঠিতেছে? আস্ত একটি শিক্ষাবর্ষ শেষ হইতে চলিল, কিন্তু পঞ্চম হইতে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের মূল্যায়ন কী ভাবে হইবে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কবে হইতে পারে— দিশাটুকুও নাই। দিল্লির বোর্ডদ্বয় তাহাদের পরীক্ষাব্যবস্থা দুই সিমেস্টারে— নভেম্বর ও এপ্রিল— ভাগ করিয়া দিবার কথা জানাইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের বোর্ড সিদ্ধান্ত গ্রহণ দূরস্থান, আশ্বাস দিবার ন্যায় ঘোষণাও করিতে পারে নাই। স্বভাবতই নানা দুশ্চিন্তাজর্জর জিজ্ঞাসা ভাসিয়া বেড়াইতেছে শিক্ষামহলে। প্রশ্ন উঠিতেছে, রাজ্যে কি এই মডেলটি অনুসৃত হইবার সম্ভাবনা আছে? থাকিলে, তাহা কি বাস্তবানুগ হইবে? নভেম্বর আসিতে তো আর বিলম্ব নাই, প্রস্তুতির সময় কি মিলিবে? আবার, অন্য পন্থায় হাঁটিলে অবশিষ্ট দুই বোর্ডের সহিত সাযুজ্যবিধানের বিষয়টি বড় হইয়া দেখা দিবে না তো? উত্তরের ইঙ্গিত অদ্যাবধি নাই। রাজ্যের শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষকদের এমন অন্ধকারে রাখিয়া দেওয়া সমীচীন নহে। পরীক্ষার দিনক্ষণ ও পদ্ধতি বিষয়ে অত্যধিক কালবিলম্ব হইয়াছে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তাহা ঘোষণাই এই মুহূর্তের কর্তব্য।
স্মরণে থাকিবে, গত শিক্ষাবর্ষটিতে দিল্লির বোর্ডের তুলনায় রাজ্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা নম্বরের নিরিখে অনেকখানি পিছাইয়া পড়িবার ফলে প্রভূত ক্ষোভ-বিক্ষোভ ধ্বনিত হইয়াছিল। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের জন্য সংরক্ষণের কথাও হইয়াছিল। অতএব, গত বারের ভ্রান্তি হইতে শিক্ষা লইয়া সামঞ্জস্য বিধান ছিল এই বারের সর্বাধিক জরুরি দায়িত্ব। কিন্তু তাহার পরিবর্তে এমন এক অনিশ্চয়তার মেঘ কেন ঘনাইল? উত্তরটি নিহিত শিক্ষাকর্তাদের মানসিকতায়। স্কুলশিক্ষা, বিশেষত উক্ত দুই পরীক্ষা যে শুধু পশ্চিমবঙ্গনির্দিষ্ট বিষয় নহে, সকল প্রকার বোর্ড মিলিয়া শিক্ষাব্যবস্থা যে একটি সমগ্র ও একক, এই সারসত্যটি সম্ভবত তাঁহারা এখনও বুঝিতে পারেন নাই। যাহা কেবল আপনাপন ক্ষেত্রের নিরিখে বিচার্য নহে, যাহার হিসাবনিকাশ সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় হইয়া থাকে, সেইখানে এই রূপ অদূরদর্শিতার ফলটি অবশ্যম্ভাবী। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাহার শিকার হইতেছে রাজ্যের অগণিত পড়ুয়া।
চিন্তার দৈন্যের সঙ্কটটি বস্তুত গভীরতর। বাজারহাট বা সিনেমা হলের ন্যায় স্কুল-কলেজের নিয়ন্ত্রণও রাজ্য প্রশাসনের স্কন্ধে ন্যস্ত, কোভিড পরিস্থিতির নিরিখে তাহাতে সিদ্ধান্ত হওয়াও
বিধেয়, কিন্তু সকল বিষয়কে এক তুলাযন্ত্রে মাপিতে বসিলে ঘোর বিপদ। শিক্ষা বিষয়টি পরিবহণের ন্যায় শুধু একটি ব্যবস্থাপনা নহে, বস্তুত উহা শিক্ষার খোলসমাত্র। তাহা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করিবার দায়, সংক্রমণের ওঠানামার সহিত উহাকে নিলম্বিত করিয়া রাখা চলে না, তজ্জন্য সুদূরে দৃষ্টি রাখিয়া বহু পূর্ব হইতে পরিকল্পনা সারিতে হয়। সরকার মনে করিতেই পারে, এক্ষণে স্কুল-কলেজ খুলিয়া দেওয়া নিরাপদ নহে, কিন্তু পরীক্ষাব্যবস্থা লইয়া এমন সিদ্ধান্তহীনতা চলিতে পারে না। নূতনের সহিত খাপ খাওয়াইয়া দ্রুত বিকল্প গড়িয়া তোলা অবশ্যকর্তব্য। গতস্য শোচনা নাস্তি— সব দিক বিবেচনা করিয়া যথাশীঘ্র পরীক্ষা বিষয়ে নীতি স্পষ্ট হউক। ইহা কোনও অনুরোধ হইতে পারে না, ইহা একটি দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy