উলাপুর গ্রামের ‘পোস্ট্মাস্টার’কে কলিকাতা ছাড়িয়া সামান্য গ্রামটির একমাত্র ডাকঘরে চাকুরি লইতে হইয়াছিল। অথচ, তাঁহার কাজ বিশেষ ছিল না। তিনি এই কালে ডাকঘরের চাকুরি লইলে অবশ্য সেই অখণ্ড অবসর জুটিত না। শুধুমাত্র চিঠিপত্র সংক্রান্ত সাবেক কাজের সীমানা ছাড়াইয়া বহু কালই ডাকঘরগুলি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের ন্যায় বিভিন্ন কাজে জড়াইয়াছে। ব্যাঙ্কের কিছু কাজও ডাকঘরের মাধ্যমে করা সম্ভব হইতেছে। এবং ডাক বিভাগের ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কল-এর প্রায় আড়াই হাজার ডাকঘরে চালু হইয়াছে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র বা সিএসসি। এই ডাকঘরগুলিতে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেন করা যায়, বিভিন্ন ডিজিটাল পরিষেবাও দেওয়া হইয়া থাকে। ইন্টারনেট সংযোগ মিলিলে এই বৎসরের মধ্যেই রাজ্যের অবশিষ্ট ডাকঘরে এই রূপ কেন্দ্র চালু করিবার পরিকল্পনা করিয়াছে ডাক বিভাগ।
এহেন উদ্যোগ স্বাগত। পশ্চিমবঙ্গে ডাকঘরগুলির সম্ভাবনা বিপুল। কিন্তু পরিকাঠামোগত অসুবিধা এবং এক শ্রেণির কর্মীর গয়ংগচ্ছ মনোভাবের কারণে প্রায়শই ডাকঘরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠিয়া থাকে। মনে রাখা প্রয়োজন, দ্রুত গতির জীবনে চিঠির গুরুত্ব কমিয়াছে। লগ্নির ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্ক-পোস্ট অফিসের প্রথাগত ক্ষেত্রগুলির বাহিরে নজর দিতেছেন গ্রাহক। সুতরাং, নির্দিষ্ট কিছু কাজের গণ্ডির মধ্যে ডাকঘরগুলিকে আবদ্ধ রাখিলে অচিরেই তাহা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করিয়া লইবে। বর্তমানে মোবাইলের রিচার্জ, বিদ্যুতের বিল, জীবন বিমার প্রিমিয়াম জমা, পাসপোর্ট, প্যানকার্ড-সহ নানাবিধ পরিষেবা প্রদানের কেন্দ্র হইয়াছে ডাকঘরগুলি। অন্যত্রও যদি দ্রুত সিএসসি চালু করা যায়, তাহা হইলে সাধারণ মানুষ যে সবিশেষ উপকৃত হইবেন, সন্দেহ নাই। কারণ, দেশের এমন প্রত্যন্ত স্থানেও ডাকঘর আছে, যেখানে ব্যাঙ্কের কোনও অস্তিত্ব নাই। সেখানে সিএসসি চালু হইলে এক সঙ্গে অনেক মানুষকে আর্থিক এবং সরকারি বিভিন্ন পরিষেবার আওতায় আনা সম্ভব হইবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কল-এর (সিকিম এবং আন্দামানও যাহার অন্তর্ভুক্ত) গ্রামীণ এবং শহর এলাকায় সাড়ে ছয় হাজার ডাকঘরে সিএসসি চালু হয় নাই। এই বিপুল সংখ্যাকে যথাযথ কাজে লাগানো প্রয়োজন বইকি।
কিন্তু এই কাজগুলি দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা ভিন্ন সম্ভবপর নহে। সুতরাং, সর্বাগ্রে সরকারকে ইন্টারনেট পরিকাঠামো গড়িয়া তুলিবার দিকে দৃষ্টি দিতে হইবে। জেলার অনেক জায়গায় ডাকঘরে এখনও রাষ্ট্রায়ত্ত পরিষেবা সংস্থার টুজি লিঙ্কে কাজকর্ম চলিয়া থাকে। ফলে, লিঙ্ক পাইতে সমস্যা হয়, দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সমস্যা অত্যধিক। সেখানে এখনও প্রায়শই পুরাতন পদ্ধতিতে ডাকঘরের কাজকর্ম চলে। এই সমস্যার দ্রুত নিরসন প্রয়োজন। অন্য দিকে, ডাকঘরগুলি সাধারণ মানুষের জন্য ওয়াই-ফাই’সহ ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করিতে পারে কি না, তাহাও ভাবিতে হইবে। যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা সহজলভ্য নহে, সেখানে জরুরি কাজে যাহাতে স্থানীয়রা ডাকঘরের ইন্টারনেট ব্যবহার করিতে পারেন, তাহার ব্যবস্থা করিতে হইবে। অর্থাৎ, ডাকঘর যাহাতে আরও সহজ ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাইতে পারে, তাহা দেখা প্রয়োজন। সমস্ত ডাকঘরে সিএসসি চালু করিবার উদ্যোগ ইহারই সূত্রপাত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy